আপনি পড়ছেন

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হোসাইনু মিনমি আনা মিন হোসাইন। হোসাইন আমার থেকে। আমি হোসাইন থেকে।’ অর্থাৎ, হোসাইন (রা.) নবী (সা.) থেকে এসেছেন। আর নবী (সা.) হোসাইন (রা.) থেকে এসেছেন। ইমাম হোসাইন ছিলেন নবীজি (সা.) এর নাতি। তাই এ কথা সহজেই বোঝা যায়, ‘হোসাইন আমার থেকে। আমি হোসাইন থেকে' -এ কথার ব্যাখ্যা কী? 

battle of karbala

যুগশ্রেষ্ঠ সুফিরা এ কথার ব্যাখ্যায় বলেছেন, নবীজি (সা.) দীর্ঘ মেহনত করে মানবগ্রহে যে জান্নাতের বাগান সাজিয়েছেন, একদল মানুষরূপী পিশাচ, সে বাগানকে তছনছ করে দেবে। এটা আগে থেকেই নবী করিম (সা.) জানতেন। তিনি এ কথাও জানতেন, সেই অগোছালো বাগান গুছিয়ে দেবে হোসাইন (রা.)। বুকের রক্ত ঢেলে ধ্বংসাবশেষে আবার নতুন করে ইসলামবৃক্ষের চাষ করবে হোসাইন (রা.)।

বাস্তাবেও তাই ঘটেছে। ৬৩ বৎসরের জীবনে কত কষ্ট করে পরিশ্রম করে একটি বর্ববর জাতিকে কোরআনের আঁকা শ্রেষ্ঠজাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে দাঁড় করিয়েছেন নবীজি (সা.)। আফসোস! সেই সমাজে ঘুন পোকার মত কিছু ক্ষমতালোভী মানুষ সরল সরল মানুষদের মধ্যে বিভেদ ছড়িয়ে দিয়েছে। সাধারণ মুমিন মুসলমানদের কতটা বিভ্রান্ত এবং পথভ্রষ্ট করলে তারা একই সঙ্গে নামাজও পড়েছে আবার নবীর নাতির বুকে ছুড়িও বসিয়েছে। কতটা ব্রেনওয়াশ করলে নিজেদের মুসলমান দাবি করেছে আবার আহলে বাইতের সদস্যদের কতল করেছে। 

একদিনে বা এক বছরে কখনোই কোন মানুষকে দিয়ে নবী পরিবারের বিরুদ্ধে এত নির্মম ব্যবহার করানো যায় না। ইতিহাস সাক্ষী, বহু বছরের সাধনার ফল ছিলো কারবালায় ইমাম হোসাইনের শাহাদাত। কিন্তু হায়, যে উদ্দেশ্যে ইমাম হোসাইনকে তারা শহীদ করল, সে উদ্দেশ্য তাদের মাঠেই মারা গেলো। পুরো পৃথিবী এখন জানে, কারবালায় আসলে কার মাথা নত হয়েছে? কে সেদিন পরাজয় বরণ করেছে?

কারবালায় ইমাম হোসাইনের নির্মম শাহাদাতের পরই সত্যপ্রেমিকরা বুঝে গেছে, জীবন যাবে, তবুও মিথ্যার কাছে অসত্যের কাছে কোনভাবেই মাথা নত করা যাবে না। বাতিলের সঙ্গে আপোষ করা সত্যপ্রেমিকদের ধর্ম নয়। তাইতো যখনই কারবালার জন্য অশ্রু ঝরে, একই সঙ্গে বাতিলের বিরুদ্ধে হুঙ্কারও ওঠে। কবি নজরুল বলেছেন-

‘দ্রিম দ্রিম বাজে ঘন দুন্দুভি দামামা
হাঁকে বীর, ‘শির দেগা, নেহি দেগা আমামা!’

ইমাম হোসাইন (রা.) যে শির দিয়ে আমামা বাঁচিয়েছেন, মাথা দিয়ে ইমান রক্ষা করেছেন, সত্যের পতাকা সবার ওপরে রেখেছেন- এটাই কারবালার শিক্ষা। আমরা যারা হোসাইন প্রেমিক, আমাদের জীবনেও হোসাইন (রা.) এর এ শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সত্যের কাছে, নিজেকে সঁপে দিতে হবে। আর মিথ্যা এবং অন্যায় দেখা মাত্রই প্রতিবাদী কণ্ঠে রুখে দাঁড়াতে হবে।

এ একটি আদর্শ যদি আমরা চর্চা করতে পারি, তাহলে দুনিয়া হবে আমাদের জন্য অস্থায়ী জান্নাত।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর