আপনি পড়ছেন

দাওয়াত এবং তাবলিগের কাজ যিনি করেন, তাকে দায়ি এবং মুবাল্লিাগ বলা হয়। দায়ি এবং মুবাল্লিগের অনেক মর্যাদা এবং ফজিলত কোরআন-হাদিসে বলা হয়েছে। দায়ির সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো, দায়ির চেয়ে উত্তম মানুষ, ভালো মানুষ, শ্রেষ্ঠ মানুষ আল্লাহর দুনিয়ার আর কেউ নেই। আল্লাহ বলেন, ওয়া মান আহসানু কাওলাম মিম মান দায়া ইলাল্লাহি ওয়া আমিলা সালিহান ওয়া কালা ইন্নানি মিনাল মুসলিমিন। অর্থ: তার চেয়ে আর কে উত্তম কথা বলে, যে আল্লাহর পথে ডাকে, ভালো কাজ করে এবং বলে আমি একজন মুসলমান। সূরা: হামিম সেজদাহ, আয়াত : ৩৩।

al quaran

এ আয়াতে প্রথম যে কথাটি বলা হয়েছে তা হল- যিনি আল্লাহর পথে ডাকেন তার কথার চেয়ে আর কারো কথা শ্রেষ্ঠ নয়। যিনি সবচেয়ে ভালো কথা বলেন, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কথা বলেন, তিনি যে শ্রেষ্ঠ মানুষ সবচেয়ে ভালো মানুষ হবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কেনো তিনি সবচেয়ে ভালো মানুষ? এ বিষয়ে খুব সূক্ষ্ম কথা বলেছেন সুফিরা। তারা বলেন, মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা, হেদয়াতের পথ দেখানো এটা মূলত আল্লাহ তায়ালারই কাজ।

কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি, আমিই তাকে পথ দেখাবো।’ এই পথ দেখানোর কাজটা আল্লাহর। কিন্তু আল্লাহ তো সরাসরি সামনে এসে বা তার কানে কানে অথবা তার হাত ধরে তাকে হেদয়াতের পথে নিয়ে যাওয়া এ দুনিয়ার পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। তাই আল্লাহর এ কাজ যারা সেচ্ছায় কাঁধে নিয়েছেন, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা সম্মানসূচক ‘শ্রেষ্ঠ মানুষ’ পদমর্যাদা দিয়েছেন।

যেমন আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহও তোমাদের সাহায্য করবেন।’ অর্থাৎ তোমরা মানুষকে আল্লাহর পথে ডেকে আমাকে সাহায্য করো, আমি তোমাদের দুনিয়া-আখেরাতে সব ধরনের সুবর্ণ সুযোগ দিয়ে সাহায্য করব।

কোরআনে এই বাক্যাংশ থেকে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়। এ পৃথিবীর মানুষের কাছে মর্যাদার মাপকাঠি হলো, কার কত টাকা আছে, কার কত ডিগ্রি আছে, কে কত ক্ষমতাবান, কার সৈন্যবাহিনী কত বেশি, কার পেশি শক্তি সবেচেয় বেশি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহপাক বলছেন, ক্ষণস্থায়ী এই পৃথীবিতে তোমরা যে মর্যাদার মাপকাঠি বানিয়ে নিয়েছো তা পুরোটাই ভুল। বরং সম্মান-মর্যাদার মাপকাঠি হওয়া উচিত চিরস্থায়ী জীবন আখেরাতকে কেন্দ্র করে। কারণ, ওটাই মানুষের আসল জীবন। ওখানে সেই সবচেয়ে ক্ষমতাশালী হবে, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে যে এই দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর কাজ করে আল্লাহর পথে চলে তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছেন। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সবচেয়ে সেরা উপায় হলো মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা।

মানুষকে যিনি আল্লাহর পথে ডাকেন এর ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, যিনি হেদায়াতের পথে মানুষকে ডাকেন, তিনি যাদেরকে ডেকেছেন তাদের সব আমল নামার সওয়াব বোনাস হিসেবে দায়ির আমলনামায় যোগ হবে। এতে করে ওই সব মানুষের সওয়াব থেকে কোনো কমবেশি করা হবে না।

আরেকটি হাদিসে রাসুল (রা.) বলেছেন, মানুষ মারা গেলে তার সব ধরনের আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে সে যদি কোনো সদাকায়ে জারিয়া অর্থাৎ চলমান সওয়াবের কাজ রেখে যায় তাহলে তার আমলনামায় সওয়াবের ধারা কেয়ামত পর্যন্ত চলতেই থাকবে। সদকায়ে জারিয়ার  অন্তর্ভুক্ত একটি কাজ হলো, কাউকে সে দ্বীনি এলেম শেখালো বা কোনো আমল দেখিয়ে দিলো অথবা হেদায়াতের পথে নিয়ে আসল, এতে করে ওই ব্যক্তি যত দিন এই আমল করবে এবং যত জনকে এই আমল শেখাবে, হেদায়াতের পথে নিয়ে আসবে সবার আমল নামার সমান সওয়াব প্রথম দায়ির আমলনামায় যোগ হতে থাকবে।

দাওয়াতে কাজে কেউ সারা দিলেই শুধু এ মর্যাদা বা ফজিলত লাভ হবে তা নয়, দাওয়াতে মানুষ সাড়া না দিলেও দায়ি শ্রেষ্ঠা মানুষ হওয়ার মর্যাদা লাভ করবেন। কোরআনের আয়াতে এ কথাই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কেউ যদি সরাসরি দাওয়াত না দিয়ে পরোক্ষ দাওয়াত দেয়, যেমন দায়ির সঙ্গে থাকা কিংবা মানুষকে দায়ির মজলিসে নিয়ে আসা অর্থাৎ এ ধরনের পরোক্ষ কাজ করে তাহলেও সে দায়ির সমান মর্যাদা এবং সমান সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব পেতে থাকবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কোরআনের দায়ি হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর