করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না কিছুতেই। মার্চের ১৯ তারিখ সকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় নয় হাজার। সারা পৃথিবীতে এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ। সময় যতো যাচ্ছে, এই মহামারী ততো বেশি ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীময়। এর মধ্যে বাঁচার উপায় খুঁজছে মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য গবেষকগণ এমন কিছু উপায়ের কথা বলছেন, যা মেনে চললে এই ভাইরাসের সংক্রমণ একটু হলেও ঠেকানো যাবে। সোশ্যাল ডিসট্যান্স বা সামাজিক দূরত্ব এর মধ্যে একটি বিষয়। কিন্তু বিষয়টি আসলে কী?

maintain social distance in the time of coronavirus

সামাজিক দূরত্ব এমন একটি ব্যাপার যা আসলে আমাদের হেলথ কেয়ার বা স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতির মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বিষয়টি মেনে চলতে হবে নিজেদের উদ্যোগে, নিজেদের চেষ্টায়। তাতে সমাজের বেশির ভাগ মানুষের ঝুঁকি কমে আসবে।

সামাজিক দূরত্ব হলো অন্য যে কোনো মানুষ থেকে অন্তত ছয় ফুটের দূরত্ব নিশ্চিত করে কথাবার্তা বা অন্য যে কোনো কাজ করা এবং যতোটা সম্ভব অপ্রয়োজনীয় বাইরে ঘোরাঘুরি বাদ দেওয়া। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই কাজ অত্যন্ত কঠিন হলেও, আগামী কয়েক সপ্তাহ এটি মেনে চললে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে আপনি নিজেকে এবং অন্যকে বাঁচাতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৫০-এর বেশি লোক। এই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ১০ জনের বেশি মানুষের একত্র অবস্থানে নিরুৎসাহিত করেছে। যাতে একজন আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে অন্য জন্য ভাইরাস না ছড়ায়। একই নির্দেশনা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও দেওয়া হতে পারে।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কেনো জরুরি তা বোঝা যায় এই তথ্যেই যে- সাধারণ ফ্লুর চেয়ে করোনা ভাইরাস দুই তৃতীয়াংশ বেশি সংক্রামক। একবার আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে গেলে আপনার জন্য এই ভাইরাসকে ফাঁকি দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বয়স্ক লোকদের মৃত্যুর হার বেশি। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে কম বয়সীদের মৃত্যু হচ্ছে না। দিন দুয়েক আগে ২১ বছর বয়সী একজন স্প্যানিশ কোচের মৃত্যুর খবর প্রমাণ করে যে করোনায় কম বয়সীদেরও মারাত্মক ঝুঁকি আছে।

সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব কী?

সামাজিক দূরত্ব হলো সমাজে যে মানুষদের সাথে আপনি বসবাস করেন তাদের সাথে যে একটা নির্দিষ্ট শারীরীক দূরত্ব বজায় রাখা। কারণ করোনা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় এবং এই কারণেই বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলাধুলার প্রতিযোগিতা, সমুদ্র সৈকতে জমায়েত স্থগিত করেছে। অন্যান্য দেশেও এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

home quarantine during coronavirus

একই সাথে বাসা বাড়িতে একা থাকাও এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে রেস্টুরেন্ট, বার, ক্যাফেতে যাওয়া বন্ধ করাও জরুরি। এতে একটু হলেও ভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা কমে যাবে।

কাদের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন?

করোনা ভাইরাসকে মহামারী ঘোষণা করা হয়েছে এবং সারা বিশ্ব এই ভাইরাসের সংক্রমণে থমকে গেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিটি মানুষের জন্য সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রাখা জরুরি। বারবার এই কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, করোনা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়।

সামাজিক দূরত্ব, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন; কোনটা কী?

সামাজিত দূরত্ব বিষয়টি নিশ্চয় পরিষ্কার হয়েছে। আইসোলেশন হলো ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে বাইরের পৃথিবীর সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া। এটি সাধারণত সুস্থ্য মানুষদের জন্য ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া। আর কোয়ারেন্টিন হলো করোনা ভাইরাসের হালকা উপসর্গ যাদের দেখা দিয়েছে তাদের অন্য কারো সঙ্গরোধ করার পদ্ধতি। কিংবা যারা এমন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন, যেখানে ভাইরাসে আক্রান্ত লোকজন আছে, সুতরাং ভ্রমণকারী মনে করছেন তিনিও ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন; এই পরিস্থিতিতে তার যে একান্ত বসবাস, সেটাই কোয়ারেন্টিন।

কারো সাথেই কি দেখা করা যাবে না?

এই ক্ষেত্রে বলা যায় ‘কমই বেশি’; অর্থাৎ কম দেখাটাই বেশি করতে হবে। পরিবারের লোকজনের বাইরে অন্য কারো সাথে দেখা করা যতো কম করা যাবে, ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও ততোটাই কমে যাবে। এই সময়ে একান্ত দেখা করার প্রয়োজন হলে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করুন। যেমন স্কাইপি, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার, ফেসটাইম ইত্যাদি।

বাসার বাইরে কি একদম যাওয়া যাবে না?

এই প্রশ্ন যাদের মনে আছে, তাদের জন্য উত্তর হলো- বিষয়টি দেশ, শহর ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। যেমন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ১৭ মার্চ থেকে তিন সপ্তাহ এই শহরের মানুষদের বাসার বাইরে যেতে আইন করে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা বা বাংলাদেশের কোনো শহরে এখনো এই ধরনের কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি, তবে শিগগিরই নির্দেশনা আসতে পারে।

stay safe during coronavirus temp check

তারপরও আপাতত যতো কম ঘরের বাইরে থাকা যায়, ততো ভালো। তারপরও একান্ত প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বাইরে যেতে হবে। অন্য লোকদের চেয়ে অন্তত ছয় ফুট দূরে অবস্থান করতে হবে।

খাবার-দাবার সংগ্রহের জন্য বাইরে যাওয়া বাদ দেওয়া যায় কি না, দেখুন। এই মুহূর্তে ঢাকায় এবং বাংলাদেশের আরো কয়েকটি বড় শহরে খাবার ডেলিভারি দেওয়ার ভালো কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন ফুডপান্ডা, উবার ইট, পাঠাও ফুডস; সম্ভব হলে এদের সহযোগিতা নিন।

যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সাথে কি যোগাযোগ করা যাবে না?

অবশ্যই যোগাযোগ করতে পারবেন। ভাইরাস কেউ নিজের থেকে শরীরে নিয়ে আসে না। যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অনেকে সুস্থও হয়েছেন। সুতরাং আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানসিক সাহস যোগানো জরুরি। কিন্তু সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। ফোন করে, ভিডিও কলে তাদেরকে সাহস যুগাতে পারেন, সুস্থতার জন্য পরামর্শ দিতে পারেন।

বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখবো কিভাবে?বাংলাদেশের বাস্তবতায় বন্ধু-পরিজন জীবন-যাপন প্রায় অসম্ভব। কিন্তু মারণ-ভাইরাসের মহামারীও এক কঠিন বাস্তবতা। এই পরিস্থিতিতে বন্ধুদের সাথে আড্ডার জন্য ডিজিটাল মাধ্যমকে বেছে নিন। ভিডিও কল, ফোন কলে আড্ডা দিন। কিন্তু সামাজিক দূরত্বকে গুরুত্ব দিন। না হলে আপনিই হতে পারেন আপনার জন্য বিপজ্জনক।

যদি আমার রুমমেট থাকে, তাহলে সামাজিক দূরত্বের অনুশীলন কিভাবে সম্ভব?

আপনি যদি শহরে পরিবারের বাইরের রুমমেটের সাথে থাকেন, তাহলে সবাই একই ধরনের জীবাণুমুক্ত পদ্ধতি মেনে চলুন। বারবার হাত ধুয়ে ফেলুন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যাবহার করুন। নিজ নিজ জিনিসপত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। মোট কথা পরিবারের সদস্যদের সাথে থাকার সময় এখন যা করবেন, রুমমেটের সাথেও ঠিক সেভাবেই জীবাণুমুক্ত পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন।

এভাবে কতোদিন পর্যন্ত থাকতে হবে?

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৫ মার্চ থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও ১০ জনের বেশি লোকের সমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং এই সময়টা সবাইকে সহনশীলতা দেখাতে হবে।

(এই লেখাটি কেবলই তথ্য শেয়ারের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হচ্ছে। এই লেখাকে কোনো মেডিকেল পরামর্শ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। আপনার যে কোনো রকম স্বাস্থ্য সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।)

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.