আপনি পড়ছেন

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনে শূকরের চর্বির উপাদান ব্যবহার করার কারণে বিশ্বজুড়ে মুসলিম বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই ভ্যাকসিন হালাল নাকি হারাম- এ সম্পর্কে টুয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশবরেণ্য তিন আলেম ও শিক্ষাবিদ।

coronavirus vaccines

চিকিৎসায় হারাম বস্তু ব্যবহার করা জায়েজ
ড. সাইয়েদ আব্দুল্লাহ আল মারুফ
অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

করোনার ভ্যাকসিন অথবা অন্য কোনো ওষুধে যদি শূকরের চর্বি ব্যবহার করা হয় এবং বিকল্প কোনো ওষুধ পাওয়া না যায়, তাহলে জীবন বাঁচানোর জন্য হারাম উপাদানে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করা জায়েজ। এ ব্যাপারে সূরা বাকারার ১৭৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘একান্ত নিরুপায় অবস্থায় গোনাহ করার ইচ্ছা ছাড়া শুধু জীবন বাঁচানোর জন্য হারাম খাদ্য খেলে কোনো অপরাধ নেই।’

সূরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘গোনাহ করার ইচ্ছে ছাড়া কেউ যদি জীবন বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে হারাম খায়, তার জেনে রাখা উচিত আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ এ দুটো আয়াত প্রমাণ করে জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনমতো হারাম খেলে কোনো গোনাহ হবে না। জীবন বাঁচানোর জন্য হারাম খাওয়া যদি জায়েজ হয়, তাহলে শূকরের চর্বি মিশ্রিত ভ্যাকসিনও ব্যবহার করা জায়েজ হবে।

হারাম বস্তুতে আল্লাহ শেফা রাখেননি
অধ্যাপক আবুল কাশেম গাজী
প্রধান মুফাসসির, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা

বুলুগুল মারামের কিতাবুল হুদুদে আছে, উম্মে সালামা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তাতে রোগমুক্তি নেই।’ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য শূকরের গোস্ত হারাম করা হয়েছে।’ শূকরের পুরোটাই হারাম। একদল আলেমের মতে, চিকিৎসায় হারাম উপাদান ব্যবহার করা শরিয়ত অনুমোদিত নয়।

coronavirus vaccine

আরেকদল আলেম বলেছেন, জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে হারাম ব্যবহার করা জায়েজ। হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ এবং জুবায়ের ইবনে আওয়াম (রা.) চর্মরোগে আক্রান্ত হলে রাসুল (সা.) তাদের রেশমি পোষাক পড়ার অনুমিত দিয়েছিলেন। এ থেকে বোঝা যায়, প্রয়োজনবশত হারাম বস্তু ব্যবহার করা জায়েজ।

হারামের বৈশিষ্ট্য দূর হয়ে গেলে হালাল হতে পারে
শাইখ মুহাম্মাদ জামাল উদ্দিন
প্রতিষ্ঠাতা, জামালি তা’লিমুল কুরআন ফাউন্ডেশন এবং আবিষ্কারক, ২৪ ঘণ্টায় কোরআন শিক্ষা পদ্ধতি

একদল আধুনিক ইসলামি গবেষকের মতে, প্রক্রিয়াজাত করার পর জেলাটিনের ভেতর শূকরের বৈশিষ্ট্য থাকে না। এ থেকে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করা হারাম হবে না। হালাল প্রাণীর যেমন সবকিছুই হালাল নয়। তেমনি হারাম প্রাণীরও সবকিছু হারাম নয়। যেমন গরুর পেশাব-পায়খানা হারাম। কিন্তু গরুর গোবর যদি শুকিয়ে যায়, তাহলে তা পবিত্র হয়ে যায়।

একবার একটি মৃত ছাগল দেখে রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা এর চামড়া শোধন করে ব্যবহার করো। সাহাবিরা বলল, ওটা তো মরে গেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, মরা ছাগল খাওয়া হারাম, কিন্তু ব্যবহার করা তো হারাম নয়। (বুখারি, হাদিস নম্বর ১৪৯২; মুসলিম, হাদিস নম্বর ৩৬৩)।

বুখারির অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘উম্মুল মো’মিনিন সওদা (রা.) বলেন, ‘একটি ছাগল মরে গেলে আমরা তার চামড়া দিয়ে মশক বানিয়ে ব্যবহার করি এবং তাতে খেজুরের শরবত পান করি।’

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর