কুখ্যাত ড্রাগডিলার পাবলো এসকোবারকে গত ৩০ বছর ধরে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে কলম্বিয়া। কিন্তু এই “অপচ্ছায়” কিছুতেই দূর হচ্ছে না। উল্টো দেখা যাচ্ছে তার রেখে যাওয়া জলহস্তি নিয়ে বিপদে পড়েছে কলম্বিয়া!

hippo of pablo escobar in colombia

পাবলো এসকোবার ছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত অপরাধীদের একজন। ১৯৮০-এর দশকে সারা বিশ্বের জন্য মহাদুশ্চিন্তার কারণ ছিলেন তিনি। অপহরণ, বোম্বিং, নির্বিচারে হত্যা; এমন কোনো অপরাধ নেই যেখানে তার হাত পড়েনি। এক সময় মনে করা হতো পাবলো এসকোবার দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী লোক।

৩০ বছর আগে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী মৃত্যুর আগে এক প্রাকৃতিক টাইমবোমা সেট করে গেছেন, যার জন্য ভুগতে হচ্ছে কলম্বিয়াকে।

কয়েক দশক আগে এসকোবার তার ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানায় কয়েকটি বিদেশি জলহস্তি আমদানি করেছিলেন, যা এখন বহুগুণে বেড়ে কলম্বিয়ার প্রধান জলপথে ছড়িয়ে পড়েছে। গবেষকরা বলছেন, এই প্রাণীর ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এগুলোকে ধরে ধরে আলাদা করে রাখা ছাড়া উপায় নেই।

গবেষণাটির একজন লেখক নাটালি ক্যাসেলব্লাঙ্কো বলেন, “এই প্রাণীর সম্ভাব্য পরিণতির জন্য আমরা দুঃখিত। কিন্তু গবেষক হিসেবে আমাদের সৎ হওয়া জরুরি। কলম্বিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এই প্রজাতির জলহস্তি হিংস্র প্রকৃতির। সুতরাং এখন যদি এগুলোর বেড়ে চলা ঠেকানো না যায়, তাহলে এক থেকে দুই দশকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”

এই জলহস্তিকে কলম্বিয়াতে কোকেইন জলহস্তি বলা হয়। ১৯৯৩ সালে পাবলো এসকোবারের মৃত্যুর পর এটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে এসকোবার একটি চিড়িয়াখানা গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে থাকা নানা জন্তু দেশটির বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়। কিন্তু জলহস্তিগুলো সেখানে রেখে দেওয়া হয়।

কর্তৃপক্ষ ভেবেছিলো, জলহস্তিগুলো সেখানেই থাকবে এবং এক সময় মরে যাবে। কিন্তু আদতে তা তো হয়ইনি, উল্টো এগুলো টিকে গেছে।

গত কয়েক বছরে গবেষকরা এই জলহস্তি গণনা করার চেষ্টা করেছেন। তাতে যে ফল বেরিয়ে এসেছে, সে হিসেবে দেশটিতে এই প্রজাতির হিংস্র জলহস্তির পরিমাণ ৮০ থেকে ১২০টি। আফ্রিকার বাইরে এতো সংখ্যক এই প্রজাতির জলহস্তি আর নেই। এসকোবার আফ্রিকা থেকেই এগুলো আমদানি করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

গবেষণাটিতে যে সম্ভাবনা দেখানো হয়েছে, তাতে ২০৩৪ সালের মধ্যে এই জলহস্তির সংখ্যা ১৪০০তে পৌঁছাতে পারে যদি প্রতি বছর অন্তত ৩০টি জলহস্তি ধরে তা আলাদা করে রাখা না হয়।

গবেষকরা আরো বলেন, আফ্রিকার যে অঞ্চলে এই প্রজাতির জলহস্তি আছে, সেখানে তাদের প্রজননের এবং বেড়ে উঠার পরিবেশ ভালো। কিন্তু কলম্বিয়ায় এই জলহস্তিগুলোর সাথে মানুষের সংস্পর্শ হয়ে যাচ্ছে এবং এগুলোর আক্রমণে অনেকে আহত হচ্ছেন।

আফ্রিকার খরার সময়ে এই জলহস্তিদের প্রজনন প্রাকৃতিকভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয়, যা কলম্বিয়াতে সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে কলম্বিয়ার পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে এই প্রজাতির জলহস্তির জীবনের জন্য স্বাভাবিক নয়।

তারা আরো বলছেন, এ প্রজাতির জলহস্তির সংখ্যা বেড়ে গেলে তা কয়েকভাবে সাধারণ পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। যেমন স্থানীয় প্রজাতির জলহস্তির সমস্যা হতে পারে, যা এর মধ্যেই প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

মৃত্যুর সত্যের কাছে হার মেনে কলম্বিয়া থেকে পাবলো এসকোবারে দেহ চলে গেছে ঠিকই, কিন্তু তিনি যেনো রেখে গেছেন এক অন্য বিপদ। যা থেকে বের হতে রীতিমত যুদ্ধ করার মতো অবস্থা হচ্ছে কলম্বিয়ার। এক দিকে গবেষকরা বলছেন এই প্রজাতির জলহস্তি নির্মূল করতে হবে, অন্য দিকে এই জলহস্তির পক্ষেও কথা বলছেন অনেকে। তাদের মতে এই জলহস্তি পরিবেশের জন্য ভালো কিছুও করতে পারে। সব মিলিয়ে নিদারুণ এক বিপদেই পড়েছে কলম্বিয়া।

Discover extraordinary stories from around the world with our exceptional news coverage. From uplifting human interest stories to groundbreaking scientific discoveries, we bring you the best of the best. Stay informed about the latest breakthroughs in technology, medicine, and beyond, and explore the world's most fascinating cultures and communities. Get inspired and informed with our exceptional news coverage.