করোনার ‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতি কোনটি

দেশে করোনা ছড়াচ্ছে বিদ্যুত গতিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুও আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, এই প্রশ্নের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন- পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে নামলে সেটাকে ‘স্বাভাবিক’ বলা যাবে। এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন প্রফেসর ডা. মো. রাশিদুল হাসান। তিনি বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতির দুটি ধাপ। ১. আক্রান্ত যাই হোক, সারা দেশে মৃত্যুহার শূন্যতে নিয়ে আসা। ২. কমিউনিটি ট্রান্সমিশনকে শূন্যতে নামিয়ে আনা।

প্রফেসর ডা. মো. রাশিদুল হাসান

ডা. মো. রাশিদুল হাসান বলেন, দুই-চার কিংবা ছয় মাসের মধ্যে দেশ থেকে করোনা নাই হয়ে যাবে, এটা আশা করাটা বোকামি। পৃথিবীর কোনো চিকিৎসক কিংবা জনস্বাস্থ্য নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা এমনটা আশা করেন না। তাই করোনার ‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতি হল প্রথমটি। অর্থাৎ, করোনা হলেও কোনো মানুষ মারা যাবে না, পরিস্থিতিকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসাটাই হল ‘স্বাভাবিক’। শুধু আমাদের দেশ নয়, সারা বিশ্বে এখন এটাই চ্যালেঞ্জ।

তিনি আরো বলেন, নিকট ভবিষ্যতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন তথা একজন থেকে আরেকজনের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টাকে শূন্যতে নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। এটা খুব জরুরিও না। অন্য আর দশটা রোগের মতো আক্রান্ত একটা মানুষ হতেই পারে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসাটাই চ্যালেঞ্জ এবং জরুরি।

দেশের প্রখ্যাত এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এত মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হল, যথাসময়ে টেস্ট না করা। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে যদি জানা যায়, তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে প্রায় শতভাগ কোভিড-১৯ রোগীর আরোগ্য লাভ সম্ভব। কিন্তু না জানার কারণে করোনা যখন শরীরে বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখান থেকে ফিরে আসার অনেকের জন্যই মুশকিল হয়ে যায়।

সরকার যদি সারা দেশে ব্যাপক হারে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে তাহলে করোনাকে কন্ট্রোল করা সম্ভব। আমাদের ল্যাব সংখ্যা সীমিত, তাই এখন যেভাবে পরীক্ষা হচ্ছে সেভাবে বেশিদূর যাওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজন একটা র‌্যাপিড টেস্ট কিট, যার মাধ্যমে মুহূর্তেই জানা যাবে, লোকটি আক্রান্ত কিনা। আক্রান্ত হলে প্রচলিত চিকিৎসাতেই আরোগ্য লাভ সম্ভব। করোনার ভ্যাকসিন আসলো কিনা, সেটা নিয়ে হাহাকার করে কাজ নেই।

ডা. রাশিদুল হাসান বলেন- কত রোগী করোনায় আক্রান্ত হল, প্রতিদিন দুপুরে সেটা জানা কিংবা জানানো এখন আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। বিষয়টাকে স্বাভাবিক ধরে নিয়ে বরং একজন করোনাক্রান্ত রোগীও মারা যাবে না, সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত এবং সেটাই হতে হবে আমাদের টার্গেট।