আপনি পড়ছেন

আরবি আজান শব্দের অর্থ ডাকা, আহ্বান করা ইত্যাদি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে যেসব নির্ধারিত বাক্যে মুসল্লিদের নামাজের দিকে, কল্যাণের দিকে ডাকা হয় তাকে আজান বলে। যিনি আজান দেন তাকে বলা হয় মুয়াজ্জিন। মুয়াজ্জিনের মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের ঘাড় সবার উপরে থাকবে। অন্য সবাই মুয়াজ্জিনের এমন মর্যাদা দেখে ঈর্ষার নজরে তাকাবে।’

azan

শরিয়তের অন্য সব বিষয়ের মতই আজানেরও নির্দিষ্ট নিয়ম এবং পদ্ধতি রয়েছে। ইচ্ছেমতো আজান দেওয়া কিংবা আজানে কোনো শব্দ বা বাক্য যোগ করা অথবা সময়ের আগে আজান দিয়ে ফেলা- এ ধরনের খামখেয়ালি আচরণ শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আসুন- আজান সম্পর্কে শরিয়তে বলা পাঁচটি জরুরি বিধি-নিষেধ জেনে নিই।

১. আজানের শুরুতে দরুদ শরিফ পড়া খেলাফে সুন্নাত

সন্দেহ নেই নফল ইবাদতসমূহের মধ্যে দরুদ শরিফের মর্যাদা অনন্য। বেশি বেশি দরুদ শরিফ পড়লে রাসুল (সা.) এর সুপারিশ ভাগ্যে জুটবে। না পড়লে রাসুলের সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তাই বলে কি যখন তখন যেখানে সেখানে দরুদ শরিফ পড়তে হবে? ইসলামে আবেগেরে স্থান নেই।

শরিয়ত যেখানে দরুদ শরিফ পড়তে বলেনি সেখানে দরুদ শরিফ পড়া সুন্নত নয় বরং খেলাফে সুন্নাত। উপমহাদেশের অনেক মসজিদেই আজানের আগে দরুদ শরিফ পড়ার প্রচলন দেখা যায়। এ বিষয়ে আলেমদের ফতোয়া হলো, রাসুল (সা.), সাহাবি ও তাবেয়িদের যুগে আজানের আগে দরুদ শরিফ পড়ার প্রচলন ছিল না, তাই এটি একটি সুন্নাহবহির্ভূত আমল। সুন্নাহপ্রেমিক কোনো উম্মত এমনটি করতে পারে না।

২. আজানের ভেতর অতিরিক্ত শব্দ বা বাক্য সংযোজন করাও সুন্নাতের খেলাফ

একইভাবে আজানের ভেতর নতুন কোনো শব্দ যোগ করা কিংবা কোন শব্দ ছেড়ে দেওয়াও সুন্নাহ সম্মত নয়। রাসুল (সা.) এর সময় থেকে যেভাবে আজান প্রচার হয়ে আসছে ঠিক সেভাবেই কেয়ামত পর্যন্ত আজান দিয়ে যেতে হবে। এর ব্যতিক্রম করা সুন্নতের খেলাফ।

গত শতকের শেষ দিকে পাকিস্তানের কোনো কোনো মসজিদে আজানের শেষ বাক্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাথে ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ অতিরিক্ত যোগ করা হতো। পাকিস্তানের মুফতিরা এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে বলেন, এসব সুস্পষ্ট সুন্নাহবিরোধী আমল।

islam 1

৩. ভুলে কোন শব্দ বা বাক্য বাদ পড়ে গেলে কী করবেন

আজান দেওয়ার সময় ভুলবশত কোনো শব্দ বা বাক্য বলা না হলে দ্বিতীয়বার শুদ্ধভাবে আজান দিতে হবে। তবে ফজরের আজানে ‘আসসালাতু খাইরুমমিনান নাওম’ বাক্যটি বাদ পড়ে গেলে দ্বিতীয়বার আজান দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ভুল আজানে জামাত করলে জামাতের কোনো অসুবিধা হবে না।

৪. বিপদ-মহামারির সময় আজান দেওয়া জায়েজ

বিখ্যাত ফতোয়ার গ্রন্থ বাহরুর রায়েকের টিকায় আল্লামা খাইরুদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন, আমি শাফেয়ি মাজহাবের গ্রন্থে দেখেছি, নামাজ ছাড়াও আরো কিছু অনুষ্ঠানে আজান দেওয়া সুন্নাত। যেমন নবজাতকের কানে, দুশ্চিন্তার সময়, মহামারি দেখা দিলে, দুষ্টু লোক কিংবা হিংস্র জানোয়ারের সামনে পড়লে, সৈন্যদের আক্রমণের সময় এবং কোথাও আগুন লাগলে।

বিপদের সময় আজান দেওয়ার বিষয়ে হানাফি মাজহাবের গ্রন্থগুলোতে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। আধুনিক হানাফি আলেমরা এটিকে নিষেধও মনে করেন না, আবার কাউকে উৎসাহও দেন না।

৫. জামাতের জন্য আজান শর্ত

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ এবং জুমার নামাজের জামাতের জন্য আজান শর্ত। তবে কোথাও যদি আজান ছাড়াই জামাত হয়ে যায় তবে দ্বিতীয়বার আর জামাত করার প্রয়োজন নেই। হানাফি মাজহাবে কোনো নফল নামাজের জন্য আজান দেওয়া জায়েজ নেই। তবে অন্যান্য মাজহাবে তাহাজ্জুদসহ বিভিন্ন নফল নামাজের জন্য আজান দেওয়ার কথা বলা আছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর