আপনি পড়ছেন

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে পড়ুয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। যাদের পড়াশুনার খরচ থেকে শুরু করে থাকা-খাওয়া, হাত খরচ সবই চলে টিউশনি বা খণ্ডকালীন চাকরি করে। কিন্তু সম্প্রতি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় তাদের এই উপার্জনের পথ। ফলে দেশের এই সংকটকালে বিপাকে পড়েন এসব শিক্ষার্থী।

student deprationকরোনায় টিউশনি বন্ধ থাকায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা- প্রতীকী ছবি

জানা যায়, গত ১৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের পাবলিক-প্রাইভেট সকল বিশ্ববিদ্যালয়। এ সময় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেলেও যাদের টিউশনি আছে বা যারা খণ্ডকালীন চাকরি করেন, তারা থেকে যান। কিন্তু গত ২৬ মার্চ সরকার ভাইরাসের বিস্তার মোকাবেলায় সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহনও। এতে উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায় থেকে যাওয়া ওইসব শিক্ষার্থীর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসান সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থীই বাসা বা মেস ভাড়া করে থাকেন। সাধারণ ছুটিতে টিউশনি বা খণ্ডকালীন চাকরি করে আয় করা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় থাকা-খাওয়ার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

রাজধানীর জিগাতলার একটি মেসে থাকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল- এর এক শিক্ষার্থী জানান, ছোট বেলায় তার বাবা মারা যায়। এরপর থেকে শিশুদের পড়িয়ে নিজের লেখাপড়া চালিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ঢাকায় ভালোই টিউশনি করছিলেন। যা দিয়ে নিজের থাকা-খাওয়া ও পড়াশুনার খরচ চালানোর পাশাপাশি ছোট বোনের পড়াশুনাটাও চালাচ্ছিলেন তিনি। মাস শেষে মায়ের হাতেও কিছু টাকা দিতেন, যা দিয়ে পরিবারের খরচ ভালোই চলছিল।

কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে তার টিউশনি বন্ধ হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়েই গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি। এক মাস পর মেস মালিক ভাড়ার টাকার জন্য তাকে ফোন দেন। তখন নিজের সমস্যার কথা বুঝিয়ে শুনিয়ে ওই মাসের মেস ভাড়া বাকি রাখেন তিনি। কিন্তু এরপরের মাসে ফের মেস মালিক ফোন দেন এবং দুই মাসের ভাড়ার টাকা একসাথে দেওয়ার জন্য তাগাদা দেন। তাই বাধ্য হয়ে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে ভাড়ার টাকা পরিশোধ করেন তিনি।

ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে উপার্জন না থাকায় নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। সবকিছু স্বাভাবিক হলেও যেসব বাসায় পড়াতেন, সেসব বাসায় আবার যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। কারণ এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ধনীরা খুব বেশি সচেতনতা মেনে চলছেন। কীভাবে আবার সবকিছু ঠিক হবে এ নিয়ে খুব শঙ্কায় আছেন তিনি।

শুধু এই শিক্ষার্থীই নন, বিভিন্ন বিশ্বাবিদ্যালয়ে পড়া আরো অনেকে এই সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন তাহলে খুবই উপকৃত হবেন তারা। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যারা টিউশনি করে পড়াশুনার খরচ চালায় এমন শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করতে পারে এবং সাহায্য করতে পারে।