মাছের মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোক!

শোকে কাতর আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ জাম্বিয়ায় সর্বস্তরের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে শোক জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বিরোধী দলীয় নেতা। করা হয়েছে মৌন মিছিল, প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে মোমবাতি। তবে এ শোক কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি বা বড় কোনো দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য নয়। বরং জাম্বিয়াবাসীর এমন শোক একটি মাছের জন্য।

‘মাফিশি’। ছবি- সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাম্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় কপারবেল্ট ইউনিভার্সিটির (সিবিইউ) একটি পুকুরে বসবাস করতো ‘মাফিশি’ নামের একটি মাছ। জন্মের দুই বছর পর থেকে দীর্ঘ ২০ বছর ওই পুকুরেই কেটেছে মাছটির। কিন্তু গত সোমবার হঠাৎ করেই মারা যায় সেটি। আর তার মৃত্যুই যেন মেনে নিতে পারছে না কেউই।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জাম্বিয়ার স্থানীয় বেম্বা ভাষায় ‘মাফিশি’ নামের অর্থ ‘বড় মাছ’। এ মাছটি সিবিইউ'র শিক্ষার্থীদের কাছে ছিলো ‘সৌভাগ্যের প্রতীক’। তারা বিশ্বাস করতো ‘মাফিশি’ তাদের পরীক্ষা ভালো ফলাফল করতে সাহায্য করতো। এ জন্য অনেকেই মাছটিকে খাবার দেওয়াসহ যত্ন করতো। অনেকে আবার নিজের প্রশান্তির জন্য বা শুধুই ভালোলাগা থেকে মাছটি দেখতে যেতো।

কপারবেল্ট ইউনিভার্সিটি (সিবিইউ)- ফাইল ছবি

সিবিইউয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, যখনই তিনি কোনো মানসিক চাপে থাকতেন, তখনই মাছটিকে দেখতে যেতেন। মাছটিকে পানিতে সাঁতরাতে দেখলেই তার মনে প্রশান্তি চলে আসতো। তার মতো অনেকের কাছে মাফিশি ছিলো চাপমুক্তির একটি মাধ্যম।

এ বিষয়ে সিবিইউয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লরেন্স কাসোন্দে বলেন, ঠিক কী কারণে মাফিশি মারা গেছে তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। মাফিশির মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মৌন মিছিল ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেছে। তারা মাছটির মৃতদেহ সংরক্ষণের করার চিন্তা করছেন।

তিনি আরো জানান, মাফিশির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশ থেকে তাদের কাছে শোকবার্তা আসতে থাকে।

এমনকি মাফিশির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন খোদ দেশটির প্রেসিডেন্ট এডগার লুঙ্গু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক শোকবার্তায় তিনি ভারতের মহাত্মা গান্ধীকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, একটি দেশে ও জাতির মহানুভবতা ও নৈতিকতা মূল্যায়ণ করা যায়, প্রাণীর প্রতি তাদের আচরণ দেখে। মাফিশির জন্য তার মন পুড়বে।

মাফিশির মৃত্যুতে সিবিউ'র শিক্ষার্থীদের প্রতি শোক জানিয়েছেন জাম্বিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা হাকাইন্ডে হচিলেমাও।