আপনি পড়ছেন

ক্যাম্পাসের প্রিয় ফয়সাল ভাইয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট বড় সকলে তাকে এ নামেই ডাকে। পরিচয়ের শুরুটা নাচের মাধ্যমে। এরপর মঞ্চ নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার পর সেই পরিচিতিটা নিজ ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে পুরো দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়েছে। সম্প্রতি নিজের নাচ ও অভিনয়ের প্রতিভা দিয়ে বিদেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক মঞ্চও মাত করে এসেছেন।

fysal diu1ভারতের হারিয়ানা প্রদেশের কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ইয়ুথ ফেস্টিবালে পারফর্মের পুরষ্কার হাতে ইলিয়াস নবী ফয়সাল

তার পুরো নাম ইলিয়াস নবী ফয়সাল। বাড়ি নোয়াখালী হলেও বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। বর্তমানে রাজধানীর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বষে পড়াশোনা করছেন। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার ক্লাব অলস্টাস ড্যাফোডিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন।

কথা হয় তার সঙ্গে। জানিয়েছেন নাচ ও মঞ্চ নাটক নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা। তার ইচ্ছে বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া লোক সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা। এগুলোকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। এছাড়া ভবিষ্যতে ক্যামেরার পেছনে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে তার। তাহলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো কঠিন একটি বিষয় নিয়ে পড়ছেন কেনো? জানতে চাইলে প্রতিভাবান এই মানুষটি জানান, ‘বাবা-মায়ের ইচ্ছেতে’।

গত ২৪-২৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের হারিয়ানা প্রদেশের কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ইয়ুথ ফেস্টিবালে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে এসেছেন। পারফর্ম করেছেন বাংলাদেশের ফোক ড্যান্স ও ক্লাসিক্যাল ড্যান্স নিয়ে। এই ফেস্টিবালে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মোট ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে। সেখানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির হয়ে তিনি পারফর্ম করেন।

তার পারফরম্যান্স দেখে মুগ্ধ হয়ে যান উপস্থিত দর্শকবৃন্দ। ভূয়সী প্রশংসা করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বাংলাদেশের (ইউজিসি) ডেপুটি ডিরেক্টর নাহিদ সুলতানা ও শাহনাজ ম্যাম। প্রথমবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে ইলিয়াস নবী ফয়সাল বলেন, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এখন পর্যন্ত জীবনের সেরা অর্জন। এর পেছনে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ। বিশেষ করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে।

fysal diuইলিয়াস নবী ফয়সাল

কথায় কথায় তিনি জানান, সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসাটা সেই ছোটবেলা থেকেই শুরু। চট্টগ্রামের শিকলবাহায় পিডিবি স্কুলে পড়াকালীন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে নাচ ক্যাটাগরিতে জাতীয় শিশু পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হন। কিন্তু জেলা পর্যায়ে যাওয়ার পর বাদ পড়ে যান। এরপর ২০১০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় এনটিভির জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো মার্কস অলরাউন্ডারের সেরা ২০তে জায়গা পান। পরের বছর থেকে স্কুলের প্রতিটি অনুষ্ঠানে তার নির্দেশনায় নাচের পারফরম্যান্স হতো।

এসএসসির পর ভর্তি হন চট্টগ্রামের ইসলামিয়া কলেজে। সেখানে পথশিশুদের নিয়ে ‘ইচ্ছেঘুরি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংঘঠন শুরু করেন। পাশাপাশি টুকটাক টিউশনিও শুরু করেন। তখন এক অসুস্থ ছাত্রের চিকিৎসার খরচ উঠানোর জন্য নিজ উদ্যোগে একটি ফিল্ম ফেস্টিবাল নামান। যা নিয়ে তখন পুরো কলেজসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়ে।

এইসএসসির পর ঢাকায় চলে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই ড্যাফোডিল প্রথমআলো বন্ধুসভার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ফের পথচলা শুরু করেন। এরপর একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ে কালচারাল ক্লাব, ডিবেটিং সোসাইটি ও অলস্টার্স ক্লাবে যুক্ত হন। শেষ পর্যন্ত থিয়েটার ক্লাব অলস্টার্সের সঙ্গে থেকে যান। এই ক্লাবের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন।

তার হাত ধরেই প্রথমবার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পারফর্ম করে অলস্টার্স। ২০১৭ সালের শেষদিকে সিলেটের হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৮ এর মার্চে চুয়েট, জুনে বুয়েট, আগষ্টে কুয়েট, ২০১৯ এর শুরুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অনুষ্ঠিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় নাট্যোৎসব অংশগ্রহণ করে ক্লাবটি। এরপর ২০১৯ সালের অক্টোবরে এমআইএসটি আয়োজিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় নাট্যোৎসবে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। সেই ধারাবাহিকতায় এর পরের মাসে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিউপি) আয়োজিত নাট্যোৎসবে রানার্সআপ হয় অলস্টার্স ড্যাফোডিল।

আন্তর্জাতিক টেড প্লাটফর্ম ‘টেডেক্স ড্যাফোডিলের’ মঞ্চে পরিবেশিত হয় ইলিয়াস নবী ফয়সালের রচনা ও নির্দেশনায় নাটক ‘বনমায়া’। সেই পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্মানেন্ট ক্যাম্পাসের একটি মুক্তমঞ্চের নাম ‘বনমায়া’ করে দেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সবুর খান।

নাচ ও অভিনয়ের পাশাপাশি মেধাবী এই শিক্ষার্থী কাজ করছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংঘঠনেও। ঢাকা চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিবাল, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিবাল, বায়োলজি অলিম্পিয়াড, শিশুদের সুরক্ষায় কাজ করা সেভ দ্যা চিলড্রেন সংঘঠনে নিয়মিত সময় দেন তিনি।