মারণ ভাইরাস করোনার কারণে স্থবির হয়ে আছে পৃথিবী। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ; পৃথিবীর সব প্রান্তেই কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে নতুন ধরনের এই ভাইরাস। জনজীবনে নেমে এসেছে দুঃসহ একাকীত্ব। ভাইরাস যাতে আরো ছড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে দেশে দেশে লোকজনকে ঘরে বসে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উন্নত বিশ্বের বয়োজ্যেষ্ঠদের একাকীত্বে মোড়া জীবনে নেমে এসেছে, আরো বেশি নীরবতা। জনবহুল দেশগুলোর নাগরিকরাও ঘরে বন্দি থাকার বিরল অথচ সত্য এক যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। মেনে চলছেন নতুন বিধান- সামাজিক দূরত্ব। পরিস্থিতি বলছে এই সামাজিক দূরত্বই ঠিক করে দিতে পারে ভবিষ্যতের সামাজিকতা।

maintain social distance in the time of coronavirus

ধরুন ২০২১ সাল চলে এসেছে। করোনা ভাইরাস ততোদিনে পৃথিবীকে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু এই ভাইরাসের রেখে যাওয়া ক্ষত ঠিকই বয়ে বেড়াতে হবে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষকে। করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন যে সামাজিক দূরত্বের অনুশীলন করতে হয়েছে, সেটাই হয়ে উঠেছে নতুন স্বাভাবিক সামাজিকতা।

হ্যা, কল্পনা করতে হয়তো একটু কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতের পৃথিবীতে এমনই ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা ভাইরাসের কারণে পৃথিবীর স্থবিরতা আর কতোদিন স্থায়ী হবে, সে বিষয়ে এখনো অন্ধকারে সবাই। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যদি আমেরিকানদের মৃত্যু সংখ্যা এক লাখের মধ্যে আটকানো যায়, তাতেই তিনি খুশি! অন্য দিকে, যুক্তরাজ্য বলছে, তারা ছয় মাসের লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের কারণে পৃথিবীতে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত সবাই।

ইউনিভার্সিটি অব সিকাগোর সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের প্রভাষক পামেলা প্যারেস্কি বলেছেন, “করোনা ভাইরাসের কারণে লোকজনকে হ্যান্ডশেক করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এটি অত্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ। আমি বিশ্বাস করি, হ্যান্ডশেক এরই মধ্যে একটি অতীতকালীন ব্যাপার হয়ে গেছে।”

যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট ডিংওয়াল বলছেন যে সামাজিক দূরত্বের যে অনুশীলন চলছে, তা হয়তো এভাবেই থাকবে না। কিন্তু লোকজন আর কোলাকুলি বা জড়িয়ে ধরার অভ্যাস ভুলে যাবে। তার মতে, লকডাউন যতো বেশি সময় ধরে চলবে, মানুষের অভ্যাস তো দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হয়ে উঠবে।

এ বিষয়ে আমেরিকান সমাজবিদ্যা বিভাগের প্রেসিডেন্ট জো ফেগিন বলেন, “এই লকডাউন যদি ১৮ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়, তাহলে মানুষের সামাজিক দূরত্ব, সামাজিক আচরণ ও সুস্বাস্থ্যগত চিন্তার বিশাল পরিবর্তন হবে।”

তার মতে, যতো বেশি সময় লকডাউন থাকবে, করোনা ভাইরাস নিয়ে ভয়ের কারণে গ্রহণ করা পদক্ষেপগুলো তো বেশি স্থায়ী হবে। অর্থাৎ ভাইরাসের ভয় কেটে গেলেও মানুষ এই অভ্যাস থেকে সহজে বের হতে পারবে না। যেমন, হাত ধোয়ার বিষয়টি- এতোদিন হয়তো মানুষ খাবার আগে ও পরে, টয়লেট ব্যবহারের পরে; এই দুটি সময় ছাড়া হাত পরিষ্কারের কথা চিন্তা করতো না। কিন্তু করোনা ভাইরাস ঠেকানোর সতর্কতা হিসেবে সবাই অনেক বেশি সময় ধরে হাত ধোয়ার অভ্যাস করছে, এই ভালো অভ্যাসটি দীর্ঘকাল ধরে মানুষের মধ্যে থেকে যাবে।

সামাজিক দূরত্ব নতুন সামাজিকতা হয়তো হয়ে উঠবে, একই সাথে এর নেতিবাচক দিকও আছে বলে উল্লেখ করেছেন পামেলা প্যারেস্কি। তিনি বলেন, “মানুষ হলো সামাজিক জীব। মানুষের তাই অন্য মানুষের স্পর্শ প্রয়োজন। শিশুরা যদি বহুদিন অন্য মানুষের স্পর্শ ছাড়া বড় হতে থাকে, তাহলে তাদের স্বাভাবিক মনুষত্য তৈরি হবে না। তারা যথাযথভাবে বিকশিত হবে না। সুতরাং মানুষের স্পর্শ তাদের প্রয়োজন।”

তিনি এই সময়ের পরামর্শ হিসেবে বলেছেন, অবস্থানগত দূরত্ব মেনে নিয়ে হলেও লোকজন যাতে প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করে। যেমন ভিডিও কলে কথা বলা, ভার্চুয়াল ডিনার পার্টি করা ইত্যাদি। এতে লকডাউনের বিষাদ ভুলে লোকজন আরো প্রাণবন্ত ও সামাজিক থাকতে পারবে।

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.