অথচ কোটি টাকার লটারি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি

ব্যবসা থেকে তপস্যা। নিজের ভাগ্য ফেরাতে মানুষ কত কিছুইনা করে। এতে কারো ভাগ্যের চাকা হয়তো ঘোরে, কারো থমকে থাকে, কারো আবার পাল্টে যায় হুট করে। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এক দরিদ্র আনাজ বিক্রেতার ভাগ্য এতটাই সুপ্রসন্ন যে ডাস্টবিনের অবর্জনার স্তুপের মধ্যে ফেলে দেওয়া লটারির টিকেটে রাতারাতি রাজা বনে গেলেন তিনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, চলতি বছরের প্রথমদিন লটারি জিতে এক লাফে কোটিপতি হয়ে গেছেন রাজ্যের ভাঙড়ের কাশীপুর থানার সর্দারপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাদেক মোল্লা। তিনি স্থানীয় দোকান থেকে পাঁচটি লটারির টিকেট কিনেছিলেন। যার একটিতে এক কোটি এবং বাকি চারটিতে এক লাখ টাকা করে জিতেছেন তিনি। তবে লটারি জেতার আগে টিকিটগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার আনাজ বিক্রি শেষে বাড়ি ফিরছিলেন সাদেক। পথে দমদমের কাঠগোল এলাকা থেকে ৬ টাকা মূল্যের নাগাল্যান্ড রাজ্য লটারির ৫টি টিকিট কেনেন তিনি। পরে খেলার ফলাফল দিলে বিক্রেতার কাছে জানতে পারেন তিনি কোন পুরস্কার জেতেননি। এতে আশাহত হন সাদেক এবং কাশীপুর বাজারের একটি ডাস্টবিনে টিকেটগুলো ফেলে দেন।

পরদিন ফের আনাজ বিক্রি করতে দমদম গেলে ওই বিক্রেতার সাদককে জানান, তিনি লটারিতে এক কোটি টাকা জিতেছেন। এ কথা শুনে সাদেক সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফিরে আসেন এবং কাশীপুর বাজারের সেই ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া টিকিটগুলো উন্মাদের মতো খুঁজতে থাকেন। তার ভাগ্য এতটাই প্রসন্ন যে এক পর্যায়ে জলে ভেজা অবস্থায় টিকিটগুলো খুঁজেও পান। এরপর আনন্দে আত্মহারা হয়ে ফের দমদমে যান তিনি।

এদিকে বিপুল পরিমাণ টাকা জিতে অস্বস্তিতে পড়েছে সাদেকের পরিবার। পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছেন তারা। তবে কাশীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, পরিবারটি যদি পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চায়, তাহলে তারা অবশ্যই সেটির ব্যবস্থা করবেন।

পরিবারটির কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই জানতে পেরে ওই এলাকার একটি রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ তাদের অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত খুলে দিয়েছে।

সাদেকের স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, তাদের অভাবের সংসার। খেয়ে না খেয়ে তিন ছেলে মেয়েকে কষ্ট করে বড় করেছেন। টাকার অভাবে বড় ছেলে রাজেশকে পড়াতে পর্যন্ত পারেননি। তবে সৃষ্টিকর্তা এবার তাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন। তাই ছোট ছেলে রাজেশকে এখন থেকে স্কুলে পড়াবেন।

এদিকে খুশিতে আত্মহারা হয়ে সাদেক একটি গাড়িও বুক করে ফেলেছেন। আশেপাশের পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে মিষ্টি বিতরণ করছেন। তিনি বলেন, কষ্ট করেই ছোট থেকে বড় হয়েছেন। টাকার অভাবে অনেক স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। আগেও সামান্য টাকার লটারি জিতলেও কখনো এত টাকা জিতবেন তা কল্পনা করেননি।