উদ্যোগ ঠিকঠাক মতো নিতে পারলেই উদ্যোক্তা। তবে সেটা কোন বয়সে নিতে হবে? অনেকে এর জন্য পুরোপুরি ম্যাচিউরড হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকলেও, আসল কথা হচ্ছে, এর জন্য সে রকম কোনো বয়সের বাঁধাছাঁদা নেই। নইলে তিলক মেহতা কী করে উদ্যোক্তা হলো? যার বয়স মাত্র ১৪। শুধু উদ্যোগ নিয়েই বসে নেই, তিন বছরেই ১০০ কোটি টাকার মালিক বনে গেছে সে।

tilak mehtaতিলক মেহতা

হ্যাঁ, বর্তমান বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি পেয়ে গেছে তিলক মেহতা। নিজের বুদ্ধি ও মেধা খাটিয়ে তিলক গড়ে তুলেছে ডিজিটাল কুরিয়ার সার্ভিস ‘পেপারস এন পার্সেল’। এখনো স্কুলের মাধ্যমিক পর্যায় না পেরুনো তিলকই এ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। ওয়ানডে পার্সেল পরিষেবার টার্গেট নিয়ে কুরিয়ার সংস্থাটি তৈরি করে সে। এর মধ্য দিয়েই স্কুলবয় তিলক এখন খ্যাতিমান উদ্যোক্তার খ্যাতি পেয়ে গেছে।

জানা গেছে, ১৪ বছর বয়সী তিলক মেহতা বাস করে ভারতের মুম্বাইয়ে, বাবা-মায়ের সঙ্গে। বাবা মহেশ মেহতা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিরত, আর মা কাজল মেহতা গৃহিণী। বর্তমানে সে মুম্বাইয়ের একটি স্কুলে ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে।

tilak mehta awardএ বয়সের বেশ কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে তিলক মেহতা

নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে তিলক জানায়, ৪ বছর আগের কথা। তখন মাত্র ১০ বছরে পা দিয়েছে সে। একদিন আত্মীয়ের বাড়িতে ভুল করে বই ফেলে এসেছিল তিলক। অথচ পরদিনই ছিলো ওই বিষয়ের পরীক্ষা। বাবার কাছে বইটি নিয়ে আসার কথা বলে তিলক। কিন্তু মুম্বাইয়ের জ্যাম ঠেলে অতটুকু সময়ের মধ্যে নিজে গিয়ে ওই বই নিয়ে আসা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় বাবা। তাই সে নিজে গিয়ে বিভিন্ন কুরিয়ার কোম্পানিতে খোঁজ নেয়। একটি কোম্পানি বইটি পৌঁছে দিতে রাজি হলেও এর জন্য ফি দাবি করে ২৫০ টাকা।

এ বিষয়টিই পরে তিলক মেহতাকে ভাবিয়ে তোলে। তার মনে হয়, চাইলে সে নিজেই এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে, যার মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন স্থানে খাবারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে দেয়া যাবে।

এরপর ২০১৮ সালে মাত্র তিন মাসের মধ্যে ‘পেপার্স এন পার্সেল’ নামের একটি স্টার্টআপ গড়ে তোলে তিলক। মুম্বাইয়ের ডাব্বাওয়ালাদের সহযোগিতায় একদিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয় তার ডিজিটাল কুরিয়ার সার্ভিসের। ছোট্ট একটা কলম থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সামগ্রীই পেপারস এন পার্সেল পৌঁছে দেয় ক্রেতার বাড়িতে।

তিলকের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘পেপারস এন পার্সেল’ মূলত একটি জরুরি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। মোবাইল থেকে ওই অ্যাপ ডাউনলোড করে এই পরিষেবার সুবিধা নেয়া যায়। বর্তমানে এতে যুক্ত আছেন দুই শতাধিক কর্মচারী। এ ছাড়া তিন শতাধিক ডাব্বাওয়ালা এ অ্যাপের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে খাবার সরবরাহ করে থাকেন। প্রতিবারে ৩ কেজি জিনিস পৌঁছানো যায় মুম্বাই শহর ও শহরতলীতে। জিনিসের ওজন অনুযায়ী খরচ নির্ধারণ করা হয়। সর্বনিম্ন ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা পর্যন্ত ফি নিয়ে থাকে তারা।

মুম্বাইয়ে ডাব্বাওয়ালা অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে এই সংস্থা চালায় তিলক। পেপারস এন পার্সেলের সঙ্গে কাজ করে ডাব্বাওয়ালারা মাসে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আয় করতে পারে।

তিলক জানায়, প্রতিদিন প্রায় ১২০০ পার্সেল বিতরণ করা হয় এই অ্যাপের মাধ্যমে। ভবিষ্যতে এর পরিধি ও ব্যাপ্তি আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে তার।

২০১৮ সালে তিলক ‘ইয়াং এন্টারপ্রেনার টাইটেল অ্যাট দ্য ইন্ডিয়ান মেরিটাইম অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার জিতে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জিতে নেয় গ্লোবাল চাইল্ড প্রোডিজি অ্যাওয়ার্ড। অন্যদিকে ২০২০ সালের মধ্যেই ১০০ কোটি টাকার মাইলফলক ছুঁয়েছে খুদে এই উদ্যোক্তা।

বর্তমান হতাশ যুবসমাজের প্রতি তিলকের বার্তা, কোনো বাধাই আসলে বাধা নয়। সৎ ইচ্ছা, চেষ্টা ও ধৈর্য থাকলে যে কেউই ছুঁতে পারে তার স্বপ্নের মাইলফলক।

Discover extraordinary stories from around the world with our exceptional news coverage. From uplifting human interest stories to groundbreaking scientific discoveries, we bring you the best of the best. Stay informed about the latest breakthroughs in technology, medicine, and beyond, and explore the world's most fascinating cultures and communities. Get inspired and informed with our exceptional news coverage.