কম্বোডিয়ায় মাটিতে পুঁতে রাখা স্থলমাইন শনাক্ত করে মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য দেওয়া হয়েছে সম্মানজনক স্বর্ণপদক। তবে কোনো মানুষ এ পদক পাননি। মর্যাদাপূর্ণ এ পদক পেয়েছে মাগওয়া নামের একটি ইঁদুর। গতকাল শুক্রবার ব্রিটিশ প্রাণিবিষয়ক দাতব্য সংস্থা পিপলস ডিসপেনসারি ফর সিক অ্যানিমেলস (পিডিএসএ) খুদে প্রাণীটিকে এ পদক দেয়।

rat magoyaস্বর্ণপদক গলায় ইঁদুর মাগওয়া। ছবি- সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ার বিভিন্ন এলাকার মাটিতে লুকানো রয়েছে লাখ লাখ স্থলমাইন। প্রতিবছর এসব মাইন বিস্ফোরণে বহু মানুষ প্রাণ হারান। কম্বোডিয়ার সরকার দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন দেশের সহায়তায় এসব লুকানো মাইন শনাক্ত করে আসছে। কিন্তু কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর এ ঝুঁকিপূর্ণ কাজটিই বেশ কয়েক বছর ধরে করে আসছে মাগওয়া ইঁদুর।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মাগওয়া এখন পর্যন্ত ৩৯টি স্থলমাইন শনাক্ত করে কম্বোডিয়ার ১ লাখ ৪১ হাজার স্কয়ার মিটার এলাকাকে নিরাপদ করেছে। স্থলমাইন খোঁজার পাশাপাশি শনাক্ত করেছে অবিস্ফোরিত ২৮টি গোলা। এ জন্যই পিডিএসএ'র ওই বীরত্বপূর্ণ সম্মাননা পেল ইঁদুরটি।

ground mineস্থলমাইন- প্রতীকী ছবি

জানা যায়, এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য এর আগে ৩০টি প্রাণীকে পুরস্কৃত করে পিডিএসএ। কিন্তু এর আগে কোনো ইঁদুর এ পুরস্কার পায়নি। প্রথমবারের মতো মাগওয়াই এই সম্মানজনক পুরস্কারটি পেল। মাগওয়াকে দেওয়া স্বর্ণপদকটিতে খোদাই করে লেখা ছিলো- ‘প্রাণীর বীরত্ব ও কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য’।

বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, মাগওয়া নামের পুরুষ ইঁদুরটির বয়স ৭ বছর। বর্তমানে তার শরীরের ওজন ১ কেজি ২০০ গ্রাম ও দৈর্ঘ্য ৭০ সেন্টিমিটার। এ প্রজাতির ইঁদুর অন্যান্য পোষা ইঁদুরের তুলনায় বড় হয়ে থাকে। কিন্তু মাগওয়ার ওজন কম থাকায় এটি লুকানো স্থলমাইনগুলোকে বিস্ফোরিত না করেই সেগুলোর ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারে।

আরো জানা যায়, মাগওয়াকে এ কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে বেলজিয়ামের স্থলমাইন শনাক্তকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অ্যাপোপো। এটি তানজানিয়াভিত্তিক একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। মাগওয়ার জন্ম এ দেশেই। এখানেই বেড়ে উঠেছে এ খুঁদে প্রাণীটি।

অ্যাপোপো জানায়, মাগাওয়াকে স্থলমাইনের মতো বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্তের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এটি যখন কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য খুঁজে পায় তখন সঙ্গে থাকা কর্মীকে সতর্কবার্তা দেয়। এটি খুব সহজে ও দ্রুত একটি বিস্তৃত এলাকা তল্লাশি করতে পারে। মাত্র ২০ মিনিটে একটি টেনিস কোর্টের সমান আয়তনের মাঠ তল্লাশি করতে পারে প্রাণীটি। অথচ মানুষের মেটাল যন্ত্রের সাহায্যে এ ধরনের একটি মাঠ তল্লাশি করতে ১-৪ দিন সময় লাগে।

সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্রিসটোফ কক্স বলেন, মাগওয়ার এ অর্জন তাদের জন্যও সম্মান বয়ে এনেছে।

অন্যদিকে, মাগওয়াকে পুরস্কৃত করতে পেরে খুশি পিডিএসএ। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, মাগওয়া স্থল মাইন শনাক্ত করে বহু মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। এ ছোট্ট প্রাণীটি এখন তাদের কাছে নায়ক।

স্থলমাইন অপসারণ করা একটি সংস্থার তথ্যমতে, ৭০ থেকে ৮০ দশকে কম্বোডিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলে। এ সময় সেখানকার বিভিন্ন এলাকার মাটিতে বিপুল পরিমাণ স্থলমাইন পুঁতে রাখা হয়। ১৯৭৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এসব মাইন বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। এখনো ৬০ লাখের বেশি স্থলমাইন মাটিতে লুকানো রয়েছে।

Discover extraordinary stories from around the world with our exceptional news coverage. From uplifting human interest stories to groundbreaking scientific discoveries, we bring you the best of the best. Stay informed about the latest breakthroughs in technology, medicine, and beyond, and explore the world's most fascinating cultures and communities. Get inspired and informed with our exceptional news coverage.