আপনি পড়ছেন

স্রষ্টা আল্লাহ এবং তার প্রেরিত দূত হজরত মুহাম্মাদ (সা.) যেভাবে জীবনের প্রতিটি দিক পরিচালনা করতে বলেছেন, সেভাবে পরিচালনা করাই হলো ইমানের প্রথম ও প্রধান দাবি। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা জীবনের কিছু বাঁকে আল্লাহর-নির্দেশ, নবীর সুন্নাত অনুসরণ করলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে কোরআন-সুন্নাহকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে শয়তানের অনুকরণ-অনুসরণ করছি।

al quaran

একই সঙ্গে নামাজ পড়ছি, আবার সুদ-ঘুষ, হারাম-মিথ্যা, অন্যায়-জুলুম, মানুষ ঠকানো-ওজনে কম দেয়াসহ হাজারো কোরআনবিরোধী-নবী বিরোধী কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছি।

আমরা রোজা রাখি আবার পরিবার-প্রতিবেশি-আত্মীয়দের নূন্যতম অধিকারও রক্ষা করি না। আমরা হজ করি কিন্তু আমাদের ওপর যাদের অর্থায়ন ফরজ, দরিদ্র মানুষকে টেনে তোলার যে নির্দেশ ধনীদের প্রতি কোরআন দিয়েছে, ক্ষুধামুক্ত সমাজ গড়ার যে কর্মসূচি নবী (সা.) উম্মতকে দিয়েছেন, কোরআন মুসলমানদের ওপর যেসব অর্থনৈতিক বিধান ফরজ করেছে সে নির্দেশগুলো আমরা এমনভাবে এড়িয়ে চলি যে, বোধহয় কোরআনে অর্থনীতি ও দারিদ্র বিমোচনের বিষয়ে আমাদের কিছুই বলার নেই।

আমরা মাদরাসায় পড়ি, ধর্মালোচনার আসরে বসি, মুনাজাতে কাঁদি, আবার আমরাই বাস্তব জীবনে এমন সব কাজ করি, যা দেখে শয়তানও লজ্জা পায়। খাদ্যে ভেজাল, কাজে দূর্নীতি, ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না, সুদ ছাড়া লেনদেন চলে না, শালীনতার বালাই নেই, শ্লীলতাহানীর কমতি নেই, খুন-খারাবি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে, চরমতম অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ এমন কোনো অনাচার নেই যা আমরা প্রতিযোগিতা করে করছি না। অথচ ধর্মে-কর্মেও আমরা পিছিয়ে নেই।

আমাদের সম্পর্কেই পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশ অস্বীকার করবে? তাহলে জেনে রেখো এর শাস্তি হলো পৃথিবীতে তোমরা হবে চরম লাঞ্চিত আর কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে তাড়িয়ে নেয়া হবে আজাবের দিকে। তোমরা যা করছ আল্লাহ তা খুব ভালো করেই জানেন। সূরা বাকারাহ: আয়াত ৮৫।

আল্লাহর কালাম মিথ্যা নয়। বর্তমান পরিস্থিতিই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। একদিন পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলো মুসলমান। আর আজ পৃথিবীর মানুষ গোলামের চেয়েও নিকৃষ্ট আচরণ করছে সেই মুসলমানের সঙ্গেই। মুসলমানের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে, নাগরিকতা হরণ করছে, মুসলমান ভূখণ্ড দখল করে জালেমরা অবৈধ রাষ্ট্র গঠন করে বুক ফুলিয়ে হায়েনার হাসি হাসছে। আর মুসলমারা সব নির্যাতন, অত্যাচার মুখ বুঝে সয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর কিতাবকে অমান্য করে চললে কপালে যে কত দুর্ভোগ পোহাতে হয় মুসলমানরাই এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

কোরআন না মেনে মুসলমানদের কপাল এমনভাবে পুড়েছে যে, তাদের ওপর জুলুম হওয়া সত্ত্বেও কোনো মুসলমান রাষ্ট্রও তাদের পক্ষে টু শব্দটি পর্যন্ত করে না। কোথাও কোথাও তো এমন হচ্ছে যে, এক মুসলিম রাষ্ট্র ধ্বংস করে দিচ্ছে আরেক মুসলিম রাষ্ট্রকে। আফসোস! তবুও ঘুম ভাঙছে না মুসলমানের।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘ইয়া আইউহাল্লাজিনা আমানু উদখুলু ফিসসিলমি কাফফাহ। ওয়ালা তাত্তাবিউ খুতুওয়াতিশ শায়তান।

অর্থ: হে বিশ্বাসীরা! তোমারা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো। আর শয়তানকে মেনে চলো না।’

আমরা আধা ইসলাম মানছি। আর আধা শয়তানের গোলামি করছি। ফলে আজ আমাদের কপালে এমন দুর্দশা। এ লাঞ্চনাময় জীবন থেকে মুসলিম বিশ্বকে বেরিয়ে আসতে, আবার ইসলামকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে নিয়ে যেতে অবশ্যই কোরআনের পুরোপুর অনুসরণের বিকল্প নেই। অন্যথায় আমাদের জন্য সওয়াব তো দূরের কথা জাহান্নামের সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান নির্ধারণ করে রেখেছেন আল্লাহ তায়ালা।

সূরা মাউনে আল্লাহ বলছেন, ‘ফাওয়াইলুল্লিল মুসাল্লিন। আল্লাজিনাহুম আন সালাতিহিম সাহুন।

অর্থ: জাহান্নামের সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক স্থান তাদের জন্য, যারা তাদের ধর্ম সম্পর্কে উদাস জীবনযাপন করে।’

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর