আর দিন দুয়েক পরই বিদায় নিবে ২০১৬ সাল। ২০১৬ এর এই শেষ লগ্নে এসে আমরা অনেকেই হয়তো ২০১৭ এর পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। লেখাপড়া, ব্যবসা, চাকরি, এমনকি বেড়ানোর পরিকল্পনাও হয়তো হয়ে গেছে। আরেকবার ভেবে দেখুন তো, কিছু বাদ পড়ে গেলো কিনা? আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে আগামী বছরে কী ভাবছেন? কোন পরিকল্পনা আছে কি? আসুন, একবার দেখে নেই কেমন হতে পারে আমাদের ২০১৭-এর স্বাস্থ্যভাবনা।

new year health tips from dr masumul haque

অতিরিক্ত ওজন আর নয়: স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন আপনার শরীরে জন্ম দেয় নানা রোগ-ব্যাধি। শুধু তাই না, অতিরিক্ত ওজনের কারণে আমরা অনেকেই মানসিকভাবে কিছুটা হীনমন্যতায়ও ভুগি। তাই আগামী বছরের শুরু থেকেই আপনি নিয়ে নিতে পারেন বাড়তি ওজন কমানোর পরিকল্পনা। তবে খেয়াল রাখবেন, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আপনাকে যথাযথ নিয়ম মেনে চলতে হবে। খুব রাতারাতি ফলাফল আশা না করাই ভালো। আর এই জন্য আপনি একজন পুষ্টিবিদ বা ফিটনেস ট্রেনারের পরামর্শ নিতে পারেন।

ধূমপানকে ‘না’ বলুন: আপনি যদি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন তবে আগামী বছরের জন্য অপেক্ষা নয়, আজই এই বদভ্যাস ত্যাগ করুন। হৃদরোগ থেকে শুরু করে প্রাণঘাতী ক্যান্সারসহ অনেক রোগের কারণ এই ধূমপান। শুধু তাই নয়,আপনার ধূমপানের কারণে আপনার পরিবারের অধূমপায়ী সদস্যরাও কিন্তু এই প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ধূমপানের বিষাক্ত জগত থেকে ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফেলুন নতুন বছরের শুরুতেই। মনে রাখবেন, ধূমপান ত্যাগে আপনার মনোবলই যথেষ্ট।

নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম: আমাদের শহুরে কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেরই শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ হয়ে উঠে না। ফলাফল অকালে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া। তাই তুলে রাখা জুতো জোড়া ঝেড়ে মুছে নিয়ে আবার তৈরী হোন। প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০ মিনিট খোলা বাতাসে হাঁটার অভ্যাস করুন। লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। গন্তব্য যদি কাছাকাছি হয় তবে হেঁটে যাবার চেষ্টা করুন। এর ফলে শারীরিকভাবে তো অবশ্যই, মানসিকভাবেও আপনি থাকবেন সতেজ।

খাবার প্লেটটি হোক সবুজ: ফাস্ট ফুডের এই যুগে জিহবার রাশ টেনে ধরা অনেকের জন্যই বেশ কঠিন মনে হতে পারে। তবে শারীরিক সুস্থতার জন্য আমাদের সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা খুব জরুরী। যেকোন কোন ভাজাপোড়া, প্যাকেট জাতীয় খাবার, কার্বনেটেড ড্রিংক্স এর পরিমাণ কমিয়ে, আপনার দৈনন্দিন খাবার তালিকাতে শাক সবজি, ফলমূল, আঁশ জাতীয় খাবার যোগ করুন। প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পানের অভ্যাস করুন। তবে কিছু রোগের জন্য কিছু খাবারে নিষেধ থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলুন।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস: “Early to bed and early to rise, makes a man healthy, wealthy and wise." ছেলেবেলায় শোনা এই প্রবাদটি শুধু যেনো প্রবাদই হয়ে না থাকে। নিজের জীবনে ব্যবহার করে দেখুন। একজন পূর্নবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। বিছানায় শুয়ে টেলিভিশন দেখা বা নেট ব্রাউজ করার অভ্যাস থাকলে বাদ দিন। মনে রাখবেন পর্যাপ্ত ঘুম আপনার আগামীকালের সফলতার জন্য খুব জরূরী। দেরি না করে অ্যালার্মটা দিয়েই রাখুন আগামীকালের জন্য।

মানসিক চাপকে জয় করা শিখুন: শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও সমান জরুরী, এটা আমরা সেভাবে ভাবতে চাই না। অথচ এই মানসিক চাপ এক নীরব ঘাতক। আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে মানসিক চাপকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ না থাকলেও এই চাপকে নানাভাবেই জয় করা যায়। চিন্তা ভাবনায় গঠনমূলক পরিবর্তন আনুন, নিজের সাথে সময় কাটান, সময় দিন পরিবারকে। মেডিটেশন চর্চা বা ইয়োগা করতে পারেন। ধর্মীয় আচার মেনে চলুন। বিভিন্ন সেবামূলক কাজে সময় কাটান। এগুলো আপনাকে মানসিকভাবে সতেজ রাখবে। তাই আগামী বছর থেকে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি জোর দিন মানসিক সুস্থতার দিকেও।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাকে হ্যা বলুন: বলুন তো, সুস্থ্য মানুষের কি স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন? হ্যা, প্রয়োজন। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে আমাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। একে স্ক্রিনিং বলা হয়ে থাকে। উন্নত বিশ্বে এই স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসাবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও এখন অনেক হাসপাতালেই এই সেবা চালু হয়েছে। তাই আপনি যদি ৩৫ বছর বা তদুর্ধ্ব হয়ে থাকেন, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন।

এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, একবারের প্রচেষ্টায় হয়ত আপনি সব পরিকল্পনায় সফল নাও হতে পারেন। তবে হাল ছাড়বেন না, নিয়মিত প্রচেষ্টা থাকলে আপনি অবশ্যই সফল হতে পারবেন। তাহলে আর দেরি কেনো? উপরের এই পদক্ষেপগুলো যুক্ত করে নিন আপনার আগামী বছরের দৈনন্দিন কার্যতালিকায়, আর ২০১৭ হয়ে উঠুক আপনার জন্য সুস্বাস্থ্য আর সমৃদ্ধিতে ভরা একটি বছর। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

ডাঃ মোহাম্মদ মাসুমুল হক
আবাসিক চিকিৎসক
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি হাসপাতাল ও ওয়েল ফেয়ার হোম