আপনি পড়ছেন

যিনি জীবনের সহজ ও জটিল পরিস্থিতি বিবেচনা করে ধর্মের আলোকে উপযুক্ত সমাধান দিয়ে থাকেন তাকে মুফতি বলা হয়। প্রতিটি ব্যক্তির জীবন-পরিস্থিতি এক হবে না এটাই স্বাভাবিক। এ কারণে দেখা যায়, একই সমস্যার সমাধান ভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) ভিন্নভাবে সমাধান দিয়েছেন।

taqi usmani

মানুষের জীবনের বিভিন্ন সমস্যার গভীর বোধ থেকেই এ ধরনের প্রাজ্ঞতা জন্মে। আর রাসুল (সা.) ছিলেন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ প্রজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

কয়েকটি হাদিস পড়ে কিংবা হাদিস শাস্ত্রের ওপর অগাধ পান্ডিত্য অর্জন করেও নিজেকে মুফতি বলে প্রচার করা বা মানুষের জীবন সমস্যার ধর্মীয় সমাধান দেওয়া সাহাবিদের যুগ থেকেই অপছন্দের ব্যাপার ছিলো। সাহাবি (রা.)-তাবেয়িদের যুগে ফতোয়া দেওয়ার জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ মুফতি নির্ধারিত ছিলো।

এমনও হয়েছে, বড় বড় সাহাবিরা সমকালীন তাবেয়িদের কাছে ফতোয়া জানতে চাইতেন। বড় বড় হাদিসবিশেষজ্ঞরা ফতোয়া দিতেন না, তারা মুফতি ছিলেন না এ জন্য।

পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম মুফতি শফি (রহ.) এর ছেলে মুফতি তাকি উসমানি বলেন, আমার পিতা মোট আশি হাজার মাসআলা নিজ হাতে লিখেছেন। শেষ বয়সে তিনি একটি ইফতা মাদরাসা খুলেন। সে মাদরাসায় তিন বছর ইলমে ফিকহের ওপর অর্থাৎ মুফতি হওয়ার জন্য উচ্চতর পাঠ দেওয়া হতো।

ছাত্ররা যখন এখান থেকে পাঠ শেষ করতেন তখন বাবা কাউকে ‘মুফতি’ হওয়ার সার্টিফিকেট দিতেন না। বাবা লিখে দিতেন, এই ছেলে আমার কাছে তিন বছর ইফতা পড়েছে। বাবা সবসময় বলতেন, ইফতা পড়লেই মুফতি হওয়া যায় না। ফতোয়া দেওয়া যায় না।

taqi usmani2

মুফতি তাকি উসমানি বলেন, তখন আমি বয়সে তরুণ। একবার একজন ফোন করে একটা সহজ মাসআলা জানতে চাইলেন। এ মাসআলা আমি বহুবার বাবার মুখে শুনেছি। আমি বাবাকে জিজ্ঞেস না করেই বাবার থেকে শোনা উত্তরটি বলে দিই।

পরবর্তী বাবাকে ব্যাপারটা জানাই। তিনি শুনে ভীষণ রাগ করলেন। বললেল, তোমাকে তো আমি ফতোয়া দেওয়ার অনুমতি দিইনি। তাছাড়া সব মানুষের পরিস্থিতি কি এক? এই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে তার অবস্থা বুঝে তারপর ফতোয়া দিতে হতো। কাজটি তুমি ঠিক করোনি।

মুফতি তাকি উসমানি বলেন, এরপর আমি ত্রিশ বছর বাবার সঙ্গে ছিলাম। কখনো বাবাকে না দেখিয়ে কোনো ফতোয়া দিইনি।

একবার বিখ্যাত হাদিস বিশেষজ্ঞ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহকে আমি জিজ্ঞেস করি, আমাদের অঞ্চলের আলেমদের ব্যাপারে আপনার ধারণা কী? তিনি হেসে বললেন, ওখানের সবাই মুফতি!

তাকি উসমানি বলেন, ইফতা পড়লেই কেউ মুফতি হয় না, নামের পাশে মুফতি লেখাও ঠিক নয়। দীর্ঘ সময় বিজ্ঞ মুফতির সংস্পর্শে থেকে ফতোয়া দেওয়ার পদ্ধতি শিখে তবে ফতোয়া দেওয়া উচিত।

ইমাম মালেক (রহ.)কে যখন কেউ কোনো ফতোয়া জিজ্ঞেস করত, তিনি বলতেন, আমি জানি না। এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় আছে। আব্বাকে দেখেছি, কোনো কোনো ছাত্রকে ছয় মাসেই মুফতি ঘোষণা দিতেন। আবার অনেককে ছয় বছরেও দিতেন না।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর