আপনি পড়ছেন

পথভোলা মানুষকে আল্লাহর পথে আনার কাজই দাওয়াতে তাবলিগের কাজ। এ কাজ কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। এ কাজ মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রেরিত নবী-রাসুলদের কাজ। বিদায় হজের ভাষণে নবীজী (সা.) বলেছেন, আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও। মূলত তখন থেকেই নবীওয়ালা কাজটি উম্মতের জিম্মায় চলে আসে।

iztema 1

সে থেকেই একদল মর্দে মুমিন দুনিয়ার সব ধরনের লোভ-লালসা, আরাম-আয়েস ত্যাগ করে শুধু মাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার লক্ষ্যে দাওয়াতে তাবলিগের মেহনত করে আসছেন। এরই ধারাবহিকতায় ভারতের কৃতি সন্তান মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে দুনিয়া মেহনতি মানুষদের ধরে ধরে দ্বীনি মেহনতের পথে নিয়ে আসেন। কাজটি আল্লাহর কাছে এতই কবুলিয়াত পায় যে, বিশ্বজুড়ে তার এই দাওয়াতি মিশন ছড়িয়ে পড়ে।

যারা নবীওয়ালা কাজের আঞ্জাম দেবেন তাদের একটি আশ্চর্য শক্তির অধিকারী হতে হয়। সেই শক্তিটির নাম হলো ধৈর্যশক্তি। সবর ছাড়া দাওয়াতের মেহনতে সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা তো নেই-ই, উল্টো প্রতি পদক্ষেপে শয়তানের ওয়াসওয়াসার চোরাবালিতে পড়ে গুনাহের গর্তে হারিয়ে যাওয়ার প্রবল ঝুঁকি রয়েছে।

তাই যারা সবরের মত কঠিন গুণটি আয়ত্বে আনতে পারেননি বা পারবেন বলে মনে হয় না, অন্তত সবরের ওপর অবিচল থাকার চর্চা যাদের মধ্যে নেই, দাওয়াতের এই নবীওয়ালা কঠিন কাজটি কোনোভাবেই তাদের জন্য নয়।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘ওয়ামা ইউলাক্কাহা ইল্লাল্লাজিনা সবারু, ওয়ামা ইউলাক্কাহা ইল্লা জুহাজ্জিল আজিম। অর্থ: দাওয়াতের কঠিন কাজের আঞ্জাম তারাই দিতে পারে, যারা চরম ধৈর্যশীল। দাওয়াতের কাজে সফল তারাই হয়, যারা পরম সৌভাগ্যবান।’ সূরা হামিম সেজদাহ, আয়াত ৩৬।

ধৈর্যের অনেক অর্থ আছে, অনেক রূপ আছে। দাওয়াতের কাজ যারা করেন তাদের নূন্যতম এতটুকু ধৈর্য থাকতে হবে যে, কেউ তাদেরকে গালি দিলে জবাবে তারা হাসি দেবে, যে তার পথ আটকে দেবে, সে তার জন্য পথ খুলে দিবে, যে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, তার জন্য যে সে ষড়যন্ত্রের জাল কেটে দেবে, যে তার ঘর ভেঙে দেবে, আশ্রয় ছিনিয়ে নেবে, দায়ি ওই ব্যক্তির ঘর করে দেবে, আশ্রয় খুঁজে দেবে। এইসব সুন্দর আচরণ যে শুধু কাফের-মুশরিকদের সঙ্গেই দেখাতে হবে তা নয়, বরং নিজ সাথী ভাইদের সঙ্গে আরো বেশি করে দেখাতে হবে। নবীজীর (সা.) পুরো জীবন খুঁজলে এমনটিই আমরা দেখতে পাই।

নবীজী (সা.) এই দাওয়াতি আচরণ শিখলেন কোত্থেকে? তিনি শিখেছেন আল্লাহ রাবুল আলামিনের কাছ থেকে। তার উম্মত যেন নবীর মতই মহৎ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে, বিশেষ করে যারা নবীওয়ালা কাজের আঞ্জাম দেবে তাদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলছেন, ‘ইদফা বিল্লাতি হিয়া আহসান। ফাইজাল্লাজি বাইনাকা ওয়া বাইনাহু আদাওয়াতুন কাআন্নাহু ওয়ালিউন হামিম। অর্থ- তোমার সঙ্গে যারা মন্দ আচরণ করে তাদের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো আচরণটি করো। তাহলে দেখবে যে তোমার জানের দুশমন ছিলো সে তোমার জানের দোস্ত হয়ে গেছে।’ সূরা হামিম সেজদাহ : আয়াত ৩৪।

খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করুণ, এখানে বলা হয়নি কোনো কাফের মুশরিকের সঙ্গে তুমি সবচেয়ে ভালো আচরণ করো, বরং বলা হয়েছে- যে ব্যক্তিই তোমার সঙ্গে মন্দ আচরণ করবে, চাই সে মুমিন অথবা কাফের যাই হোক না কেনো- তার সঙ্গে চরমতম ভালো আচরণ করো। তাহলেই সে তোমার সবচেয়ে কাছের হিতাকাংখী-শুভাকাংখী-বন্ধু হয়ে যাবে।

যারা নবীওয়ালা কাজ করেন, তাদের জন্য কোরআনের এ হেদায়াতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আফসোস! আজকের দায়িদের মাঝে সব গুণ থাকলেও এ গুণটির বড় অভাব দেখা যায়। ভালো বুজুর্গি, এলেমের বাহাদুরি, অর্থের বড়াই সবই আমাদের আছে, নেই শুধু ধৈর্যের চর্চাটুকুন। ফলে আমাদের প্রাণের বন্ধুও আজ শত্রু হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ধৈর্যের রঙে রাঙিয়ে দিন। আমিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর