মরণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত বিশ্ব। ভাইরাসটি থেকে রক্ষা পেতে এর প্রতিষেধক আবিষ্কারে চলছে দিনরাত গবেষণা। সেইসঙ্গে এটি কীভাবে মানবদেহে ফেলে তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ। গবেষকরা শুরু থেকেই বলছেন, করোনাভাইরাসের মূলত ফুসফুসে পৌঁছে এর কার্যক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়। ফলে মানুষের মৃত্যু ঘটে। তবে এবার গবেষকরা বলছেন, শুধু ফুসফুস নয়, বরং এর সংক্রমণে মানুষের হৃৎপিণ্ড, স্নায়ু, মস্তিষ্ক, কিডনি, ধমনি এবং ত্বকও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ ফলে মৃত্যু হতে পারে মানুষের।

lungs damage after contactedকরোনারোগীদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়

তবে ভাইরাসের আক্রমণে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাকি ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের তৈরি রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ চলুন দেখা যাক, মরণঘাতী এই ভাইরাসটি কীভাবে মানবদেহের উল্লিখিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রভাবে ফেলে।

হৃৎপিণ্ড

করোনাভাইরাসের কারণে হৃৎপিণ্ড যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা বেশ কয়েকটি গবেষণায় প্রমাণিত। গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপে ভোগাদের মধ্যে যারা ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন তাদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি৷ তবে হৃদরোগ নেই এমন লোক কোভড-১৯- এ আক্রান্ত হলে তারও হৃৎপিণ্ডের পেশির কোষ মারা যায় বলে দেখা গেছে।

human brain damgeমানুষের ব্রেনের ক্ষতি করে করোনাভাইরাস

ফুসফুস

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষের ফুসফুস। আর ফুসফুসের জটিলতার কারণেই অধিকাংশ করোনারোগীর মৃত্যু ঘটে। তাছাড়া যারা সুস্থ হয়ে উঠেন তাদের ফুসফুসেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয় বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। চীনা গবেষকরা বলছেন, তারা সুস্থ হয়ে উঠা রোগীদের ফুসফুসে ঘোলাটে সাদা মেঘের মতো বস্তু দেখতে পেয়েছেন, যা ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতির ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করছেন তারা।

শ্বাসকষ্ট

গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার সংক্রমণের কারণে যেহেতু ফুসফুসের ক্ষতি হয়, সে কারণে রক্তে অক্সিজেন পৌঁছাতে বাধার সৃষ্টি হয়। এতে ফুসফুস আড়ষ্ট হয়ে পড়বে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ছোট ও দ্রুত গতির হয়। এর ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট হয়। সেইসঙ্গে শুকনো কফ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া ফুসফুসের কোষ একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা আর ঠিক হয় না৷

স্নায়ুতন্ত্র

গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে তাদের স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি নষ্ট হয়। আর এ উপসর্গ দেখা দেয় সংক্রমণের একেবারে শুরুর দিকেই ৷ অথচ সাধারণ ফ্লুর ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা দেখা যায় রোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে। ঘ্রাণ শক্তি বা অলফ্যাক্টরি নার্ভ অনুনাসিক ঝিল্লি থেকে খুলির হাড়ের মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কে পৌঁছায়৷

ধমনি

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কয়েকজনের ময়নাতদন্ত করে জুরিখের একদল প্যাথলোজিস্ট দেখতে পেয়েছেন যে, কারো কারো রক্তনালি এবং লাসিকা গ্রন্থি ফুলে গিয়ে সেগুলোতে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। আর রক্তপ্রবাহ বন্ধের কারণে কারণে হৃৎপিণ্ড, কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ একসঙ্গে বিকল হয় এবং শেষ পর্যন্ত মানুষ মারা যায়৷

মস্তিষ্ক

করোনাভাইরাসের কারণে মস্তিষ্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা মার্স ও সার্স ভাইরাসের সময়েও দেখা গেছে৷ নতুন এই কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও আক্রান্ত অনেকের খিচুনি এবং মৃগীরোগের চিকিৎসা দিতে হয়েছে এবং সে কারণেই হয়তো আক্রান্ত অনেকের ক্ষেত্রে পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ার বিষয়ে যে কথা বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো কিছু জানা যায়নি৷

কিডনি

করোনারোগীদের মধ্যে অনেকের শরীরে মারাত্মক নিউমোনিয়ার লক্ষণ থাকে এবং ভেন্টিলেশন দেওয়ার প্রয়োজন হয়৷ তাদের ফুসফুসে জমে যাওয়া তরল পদার্থ অপসারণ করতে যে ওষুধ দেওয়া হয়, তাতে তাদের পুরো শরীর থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে যায়৷ এর ফলে তাদের কিডনিতে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। ফলে কিডনি ঠিকভাবে কাজ করতে না পেরে অকেজো হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যায়ে তাদের মৃত্যু ঘটে।

রক্তপিণ্ড

অনেক সময় গুরুতর করোনারোগীদের শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায়৷ এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে কিডনিতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং কিডনি অকেজো হয়ে যায়।

ত্বক

করোনারোগীদের শুধু ফুসফুস, কিডনি কিংবা মস্কিষ্কের সমস্যা হয় তা নয়, বরং অনেকের ত্বকের সমস্যা হতেও দেখা গেছে। বিশ্বের অনেক দেশে করোনারোগীদের ত্বকে ক্ষত বা র‌্যাশ সৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে৷ রক্ত জমাট বাঁধার কারণেই ত্বকের নিচে এ ধরনের র‌্যাশ দেখা যায় বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.