ভার্চুয়াল জগত: যেখানে তর্ক ডেকে আনে বিপদ

নিজের মতামত দিয়ে কোন পোষ্ট বা লিংক শেয়ার করেছেন। সহমত কিংবা দ্বিমত হয়ে এতে কমেন্ট করেন অনেকেই। এভাবেই যে কেউ নিজ মতামত দিয়ে কমেন্ট বক্স ভরিয়ে তুলে। তর্ক-বিতর্কের মধ্যে কখনো কখনো উত্তপ্ত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। একজন আরেকজনকে অপমানিত করার সুযোগটিও ছাড়েন না এতে। অথচ অনেকেই ভুলে যান মানসিক সুস্থতা ও বিষন্নতা দূর করতেই ব্যবহার কার হয় ভার্চুয়াল জগত, সমস্যা বাড়িয়ে দিতে নয়।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর গবেষণায় দেখা গেছে, কোন লেখা (স্ট্যাটাস, পোস্টে) ও মানুষের সামনাসামনি তর্কের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। দুই জায়গায় মানুষ দু'ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। যুদ্ধ, দেশ বা সঙ্গিত যাই হোক না কেন ভিন্নমত পোষণকারীর বক্তব্য সামনাসামনি এক রকম আবার লেখার মাধ্যমে উপস্থাপন করলে বিষয়টির হতে পারে আলাদা অর্থ। তিনশো লিখিত কমেন্টস, ভিডিও ও মৌখিক আলাপ শুনে এমনটাই মতামত দিয়েছেন গবেষকরা।

একই সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের ন্যাশনাল সেন্টারের গবেষণা বলছে, ভার্চুয়াল জগতের নেতিবাচক বিষয়গুলো বাস্তব জগতের মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলে। এর মাধ্যমে বিষন্নতা, উদ্বেগ, অনিদ্রা, খাদ্যে অনীহা থেকে শুরু করে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুধু এই কারণেই আত্মহত্যার প্রবণতা ১৯৯৯ সালের তুলনায় ২৫% বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভার্চুয়াল জগত পুরনো বন্ধু ও আত্মীয়দের সাথে নতুনভাবে যোগাযোগের রাস্তা খুলে দিলেও সেখানে পরশ্রীকাতরতা ও বিষন্নতার মাত্রাই বরং দিন দিন বেড়ে চলছে।

কাউকে নিজের মতে আনা বা নিজের মতামতটি বুঝিয়ে বলার জন্য কমেন্টের পর কমেন্ট লিখতে থাকা আদৌ কোন সমাধান তো আনেই না বরং সম্পর্কে তিক্ততা এনে দেয়। আর তিক্ততার পাশাপাশি বাস্তব জীবনে কখনো তা সম্পর্ক নষ্টের কারণও হয়ে উঠে।

তাই পোষ্টে নেতিবাচক মন্তব্য এসে পরিবেশ বিষিয়ে ওঠার আগেই নিজের মতামতটি বুঝিয়ে বলতে অপরপ্রান্তের মানুষটিকে কফির দাওয়াত দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এক টেবিলে বসে হৃদ্যতা যেমন বাড়বে তেমনি দুরত্বও কমে আসবে। নিদেন পক্ষে ফোনটি হাতে নিয়ে কল করে কথা বললেও বিষয়টি সুরহা হতে পরে। এতে ভার্চুয়াল জগত সুন্দর থাকবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।