ক্ষুধা-তৃষ্ণা, ব্যথা, ঘুম কিছুই আসে না অলিভিয়ার!

প্রাকৃতিক নিয়মেই মানুষের ক্ষুধা-তৃষ্ণা লাগে। আঘাত পেলে ব্যথা লাগে। ক্লান্তিতে ঘুম আসে। কিন্তু এসব প্রাকৃতিক নিয়মের বাহিরেও ব্যতিক্রমী কিছু মানুষ আছে পৃথিবীতে। যাদের ক্ষুধা-তৃষ্ণা, ঘুম, ক্লান্তি বা ব্যথা অনুভব হয় না। তেমনি এক ব্যতিক্রমী শিশু ১০ বছর বয়সী অলিভিয়া ফ্রান্সওয়ার্থ।

'ক্রোমোজোম সিক্স ডিলেশন' নামের বিরল রোগে আক্রান্ত 'বায়োনিক চাইল্ড' অলিভিয়া ফ্রান্সওয়ার্থ

সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, অলিভিয়া তার মা নিকি ট্রেপাকের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ইয়র্কশায়ারের হাডার্সফিল্ডে বসবাস করে। তার অন্য চার ভাই-বোনের জীবন-যাপন স্বাভাবিক হলেও এক রহস্যময় রোগের কারণে অলিভিয়ার ক্ষেত্রে তা ভিন্ন।

অলিভিয়ার মা নিকি ট্রেপাক জানান, তার সন্তানদের সবার বয়স সাত থেকে পনের বছর। অন্য সন্তানরা স্বাভাবিক হলেও অলিভিয়াকে তিনি ইস্পাতের মতো মনে করেন। কারণ তার ক্ষুধা-তৃষ্ণা পায় না, ঘুম বা ক্লান্তি আসে না, এমনকি ব্যথা পেলে কান্নাও করে না।

সন্তানের এমন অদ্ভুদ বৈশিষ্টের বিষয়ে ৩৫ বছর বয়সী নিকি বলেন, অলিভিয়া যখন নার্সারিতে পড়তো, তখন একদিন স্কুল থেকে তার কাছে ফোন আসে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, তার মেয়ে পড়ে গিয়ে ঠোঁটের মধ্যে দাঁত ঢুকে গেছে।

এরপর রক্তাক্ত ও আহত অলিভিয়াকে হাসপাতালে অস্ত্রোপাচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকের সামনেই সে তার ঠোঁটের ছিন্ন অংশ ধরে টানতে শুরু করে। এ ঘটনায় চিকিৎসক নিকিকে জানায় তার মেয়ের মধ্যে অবশ্যই কোন অস্বাভাবিক ব্যপার আছে।

অলিভিয়া ফ্রান্সওয়ার্থ, তার মা নিকি ট্রেপাক ও তার চার ভাইবোন

এ ঘটনার পর একদিন মেয়ের অস্বাভাবিকতার আরো এক প্রমাণ পায় নিকি। সেদিন নিজের চোখের সামনে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় ছোট্ট শিশুটি। রাস্তার ওপর একটি গাড়ি অলিভিয়াকে প্রথমে ধাক্কা মারে, তারপর বেশ খানিকটা দূরে টেনে নিয়ে যায়। এ সময় নিকি ও তার অন্য সন্তানরা আতঙ্কে চিৎকার কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর অলিভিয়া নিজেই নির্বিকার ভঙ্গিতে ফিরে আসে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও চোখে-মুখে ব্যথার কোন অনুভূতি ছিলো না।

পরে জানা যায়, অলিভিয়া জিনগঠিত এক বিরল রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম 'ক্রোমোজোম সিক্স ডিলেশন'। যার কারণে মানুষের ক্ষুধা-তৃষ্ণা, ঘুম, ক্লান্তি ও ব্যথার অনুভূতি হয় না। এমন বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের 'বায়োনিক চাইল্ড' বলা হয়। পুরো পৃথিবী জুড়ে গুটিকয়েক এমন শিশু রয়েছে, যার মধ্যে অলিভিয়া একজন।