আপনি পড়ছেন

‘আখেরি চাহার শোম্বা’ ফারসি ভাষার পরিভাষা। আখের মানে শেষ, চাহার অর্থ চার মাস এবং শোম্বা অর্থ বুধবার। ওফাতের অসুস্থতা শুরু হওয়ার পর হুজুর (সা.) সাময়িক সুস্থতা লাভ করেন। কিছু সময় পর আবার হযরত অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এর কয়েকদিন পর তিনি ওফাত লাভ করেন। হুজুরের অসুস্থতা ছিলো নিদারুণ যন্ত্রণার। আয়শা (রা.) বলেন, অসুখে এত বেশি কষ্ট পেতে আমার জীবনে আগে পরে আর কাউকেই দেখিনি।

dowa 1

হুজুরের (সা.) অসুখের শুরু হয় মাথা ব্যথা থেকে। হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একদিন রাতে হুজুর (সা.) কবর জিয়ারতের জন্য বের হলেন। আমিও তাঁর পেছন পেছন গেলাম। আমার সন্দেহ হলো, তিনি বোধহয় আমার হক অন্য কাউকে দিয়ে দেবেন। কিন্তু না, তিনি দীর্ঘ সময় কবরবাসীর জন্য দোয়া করলেন। হুজুর (সা.) যখন ঘরে ফিরে এলেন আমিও ঘরে ফিরে এলাম। আমি চাইছিলাম, তাঁকে অনুসরণ করার বিষয়টি যেনো তিনি বুঝতে না পারেন। কিন্তু আমাকে হাঁপাতে দেখে ঠিকই বুঝে ফেললেন আমি তার পেছন পেছন গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, আয়শা! তোমার সন্দেহ ভুল ছিলো। ঠিক এমন সময়ই হযরতের (সা.) মাথা ব্যথা শুরু হয়।

প্রচন্ড মাথা ব্যথা তার ওপর ভীষণ জর নিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলেন হযরত। তিনি বারবার বলছিলেন, এ আমার শেষ যাত্রার অসুখ। আল্লাহতায়ালা তার নবীদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, তাই তাদেরকে তিনি সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করেন। তবে অন্যসব নবী যত কষ্ট পেয়েছেন আমি তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি কষ্ট পাচ্ছি।

হযরতের (সা.) কষ্ট সবাইকেই কষ্ট দিচ্ছিলো। সবাই ধরেই নিয়েছে এবার আর তিনি সুস্থ হবেন না। কিন্তু সফর মাসের শেষ বুধবার হঠাৎ হযরত (সা.) সুস্থ হয়ে ওঠলেন। সাত কুয়োর পানি দিয়ে গোসল করলেন। কলিজার টুকরো ফাতেমা এবং দুই নাতিকে সঙ্গে করে ভালো খাবার খেলেন। জামাতের সঙ্গে জোহরের সালাত আদায় করলেন। এসব দেখে সাহাবিরা যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। খুশিতে তারা বাগ বাগ হয়ে গেলেন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে আল্লাহর রাস্তায় স্বর্ণ-রূপা-নগদ অর্থ-উট-ভেড়া অকাতরে বিলিয়ে দিতে লাগলেন।

সিরাতবিদরা বলেন, নবীজির (সা.) সুস্থতায় খুশি হয়ে আবু বকর পাঁচ হাজার, ওমর সাত হাজার, আলী তিন হাজার দেরহাম এবং আবদুর রহমান বিন আওফ একশ উট আল্লাহর ওয়াস্তে দান করলেন। অবশ্য বিকেলের দিকেই হযরত আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অল্প কিছুদিন পর তিনি ওফাত লাভ করেন।

নবীজির সুস্থতায় আনন্দিত হয়ে সাহাবীদের অকাতরে দান-সদকা এবং নফল ইবাদতের সুন্নাতটি সে থেকে আজ পর্যন্ত নবীপ্রেমিক সুফিরা জারি রেখেছেন। তাই নবীজির সুস্থতার দিনে দান-খয়রাত এবং নফল ইবাদত এবং শুকরিয়া দিবস হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। এ দিনকে মানুষ সুস্থতার ওসিলা হিসেবে বিভিন্ন নফল ইবাদতে কাটায়। মূলত নবী (সা.) সুস্থ হয়েছেন, এটাই যেনো প্রেমিক হৃদয়ে উৎসবের জোয়ার এনে দেয়।

তবে কেউ কেউ বলেন, নবীজির সুস্থতার দিনটি সফর মাসের শেষ বুধবার ছিলো কি না এ নিয়ে মতভেদ আছে। তাই এদিনকে শোকরিয়ার দিন হিসেবে উদযাপন করা যাবে না। এক্ষেত্রে ওলামায়ে হক্কানিরা বলেন, নবীজির সুস্থতার দিনটি সফর মাসের শেষ বুধবার হওয়ার পক্ষে অনেক দলিল রয়েছে। তবে কেউ কেউ বৃহস্পতিবারের কথাও বলেছেন।

তবে হজুর (সা.) যে সাময়িক সুস্থ হয়েছেন এবং সাহাবিরা আনন্দিত হয়ে দান খয়রাত করেছেন এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর