এশিয়া মহাদেশের অন্যতম হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠী। ভারতীয় এই চিকিৎসকের খ্যাতি বিশ্বব্যাপী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা করতে ঢাকায় এসেছিলেন বলে এদেশেও তার একটা বাড়তি খ্যাতি রয়েছে। সম্প্রতি হৃদরোগ প্রতিরোধে এই ডাক্তারের কয়েকটি পরামর্শ ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-তে প্রচার হয়।

dr devi shetty india 2019 2

মূলত WIPRO আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ডা. দেবী শেঠী। সেখানেই হৃদরোগ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হন তিনি। প্রশ্নোত্তর পর্বে হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর কিছু পরামর্শ দেন দেবী শেঠী। হৃদরোগ প্রতিরোধে ডা. দেবী শেঠীর কার্যকর কয়েকটি পরামর্শ টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-.

১. একজন মানুষ তার নিজের হৃদযন্ত্রের যত্ন নেবেন কীভাবে?

দেবী শেঠী: শর্করা জাতীয় খাবার কম, প্রোটিন বেশি এবং যতটা সম্ভব কম তেল দিয়ে তৈরি খাবার খেতে হবে। প্রতিদিন জোরে আধঘণ্টা করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন হাঁটতে হবে। লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে। নিকট দূরত্ব চলাচলের জন্য হাঁটতে হবে। দীর্ঘসময় স্থবির বসে থাকা যাবে না। ধূমপান পরিহার করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারো উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

২. চর্বি কি পেশীতে রুপান্তরিত হয়?

দেবী শেঠী: এমন ধারণা সঠিক নয়। চর্বি চর্বিই। এটা দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। চর্বিকে পেশিতে রূপ দেয়ার ধারণাটি মিথ্যা।

৩. ইদানিং সুস্থ-সবল মানুষও কোনো লক্ষণ ছাড়াই আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু কেন?

দেবী শেঠী: এমন ঘটনাকে ‘সাইলেন্ট অ্যাটাক’ বলা হয়। সেজন্য ত্রিশ বছরের বেশি সবাইকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা  করার পরামর্শ দেই। যাদের বয়স ত্রিশের বেশি তাদের এটা মাথায় রাখা উচিত।

৪. হৃদরোগ ব্যাপারটা কি বংশানুক্রমিক? হাঁটা না জগিং- কোনটা বেশি ভালো?

দেবী শেঠী: হৃদরোগ ব্যাপারটা আসলেই বংশানুক্রমিক। এদিকে হাঁটা আর জগিংয়ের মধ্যে সব দিক দিয়ে হাঁটাই ভালো। জগিং করলে আপনি অল্প সময়েই হাঁপিয়ে যাবেন। তবে পায়ের গোড়ালি ও হাঁটুর উপর বাজে প্রভাব পরতে পারে। তবে হাঁটা সবকিছু বিবেচনায় ভালো। হাঁটার কোন বাজে প্রভাব নেই।

৫. কোলেস্টেরল কি অল্প বয়স থেকেই জমা হয় নাকি পরিণত বয়সে বা ত্রিশের পর জমা শুরু হয়?

দেবী শেঠী: কোলেস্টেরল মূলত ছোটবেলা থেকেই নালীগাত্রে জমতে থাকে। কোলেস্টেরলের জন্য পরিণত বয়স লাগে না।

dr devi shetty india 2019

৬. ঔষুধের সাহায্য ছাড়াই কোলেস্টেরল কমানোর উপায় কি?

দেবী শেঠী: খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। সুষম খাবারে অভ্যস্ত হতে হবে। নিয়মিত হাঁটতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাদাম জাতীয় খাবার রাখুন। বাদাম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বেশ উপকারী। ফল ও শাকসবজি খান, তেল অ্যাভোয়েড করুন।

৭. স্বাস্থ্যপরীক্ষা বলতে আসলে কী কী পরীক্ষা করাতে হবে?

দেবী শেঠী: স্বাস্থ্যপরীক্ষা মূলত সাধারণ রক্ত পরীক্ষা। যার মাধ্যমে বোঝা যায় সুগার নিয়ন্ত্রণে কি না, ইসিজি। আর সামর্থ্য থাকলে ট্রেডমিল টেস্ট ও ইকোকার্ডিওগ্রাম করতে হবে। আর অবশ্যিই রক্তচাপ পরিমাপ করতে হবে।

৮. হার্ট অ্যাটাক হলে প্রাথমিকভাবে কী করতে হবে?

দেবী শেঠী: ব্যক্তিকে আগে বিছানা বা মেঝেতে শোয়ান। এরপর আক্রান্তের জিহবার নিচে অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষুধ দিন। এরপর খুব দ্রুত করোনারি ইউনিটে নিয়ে যান। মনে রাখতে হবে, হার্ট অ্যাটাকে বড় ক্ষতিটা একঘণ্টার মধ্যেই হয়। তাই সময়টা মহামূল্যবান। কোনোভাবেই সময় নষ্ট করা যাবে না।

৯. হার্ট অ্যাটাকের বুকের ব্যথা আর গ্যাসের বুক ব্যথার মধ্যে পার্থক্য কি?

দেবী শেঠী: অনেক ডাক্তারের জন্যও ব্যাপারটা নির্ণয় করা কঠিন। তবে অভিজ্ঞ ডাক্তাররা অধিকাংশ সয় সঠিক অনুমান করতে পারেন। তবে ইসিজি ছাড়া বোঝা মুশকিল। এটা নিজেরা না করে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

১০. তরুণরা হৃদরোগে আক্রান্তের কারণ কি?

দেবী শেঠী: ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের অনেককেই হৃদরোগ ও জটিল কিছু রোগে আক্রান্ত হতে দেখি। এসবের কারণ অলস জীবনযাত্রা, কায়িক পরিশ্রম কম, নেশা করা, ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড খাওয়া প্রধান। আমরা জাতিগতভাবে ইউরোপিয়ানদের চাইতে তিনগুণ বেশি হৃদরোগের ঝুঁকিতে। আপনি যখন তরুণ তখন অনিয়মিত জীবন-যাপন রাতজাগা এসব ব্যাপারে প্রকৃতিই আপনাকে প্রতিরক্ষা দেয়। কিন্তু বয়স বাড়লে সমস্যায় পরতে হবে। কাজেই সময় থাকতে নিজের দেহঘড়িকে সম্মান ও যত্ন নিতে হবে।

১১. উচ্চ রক্তচাপের ঔষুধের কি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?

দেবী শেঠী: প্রায় সব ঔষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তবে আধুনিক উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধী ঔষধগুলো বেশ নিরাপদ।

১২. ব্যস্ততার মধ্যে সেভাবে হাঁটা হয় না। সেক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে? চাপমুক্ত থাকার জন্য কি উপদেশ দেবেন?

দেবী শেঠী: একটানা বসে থাকা যাবে না। সুযোগ না থাকলে অফিসে এক ডেস্ক থেকে অন্য ডেস্কে যান। অফিসে ওঠানামার ক্ষেত্রে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। বাড়িতে টুকটাক কাজ করুন। আর চাপমুক্ত থাকতে জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোটা জরুরি। জীবনের সবকিছুই যে একদম নিখুঁত হবে, ব্যাপারটা এমন নাও হতে পারে। গল্প করুন আর প্রাণখুলে হাসুন।