ফুলের পরাগায়ন হয়ে থাকে ভ্রমর, মৌমাছি বা এ ধরনের পোকামাকড়ের মাধ্যমে। ভ্রমর বা মৌমাছি মধু বা নেকটার সংগ্রহের জন্য যখন ফুলের ওপর বসে তখন তাদের শরীরে ফুলের পরাগ লেগে যায়। পরবর্তীতে সেই মৌমাছি বা ভ্রমর যখন অন্য কোনো ফুলের ওপর বসে তখন পরাগায়ন ঘটে। তবে এটি এমনি এমনি ঘটে না। এর জন্য ফুল ও ভ্রমরের মধ্যে এক ধরনের বিশেষ আকর্ষণ ও কথোপকথন চলে।

flower beeফুলের মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছি- প্রতীকী ছবি

ফুল ও ভ্রমরের মধ্যকার এ বিশেষ আকর্ষণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক। সম্প্রতি এ বিষয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডানিয়েল রোব্যার্ট বলেন, ফুল ও পরাগবাহী পোকার মধ্যে যে এক ধরনের ‘জাদুময় সংযোগ’ রয়েছে তা কিছু ফুল গাছের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই বুঝা যায়। একটি ভ্রমর বা মৌমাছি মধু সংগ্রহের জন্য যে কোনো ফুলের ওপর গিয়ে হুট করে বসে যায় না। বরং একটি ফুলে বসার আগে যাচাই-বাচাই করে। কারণ ভ্রমর বা মৌমাছি একটি ফুলের ওপর বসতে বেশ পরিশ্রম করতে হয়।

তিনি আরো বলেন, ভ্রমর বা মৌমাছি এমন ফুলের ওপরই বসে যেগুলোর ওপর সাম্প্রতিক সময়ে অন্য কোনো পোকা, মৌমাছি বা ভ্রমর বসেনি। কারণ একটি ফুল থেকে যখন কোনো ভ্রমর বা মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে নিয়ে যায় তখন সেই ফুলে আবার মধু বা নেকটার আসতে সময় লাগে। এখন কথা হলো- ভ্রমর বা মৌমাছি এ বিষয়টি কীভাবে বুঝতে পারে যে, সেই ফুলে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো পোকা বসেছে কি না?

flower bee 2 copyফুলের মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছি- প্রতীকী ছবি

প্রফেসর রোব্যার্ট আরো বলেন, ফুল আর ভ্রমরের মধ্যে বহু বছর ধরে এ আদান-প্রদান চলে আসছে। ভ্রমর বা মৌমাছি মধু সংগ্রহের জন্য যখন ফুলের ওপর বসে তখন ফুলের পরাগ খাড়া হয়ে যায় এবং এর সুক্ষ্ম রোমগুলো ওই পরাগবাহীর শরীরে শক্তভাবে আটকে যায়। এখানে ভ্রমর ফুল থেকে তার প্রয়োজনীয় মধু সংগ্রহ করছে, বিনিময়ে সে ফুলের পরাগায়নের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু ভ্রমর যদি বসার পর কোনো ফুল থেকে মধু না পায়, তাহলে সে আর সেই ফুলে বসবে না। এতে ওই ফুলের পরাগায়নও আর হবে না। তাই ফুল ভ্রমরকে না বলতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, এখন কথা হলো- একটি ফুলে মধু আছে কি নেই সেটি সে ভ্রমরকে বসার আগে কীভাবে জানায়। কারণ ফুল দ্রুত নিজের রং, গন্ধ বা আকার পরিবর্তন করতে পারে না, যে এসবের মাধ্যমে সে ভ্রমরকে সংকেত পাঠাবে। তাই তারা গবেষণা করে দেখেছেন ফুল তার নিজস্ব ইলেক্ট্রো-স্ট্যাটিক সম্ভাবনা দ্রুত বদলাতে পারে পারে। তাই তারা ধারণা করেন, এর মাধ্যমেই ফুল ভ্রমর বা পরাগবাহীদের সংকেত দিয়ে থাকে।

এই ধারণার প্রেক্ষিতেই গবেষকরা ফুলের ইলেক্ট্রো-স্ট্যাটিক পরীক্ষা করে দেখেন। তখন তারা দেখতে পান, মাটির মধ্যে ঋণাত্মক ইলেক্ট্রন রয়েছে, যা গাছের মাধ্যমে ফুলে স্থানান্তরিত হয়। অন্যদিকে, বাতাসে উড়ার সময় ঘর্ষণের ফলে ভ্রমরের গায়ে পজিটিভ ইলেক্ট্রন উৎপন্ন হয়। এই ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের মাধ্যমেই ভ্রমর বা পরাগবাহী কোনো পোকা বুঝতে পারে কোন ফুলে নেকটার রয়েছে।

ভ্রমরের এ ইলেক্ট্রো স্ট্যাটিক টের পাওয়ার বিষয়টিও গবেষণার মাধমে প্রমাণ করেছেন ওই গবেষকরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব পরীক্ষাগারে নেকটার ভরা কৃত্রিম ফুল তৈরি করেছিলেন এবং সেই ফুলে অতিক্ষুদ্র ঋণাত্মক চার্জ যুক্ত করেছিলেন। এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজে ব্যবহৃত কিছু ভ্রমরকে সেখানে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এত সুক্ষ্ম তারতম্য সত্ত্বেও ভ্রমরগুলো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল।

আবার আরেকটি পরীক্ষায় তারা ধনাত্মক চার্জবাহী ভ্রমরের নকল তৈরি করেছিলেন। এর পর সেটিকে ফুলের ওপর বসানোর পর দেখতে পান যে, ভ্রমরের ধনাত্মক চার্জ ও ফুলের ঋণাত্মক চার্জ ব্যালেন্স হয়ে যায়। অর্থাৎ ফুল ও ভ্রমরের মধ্যে বৈদ্যুতিক যোগাযোগ ঘটে।

Discover extraordinary stories from around the world with our exceptional news coverage. From uplifting human interest stories to groundbreaking scientific discoveries, we bring you the best of the best. Stay informed about the latest breakthroughs in technology, medicine, and beyond, and explore the world's most fascinating cultures and communities. Get inspired and informed with our exceptional news coverage.