আপনি পড়ছেন

১৪ শাবান দিনগত রাতে পবিত্র শবে বরাত। বিশ্বের মুসলমানদের একটা বড় অংশ দিনটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে থাকেন। মনে করা হয়, এই রাতেই মহান আল্লাহ তা’য়ালা পরবর্তী বছরের জন্য তাঁর বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন। এছাড়া এদিন বান্দা আল্লাহ কাছে তওবা করে মাফ চাইলে তা গ্রহণ করা হয়। সেই মাফ চাওয়া বা তওবা করার গুরুত্ব যেন এবারের শবে বরাতে হাজার গুণ বেড়ে গেছে।

dowaফাইল ছবি

কারণ বিশ্বব্যাপী চলছে মরণাত্মক করোনাভাইরাসের মহামারি। ইতোমধ্যে ভাইরাসটিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৫ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছে ৮৮ হাজারের বেশি। আতঙ্কে ভীত সন্ত্রস্ত গোটা বিশ্ব।

বিশ্বের আলেম-উলামারা বলছেন, দুনিয়ার মানুষের নানা পাপাচার এবং আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনের কারণে শাস্তিস্বরূপ অথবা পরীক্ষা হিসেবে আল্লাহ তা’য়ালা এই মহামারি পাঠিয়েছেন। আর এ থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো- সচেতনতার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করা। বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করা। আল্লাহর কাছে এই ভাইরাসের কবল থেকে পানাহ চাওয়া। তাহলে আল্লাহ দয়া-পরবশ হয়ে এই মুসিবত তুলে নিতে পারেন।

সুতরাং এই প্রেক্ষাপটে এবারের শবে বরাতে বেশি বেশি তওবা ও আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া উচিত। সেইসঙ্গে পরম ক্ষমাশীল আল্লাহর কাছে এই আসমানি বালা থেকে পরিত্রাণের জন্য দোয়া করা দরকার। 

বান্দার পাপ হয়ে গেলে, তওবার নিয়তে দুই রাকাত নামাজ আদায় করার পর নিজের ভুল স্বীকার করে বলবে, হে আল্লাহ আমি আর গোনাহ করব না, এই গোনাহর জন্য আমি অনুতপ্ত, এখন থেকে আমি এই গোনাহ ছেড়ে দিয়েছি, ভবিষ্যতে আর গোনাহ করব না- এটাই হলো খাঁটি তওবা।

আমি সুদ খেয়েছি, ঘুষ খেয়েছি, মিথ্যা বলেছি, এই অন্যায় করেছি, হে আল্লাহ এসবের জন্য আমি অনুতপ্ত। আমি লজ্জিত। এভাবেই আল্লাহর দরবারে কেঁদে-কেটে খাঁটি তওবা করতে হয়। কোরআনে একেই ‘তওবাতুন নাসুহা’ বলেছে।

শবে বরাতে কবর জিয়ারতের নির্দেশনা পাওয়া যায় বিভিন্ন হাদিসের গ্রন্থে। রাসূল সা. এই রাতে কবর জিয়ারত করতেন, এমন বর্ণনা আছে। তাই এই রাতে মরহুম আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারতের বিশেষ বরকত আছে। কিন্তু দল বেঁধে, নারী- পুরুষ নির্বিশেষে কবর জিয়ারতে যাওয়া বা সম্মেলনের মতো কিছু করার কোনো বর্ণনা হাদিসে নেই। সুতরাং আজ রাতে এ ধরনের কোনো আয়োজন করা ইসলামসম্মত নয়।

তাছাড়া এ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও ধর্ম মন্ত্রণালয় মসজিদ, কবর জিয়ারত ও মাজারে না গিয়ে ঘরে বসে ইবাদত করার অনুরোধ জানিয়েছে। সেইসঙ্গে করোনাভাইরাসের কবল থেকে মুক্তি চেয়ে আল্লাহর দরবারে বিশেষ মোনাজাত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কবরস্থান ও মাজারের গেট বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

শবেবরাতে পটকা ফাটিয়ে উৎসব করা, ভালো খাবার- দাবার খাওয়া; এ ধরনের কোনো কিছুর প্রমাণ নেই হাদিসে। সাহাবা রা. গণও এ ধরনের কোনো রীতি পালন করেননি। যদিও দেশে এ রকম বহু ব্যাপার প্রচলিত আছে।

আলেমগণ বলেন, ভালো খাবার খাওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু শবে বরাতে ভালো খাবার খেতেই হবে, এই ধরনের বিশ্বাস বা এটিকে ইবাদত মনে করা ত্রুটিপূর্ণ কাজ। আলেমগণ এ ধরনের তৎপরতা থেকে উম্মতকে সাবধান করেছেন।

তবে শুধু শবে বরাতের রাত নয়, বরং পুরো শাবান মাসজুড়ে রসুল স. বেশি বেশি রোজা রাখা ও দান খয়রাত করে রমজানে প্রস্তুতি নিতেন। আল্লাহর রসুল বলেছেন, ‘রজব মাস আল্লাহর মাস, শাবান মাস আমার মাস আর রমজান আমার উম্মতের মাস।’  

হযরত আয়শা রা. –এর বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাসূল সা. পুরো শাবান মাসেই অধিকহারে ইবাদত করতেন। রমজান মাসের পর শাবান মাসেই রাসূল সা. বেশি রোজা রাখতেন বলেও হাদিসের গ্রন্থে উল্লেখ আছে। শাবান মাসে রোজা রাখা তাই বিশেষভাবে বরকতপূর্ণ।

অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাতে ইবাদত করা মঙ্গলজনক। কিন্তু এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কোনো অবকাশ নেই। আলেম- উলামাগণ বাড়াবাড়ি করা থেকে উম্মতকে সব সময় সতর্ক করে এসেছেন।

তাই আসুন, এবারের শবে বরাতে আল্লাহর কাছে আমাদের মস্তক আরও বেশি করে অবনত করি। পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ করে বলি, হে আল্লাহ আপনি ছাড়া মাফ করার কেউ নেই, বিপদ থেকে উদ্ধার করার কেউ নেই। বিশ্বব্যাপী চলমান মহামারি থেকে একমাত্র আপনিই মানবসভ্যতাকে উদ্ধার করতে পারেন। আমাদের পাহাড়সম পাপ ক্ষমা করে দিয়ে এই মহামারি থেকে উদ্ধার করুন। সেইসঙ্গে মৃত্যু পর্যন্ত যেন আপনার বিধান মোতাবেক জীবনযাপন করতে পারি সে তওফিক দিন। 

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর