আপনি পড়ছেন

মহানবী (সা.) নিজ স্বার্থে কোনো প্রতিশোধ নিতেন না বরং শত্রু এবং বিধর্মীদের সঙ্গেও উত্তম ব্যবহার করেছেন। তার উম্মতকেও এই নির্দেশই দিয়েছেন যে, তারা যেন ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠি নির্বিশেষে সবার সঙ্গে উত্তম আচরণ করেন। আসমা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মহানবীর (সা.) যুগে আমার অমুসলিম মা (আবু বকরের স্ত্রী) আমার কাছে এলেন। আমি মহানবীকে (সা.) জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবো? তিনি বললেন, হ্যাঁ।’ (বোখারি)।

draud on prophet

হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক বেদুঈন মসজিদে পেশাব করলো। লোকেরা উঠে তাকে মারার জন্য উদ্যত হলেন। মহানবী (সা.) বললেন, তার পেশাব বন্ধ করো না। তারপর তিনি (সা.) এক বালাতি পানি আনলেন এবং পেশাবের ওপর ঢেলে দিলেন।’ (বোখারি, কিতাবুল আদব)।

মহানবীর (সা.) আদর্শ এতটাই অতুলনীয় ছিল যে, তিনি ইহুদীর মরদেহকেও সম্মান দেখিয়েছেন। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, একবার এক ইহুদীর মরদেহ বিশ্বনবীর (সা.) সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে গেলেন। পাশ থেকে হজরত জাবের (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটি তো ইহুদীর মরদেহ। বিশ্বনবী (সা.) উত্তর দিয়েছিলেন, সে কি মানুষ নয়? (বোখারি)। 

হজরত সুফিয়ান ইবনে সালিম (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মনে রেখো, যদি কোনো মুসলমান অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষ অবলম্বন করবো।’ (আবু দাউদ)।

হজরত আবু বাকারা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ)। এছাড়া মহানবী (সা.) এটিও বলেছেন, ‘তোমরা মজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থেকো, যদিও সে কাফির হয়। তার মাঝখানে আর আল্লাহর মাঝখানে কোনো পর্দা নেই।’ (মুসনাদে আহমদ)।

first tenth of ramadan

মানব সেবায় আত্মনিয়োগকারী ব্যক্তির প্রতিও মহানবী (সা.) শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন। একবার তাঈ গোত্রের লোকেরা মহানবীর (সা.) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। এতে তাদের কিছু সংখ্যক লোক বন্দী হয়। তাদের মধ্যে আরবের প্রসিদ্ধ দাতা হাতেমের এক মেয়েও ছিল। এ কথা জানতে পেরে মহানবী (সা.) তার সঙ্গে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করলেন এবং তার অনুরোধে অন্যদেরকেও ক্ষমা করে দিলেন।’ (সীরাত হালবিয়া)।

যখন মক্কার লোকেরা মহানবীর (সা.) কোনো কথাই শুনতে চাচ্ছিল না, তখন তিনি তায়েফের দিকে দৃষ্টি দিলেন। তায়েফে পৌঁছালে সেখানকার নেতৃবৃন্দ তার সাথে দেখা করার জন্য আসতে লাগলো। কিন্তু কেউই সত্য গ্রহণ করতে রাজী হলো না। তারা খোদার বাণীর প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করতে লাগলো। শুধু তাই নয়, নির্মমভাবে মহানবীর (সা.) ওপর পাথর ছুঁড়তে থাকে তারা। রাসূলের (সা.) দুটি পা রক্তাক্ত হয়ে উঠলো।

লোকগুলো যখন তাকে ধাওয়া করছিল, তখন তিনি এই ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছিলেন যে, আল্লাহর গজব না আবার তাদের ওপর পড়ে। তিনি আকাশের দিকে মুখ তুলে দেখছিলেন এবং প্রার্থনা করছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি এদেরকে ক্ষমা করে দাও! কেননা এরা জানে না, এরা কি করছে।’

একবার ভেবে দেখুন, আঘাতে জর্জরিত, লোকদের তাড়া খেয়ে তার শরীরে চলার মতো আর কোনো শক্তি ছিল না। এত কিছুর পরও তিনি তাদের অভিশাপ দেননি বরং দোয়া করেছেন। এমনই ছিলো শ্রেষ্ঠ নবীর আদর্শ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর