লোভী মানুষ সম্পর্কে কী বলেছে কোরআন...

সূরা তাকাসুরের প্রথম দুটি আয়াতে বলা হয়েছে,  ‘আলহাকু মুত্তাকাসুর। হাত্তাজুরতুমুল মাকাবির।’ যার অর্থ- বেশি বেশি পাওয়ার লোভ তোমাদেরকে আমৃত্য মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। এই আয়াতগুলো আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, লোভ আমাদেরকে অন্ধ করে ফেলে এবং আমাদেরকে আখেরাতের কথা ভুলে যেতে প্ররোচিত করে।

ছবি - সংগৃহীত

মানুষের চাহিদা কখনোই শেষ হয় না। প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশি পাওয়ার আশায় আমরা মোহাবিষ্ট থাকি। আমরা জানি যে, প্রয়োজনের বেশি খাওয়া, পড়া, বা করা সম্ভব নয়, তবুও আমরা অতিরিক্ত পাওয়ার নেশায় জীবন নষ্ট করে ফেলি।

হযরত আলী (রা.) বলেন, মানুষের লাগামহীন চাহিদার ঘোড়া সম্পর্কে সূরা তাকাসুর নাজিল হওয়ার আগে একটি হাদিস আমরা কোরআনের মতো আওড়াতাম। হাদিসটি হলো, নবীজি (স.) বলতেন, ‘আদম সন্তানের লোভ এক লাগামহীন ঘেড়ার মতো। তাকে যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও দেওয়া হয়, সে বলবে আমার আরেকটি চাই, আরেকটি চাই...। এমনিভাবে তার লোভ বাড়তেই থাকে। একমাত্র কবরের মাটি ছাড়া তার পেট কিছুতেই শান্ত হয় না।’

সূরা আদিয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষ এক ছুটন্ত লোভী ঘেড়ার মতো জীবনযপান করছে। নিজের স্বার্থে সে সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে। জীবনের ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে তার এই নিরন্তর ছুটে চলা।’

এরপর আল্লাহতায়ালা আসল কথাটি বলেন, ইন্নাল ইনসানা লিরাব্বিহি লাকানুদ। যার অর্থ- স্বার্থের পেছনে ছুটে চলা মানুষগুলো অবশ্যই তার প্রভুর প্রতি চরম অকৃতজ্ঞ।

এই আয়াতে আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আমরা স্বার্থপর লোভের বশে দুনিয়ার পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছি।

সূরা তাকাছুরেও ভিন্ন আঙ্গিকে একই কথা বলেছেন আল্লাহ তায়ালা, যখন মানুষের কবরের জীবন শুরু হবে, সত্যিকারভাবে সে দেখতে পাবে নশ্বর এই দুনিয়ার জীবন-সম্পদ-পরিজন কিছুই না, কেউই না তখন সে বুঝতে পারবে কী ভুলটাই না সে করেছে।

সূরা তাকাছুরের শেষ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, লাতারাউন্নাহা আইনাল জাহিম। ছুম্মা লাতারাউন্নাহা আইনার ইয়াকিন। ছুম্মা লাতুস আলুন্না ইয়াওমাইজিন আনিন্নায়িম। যার অর্থ- ‘তখন সে জাহান্নামকে চোখে দেখবে। আর তখনই সে দৃঢ় বিশ্বাস করবে, দুনিয়ার মোহে জীবন শেষ করাটা কত বড় ভুল ছিলো তার। সেদিন তাকে প্রতিটি নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’

কোরআনের আয়াতে আয়াতে পাতায় পাতায় আল্লাহ তায়ালা এভাবে মানুষকে দুনিয়ার মোহ থেকে সতর্ক থাকার উপদেশ দিয়েছেন। বারবার বলেছেন, এই দুনিয়া মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য। এটি আসলে একটি খেলা ঘরের মতো। মৃত্যু ঝড় এসে তোমার এই খেলাঘর গুড়িয়ে দেবে। নিয়ে যাবে আসল ঠিকানার উদ্দেশ্যে।

নিজের লোভকে সংযত করা। পাশবিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করা। তবেই দুনিয়াতে শান্তি এবং আখেরাতে পাওয়া যাবে মুক্তি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দুনিয়ার মেহমুক্ত পরিশুদ্ধ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার তাওফিক দিন। আমিন।