আপনি পড়ছেন

ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়ে বসনিয়ায় আটকে পড়া কয়েক শ বাংলাদেশি দেশটির পাহাড়ি জঙ্গলে বসবাস করছেন। তারা শরণার্থী হোক কিংবা অভিবাসী হোক, দেশে ঢুকতে গেলে ধরে নিয়ে তাদেরকে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে পার্শ্ববর্তী ক্রোয়েশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী। কেন এভাবে কুকুরের মতো পেটানো হবে তাদের, এ প্রশ্ন রেখে অবিলম্বে অত্যাচার বন্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

torture bangladeshis in croatiaবাংলাদেশিদের ক্রোয়েশীয় বাহিনীর নির্যাতনের দৃশ্য

ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব বাংলাদেশি স্বেচ্ছায় নাকি বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু তাদের নির্যাতন করা এক্ষুণি বন্ধ হওয়া দরকার। এ জন্য সবার সোচ্চার হওয়া উচিত।

ক্রোয়েশিয়া সীমান্ত লাগোয়া দেশটির ভেলিকা ক্লাদুসায় বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর দেখা মিলবে রাস্তায়। নিজেদের লুকাতে হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে তারা মাথা নিচু করে হাঁটেন। তারপরও কেউ চিনে ফেললে বিভিন্ন ধরনের অপমানজনক কথাবার্তা বলেন কোনো কোনো বসনীয়। আবার সেখানকার অনেক বাসিন্দাই ক্ষুব্ধ হয়ে বলছেন, মানুষগুলোকে এভাবে নির্যাতন করা অমানবিক, অন্যায়।   

এসব মানুষ অবৈধপথে ক্রোয়েশিয়া পার হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য বসনিয়ায় অবস্থান করছে মাসের পর মাস। খুবই মানবেতর জীবনযাপন করা এই মানুষগুলো দল বেঁধে দুর্গম এলাকা দিয়ে ক্রোয়েশিয়ার ঢুকতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু কালো পোশাক পড়া ও মুখ ঢাকা দেশটির পুলিশ তাদের সবকিছু কেড়ে নিয়ে ফের বসনিয়ায় ফেরত পাঠাচ্ছে। অনেককে নির্মমভাবে নির্যাতনও করা হচ্ছে।

bangladeshis in bosniaবসনিয়ার পাহাড়ি জঙ্গলে বাংলাদেশিদের বসবাসের দৃশ্য

অন্যদেশি এক শরণার্থীর মোবাইলে ধারণ করা এক ভিডিওর সূত্রে ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ক্রোয়েশীয় সীমান্তরক্ষীদের বর্বর নির্যাতনে আহত কয়েকজন বাংলাদেশি ধীরগতিতে হাঁটছেন। তারা কাপড় খুলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাঠি পেটার দাগ দেখাচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন রক্তাক্ত ব্যক্তিও আছেন, তার ক্ষত এতটাই গভীর যে সেলাই ছাড়া সারবে না। চোখের মধ্যে জমাটবাঁধা রক্ত, ঠোট ফাটা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ রকম আরো অনেক বাংলাদেশি ক্রোয়েশীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সীমান্ত পার হতে গেলে তাদের ধরে নিয়ে রীতিমতো আয়োজন করে পেটানো হয়। এটি করছেন মূলত দেশটির একটি বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন।

বিষয়টি ডয়চে ভেলেতে প্রচারের পর আলোচনায় আসলে নড়েচড়ে বসে বসনীয় পুলিশ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো। শরণার্থীরা বলছেন, আহত শরণার্থীদের অ্যাম্বুলেন্সে করে চিকিৎসা দেয়ার জন্য ‘মিরাল ক্যাম্পে’ নিয়ে যায় আইওএম। পাহাড়ের পরিত্যক্ত ভবনের ওই ক্যাম্পে সাত শর মতো শরণার্থী থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন দ্বিগুণেরও বেশি।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নির্যাতি অনেক শরণার্থীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যাদের কারো হাত ভাঙা, কারো পা ভাঙা। অনেকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন। এসব দেখে গণমাধ্যমটির সাংবাদিকের প্রশ্ন, এভাবে কেন তাদের জানোয়ারের মতো পেটানো হবে? কোনো দেশ বা আন্তর্জাতিক আইন কী এটা সমর্থন করে? এর জবাবে তার (সাংবাদিক) উত্তর হলো- না, এটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।