আপনি পড়ছেন

হালাল পথে উপার্জন করে জীবন পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। যুগে যুগে আম্বিয়া আলাইহিসসালাম ও আল্লাহর প্রিয় বান্দারা নিজ হাতে উপার্জন করা অর্থ দিয়ে জীবন পরিচালনা করেছেন। সিরাত ও হাদিস পড়ে জানা যায়, প্রত্যেক নবী-রসুলই শ্রমজীবী ও কর্মঠ মানুষ ছিলেন। কেউ পরজীবী কিংবা কর্মবিমুখ ছিলেন না। পরনির্ভর জীবনকে তারা ঘৃণার চোখে দেখতেন।

farmer

হজরত মিকদাদ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী (সা.) বলেছেন, ‘নিজ হাতে উপার্জন করা খাদ্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ খাদ্য আর কিছুই হয় না। আর আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। বুখারি, হাদিস নম্বর ২০৭২।

হাদিস শরিফে আরো বর্ণিত আছে, হজরত মুসা (আ.) হজরত শোয়াইব (আ.) এর বাড়িতে রাখালের দায়িত্ব পালন করেছেন। হজরত দাউদ (আ.) লোহা পুড়িয়ে বর্ম ও অস্ত্র বানাতেন। হযরত আদম (আ.) চাষাবাদ করতেন। আর আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) রাখালি ও ব্যবসা করতেন। মানুষের বাড়িতে কখনো কখনো কাজও করেছেন বলে সিরাতের কিতাবে পাওয়া যায়।

ইমাম বাইহাকি (রহ.) বর্ণনা করেন, হজরত ওমর (রা.) একদিন একটি গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি লক্ষ করলেন, ওই গোত্রের লোকজন কোনো কাজ-কর্ম করছে না। অলস শুয়ে বসে দিনপার করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাজ করছ না কেন? তাদের পক্ষ থেকে একজন বলল, আমরা আল্লাহর ওপর তায়াক্কুল করে বসে আছি।

এ কথা শুনে ওমর (রা.) রেগে গেলেন। তিনি বললেন, তোমরা কীভাবে তায়াক্কুল করছ? তায়াক্কুল তো করতে হয় জমিনে ফসল বোনার পর। বাইহাকি শরিফ।

শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, কেয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে থাকব। তাদের একজন হলো- যে কোনো ব্যক্তিকে মজুর নিয়োগ করলো এবং তার থেকে পুরোপুরি কাজ আদায় করলো অথচ তার প্রাপ্য পারিশ্রমিক দিলো না। বুখারি, হাদিস নম্বর ২২৭০।

শুধু তাই নয়, শ্রমিকের সঙ্গে আচার-আচরণ সম্পর্কেও ইসলাম সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। বিদায় হজের ভাষণে রসুল (সা.) বলেছেন, শ্রমিকের সঙ্গে উত্তম আচরণ করবে। তোমরা যা খাবে তাদেরকে তাই খাওয়াবে। তোমরা যে মানের পোশাক পড়বে তাদেরকেও তাই পড়াবে। কেননা তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- আমাদের সমাজের চিত্র একেবারে ভিন্ন। শ্রমিককে দিয়ে দিনভর কাজ করিয়ে নিলেও ন্যায্য দাম দিতে মালিকপক্ষ পুরোপুরি অনিচ্ছুক। মজুরি দেওয়া নিয়ে টাল-বাহানা করা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলাম কখনোই এটাকে সহজভাবে দেখেনি। আসুন, শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় আমরা সজাগ হই। তাদের ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দেই। তাদের সঙ্গে মিষ্টি ব্যবহার করি।

লেখক: শিক্ষার্থী, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর