করোনাভাইরাস যেভাবে ফুসফুসকে ধ্বংস করে
- Details
- by জীবনশৈলী ডেস্ক
২০১৯ সালের শেষ দিকে অজানা এক ভাইরাসে সংক্রমিত হতে শুরু করেন চীনা নাগরিকরা। চিকিৎসকরা প্রথমে তাদের সাধারণ নিউমোনিয়া রোগী হিসেবে চিকিৎসা দিলেও অচিরেই বুঝতে পারেন, নতুন ধরনের একটি ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাদের। সে থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সাড়ে ১৮ লাখের বেশি মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। কেড়ে নিয়েছে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ। বুঝতেই পারছেন কোনো ভাইরাসের কথা বলতে চাচ্ছি, তা হচ্ছে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ বা নভেল করোনাবাইরাস।
করোনাভাইরাস মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসক জন উইলসন বলেন, মানবদেহে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ধরনের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। অনেকের আক্রান্ত হওয়ার পর দেহে কোনো লক্ষণই প্রকাশ পায়নি। আবার অনেকে একসঙ্গে বেশ কিছু জটিলতার সম্মুখীন হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়া ৮০ শতাংশের কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তারা এমনিতেই সুস্থ হয়ে উঠেন। প্রতি ছয় জনের একজন খুব খারাপভাবে সংক্রমিত হন। যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শেষে তাদের মৃত্যুও হতে পারে।
মরণঘাতী এই ভাইরাসটি মানবদেহে কীভাবে নিউমোনিয়ার সৃষ্টি করে? তীব্র সংক্রমণে আমাদের ফুসফুসের কী পরিণতি হয়?
এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন রয়াল অস্ট্রালাজিয়ান কলেজ অব ফিজিসিয়ানসের প্রেসিডেন্ট ও শ্বাস-প্রশ্বাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জন উইলসন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
ভাইরাসটি মানবদেহে কী প্রভাব ফেলে?
জন উইলসন বলেন, মানবদেহে ভাইরাসটির সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব হচ্ছে নিউমোনিয়া। এ ছাড়া আরো তিন রকমের প্রভাব দেখা গেছে।
প্রথমত, যারা মৃদুভাবে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন তাদের দেহে কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। এদেরকে মেডিকেলের ভাষায় ‘সাব-ক্লিনিকাল’ বলা হয়।
দ্বিতীয়ত, অনেকের দেহে জ্বর ও কাশির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সেইসঙ্গে মাথা ব্যথাও থাকতে পারে। এটিও করোনাভাইরাসের মৃদু প্রভাবের একটি। তবে যাদের জ্বর ও কাশি আছে তাদের থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
তৃতীয়ত, জ্বর ও কাশির উপস্থিতির পাশাপাশি স্বর্দি ও দেহের বিভিন্ন স্থানে ব্যথার উপদ্রব দেখা গেছে। এই ধরনের সমস্যাই সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
আক্রান্ত ব্যক্তির কীভাবে নিউমোনিয়া হয়?
ড. উইলসন বলছেন, ভাইরাসটির কারণে যখন কাশি ও জ্বর তখন বুঝতে হবে পুরো শ্বাসনালী- যা ফুসফুস ও বাইরে বায়ু পরিচালনা করে- সংক্রমিত হয়েছে।
তিনি বলছেন, এর ফলে শ্বাসনালীর আস্তরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং প্রদাহের সৃষ্টি করে। এর পর শ্বাসনালীর বায়ুপ্রবাহের যে পথ তাতে জ্বালা-যন্ত্রণা শুরু হয়। অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে, সূক্ষ্ম একটি ধূলিকণাতেও কাশির উদ্রেগ হয়।
তিনি বলছেন, এর পর যদি অবস্থা আরো খারাপের দিকে যায় তাহলে তা শ্বাসনালী আস্তরণ অতিক্রম করে এবং গ্যাস একচেঞ্জ ইউনিটগুলোতে- যা বায়ুপ্রবাহের সর্বশেষ গলি- পৌঁছে যায়।
আর ‘এগুলো যদি সংক্রমিত হয় তাহলে সেগুলো আমাদের ফুসফুসের নিচে অবস্থিত বায়ু থলেগুলিতে প্রদাহজাতীয় উপাদান সৃষ্টি করে।’
অস্ট্রেলিয়ান এই বিশেষজ্ঞ বলছেন, এর পর যদি বায়ু থলেগুলো উদ্দীপ্ত হয়ে যায়, এর ফলে ফুসফুসে ‘প্রদাহজনিত পদার্থ (তরল ও প্রদাহ সৃষ্টিকারী কোষ) প্রবাহিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত আমরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হই।’
তিনি বলেছেন যে, ফুসফুস যখন প্রদাহ সৃষ্টিকারী উপাদান বা পদার্থে পূর্ণ হয়ে যায় তখন রক্তপ্রবাহে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে না। এর পর শরীরের অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে দেবার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
উইলসন বলছেন, তীব্র নিমোনিয়ায় মৃত্যুর এটাই স্বাভাবিক কারণ।
কীভাবে নিউমোনিয়ার চিকিৎসার করা যাবে?
এ ব্যাপারে লাংস ফাউন্ডেশন অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান এবং শীর্ষস্থানীয় শ্বাস-প্রশ্বাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ক্রিস্টিন জেনকিন্স গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যে, এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে এমন কিছু নেই যা লোকদের কোভিড-১৯ নিউমোনিয়া হওয়া বন্ধ করতে পারে।’
‘অনেকেই ইতোমধ্যে বিভিন্ন ওষুধ ট্রায়াল শুরু করেছেন এবং আমরা আশাবাদী যে, আমরা ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধের সংমিশ্রণে কার্যকর একটা কিছু আবিষ্কার করতে পারবো। কিন্তু এই মুহূর্তে সহায়ক চিকিৎসা তথা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেওয়া ছাড়া প্রতিষ্ঠিত কোনো চিকিৎসা নেই।
তিনি বলছেন, ‘তারা সুস্থ হয়ে পুনরায় ফুসফুস স্বাভাবিকভাবে কাজ না করা পর্যন্ত আমরা তাদের ভেন্টিলেট দিচ্ছি এবং অক্সিজেনের উচ্চমাত্রা রাখছি।’
জন উইলসন বলেন, ভাইরাল নিউমোনিয়ার রোগীদের দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই তাদের অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও চিকিৎসা করা দরকার।
বর্তমান প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু পরিস্থিতিতে এটাও পর্যাপ্ত নয়। কারণ নিউমোনিয়া অপ্রতিহত হয়ে যায় এবং রোগীকে বাঁচানো যায় না।’
কোভিড-১৯ নিউমোনিয়া কি সাধারণ নিউমোনিয়া থেকে আলাদা?
জেনকিন্স বলছেন, যেসব সাধারণ রোগীদের আমরা নিউমোনিয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করি, তা থেকে কোভিড -১৯ নিউমোনিয়া ভিন্ন রকমের।
তিনি বলছেন, ‘নিউমোনিয়ার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাকটিরিয়াঘটিত এবং এন্টিবায়োটিকেই তা সেরে যায়।
জন উইলসনও বলছেন একই কথা। তার মতে, কোভিড -১৯ দ্বারা সৃষ্ট নিউমোনিয়া বিশেষভাবে মারাত্মক হতে পারে বলে প্রমাণ রয়েছে। কারণ করোনাভাইরাস সৃষ্ট নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা অংশের পরিবর্তে পুরো ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.