করোনাভাইরাস পৃথিবীতে রেখে যাচ্ছে যে ১০ পরিবর্তন
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বহু বছর পর ২০২০ সালের কথা আলোচনা হলে সবার আগে যে বিষয়টি উঠে আসবে, তা হলো করোনাভাইরাস। এই মারণ ভাইরাসে পৃথিবীজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ মিলিয়নের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ১.৮ মিলিয়নের বেশি। জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েনি।
এই লেখায় এমন কিছু বিষয় আলোচনা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের কারণে যা নতুন একেকটি পরিবর্তন হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হয়তো দীর্ঘকাল এই পরিবর্তন মানুষের জীবনে জড়িয়ে থাকবে।
নতুন অনেক শব্দ
গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা একদম নতুন একটি শব্দের সাথে পরিচিত হই— “কোভিড-১৯”। যা বছরজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলো। এরপর আমরা শিখেছি “সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং” বা সামাজিক দূরত্ববিধি। “কোয়ারিন্টিন” বা “আইসোলেশন” শব্দগুলো নতুন নয় বটে, কিন্তু এ বছরের মতো পৃথিবীতে কোনোদিন এই শব্দদুটির ব্যবহার হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলাই যায়।
ওয়্যারড্রোবে নতুন সংযোজন
নিজের একটি মাস্ক নেই— এমন মানুষ গত বছরের ডিসেম্বরেও ছিলো। কিন্তু ২০২০ সাল শেষ করে ২০২১-এ এসে আর এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। একটি তো ভালোই, এখন আমাদের ওয়্যারড্রোবে একেকজনের একাধিক মাস্কও আছে। শুরুর দিকে প্রতিদিন সার্জিক্যাল মাস্ক দিয়ে কাজ সারা গেলেও, ২০২০ সালের শেষ প্রান্তে এসে বিশ্বর নামি-দামি ব্রান্ডের মাস্কও বাজারে ছেয়ে গেছে। নানা রকম সুবিধাসম্বলিত এ সব মাস্ক বারবার ব্যবহারযোগ্য। কোভিডের কারণে মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া বেশির ভাগ দেশেই এখন এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বিষাদ, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা
এই মহামারিতে কোভিডের চেয়ে বেশি ভুগিয়েছে বিষাদ, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা। আগস্টে সেন্টার ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। তাতে দেখানো হয় যে, করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে বিষাদ, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা অত্যন্ত মারাত্মকভাবে ছড়িয়েছে। এই বিষণ্ণতার রেশ বহুদিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। স্কুল-কলেজ বন্ধ, সামাজিক দূরত্ব, চাকরি হারানো, অর্থনৈতিক মন্দাসহ— নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ছিলো ২০২০ সাল।
মহামারির পানীয়
করোনাভাইরাসের সময়ে মানুষের খাদ্যগ্রহণের অভ্যাসের পাশাপাশি পানীয় পানের অভ্যাসও পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো অঞ্চলে বেড়েছে গরম পানি পানের প্রবণতা। গরম পানিতে তৈরি লাল চা, বিভিন্ন মশলা চা পানের অভ্যাস বেড়েছে বহু মানুষের। গরম পানি যে কোনো রকম ঠাণ্ডাজনিত রোগের চিকিৎসায় দারুণ কার্যকরী। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এর প্রভাবের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকলেও থাকতে পারে।
নতুন স্বাভাবিক
“নিউ নরমাল”-এর হয়তো অনেক রকম বাংলা হতে পারে, কিন্তু “নতুন স্বাভাবিক”-এর মতো সরল বাংলাই মনে হয় বেশি প্রযুক্ত। মহামারির আগে কোনো দোকানি দোকান খোলার পর আগে ঝাড়ু দিয়ে গ্রাহকদের জন্য দোকানটি পরিষ্কার করতো। কিন্তু মহামারির পরে শুধু খালি চোখের পরিষ্কারই শেষ কথা নয়; এখন জীবাণু দূর করাই প্রথম কাজ। করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পৃথিবীতে আরো কতোদিন থাকবে, তা বলা মুশকিল। ফলে নতুন স্বাভাবিক জীবনে প্রতিটি মুহূর্তে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।
গুজব এবং গুজব
করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে আমরা দেখেছি একের পর এক গুজব। যেমন কেউ বলা শুরু করেছিলেন ব্লিচিং পাউডার গুলে খেলে করোনাভাইরাস মরে যাবে, তো কেউ বলেছিলেন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে চীনের একটি ল্যাবে; এই ধরনের আরো হাজার হাজার গুজবে ভরা ছিলো ২০২০ সাল। শুধুমাত্র করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়েই অন্তত দুই হাজারটি গুজব ঘুরেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই সব গুজবের কোনো কোনোটি বিশ্বাস করে অনেককে হাসপাতালে যেতে হয়েছে, কেউ কেউ আবার মারাও গেছেন!
মহামারির সঙ্গী
বাংলাদেশে কোনো প্রাণী দত্তক নেওয়ার ঘটনা তেমন একটা দেখা না গেলেও উন্নত বিশ্বে বহু মানুষ প্রাণী দত্তক নেন, এবং এর পরিমাণ মহামারির সময়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বিশ্বের যে সব অঞ্চলে কঠোরভাবে লকডাউন আরোপ করা হয়েছিলো, সেখানকার অনেক লোক কুকুর দত্তক নিয়েছেন। নিজেদের একাকীত্ব ঢাকতে একটি প্রাণীর সাথে জীবন-যাপন করেছেন তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারিতে অনেক প্রাণী তাদের নিজস্ব একটি বাসা পেয়েছে এবং এতে দত্তক নেওয়া লোকজনও অপকৃত হয়েছে। গবেষণায় বলা হচ্ছে যে, যারা কোনো প্রাণী দত্তক নিয়েছেন, তাদের মানসিক অবস্থা লকডাউনের সময়ে দত্তক না-নেওয়াদের তুলনায় ভালো ছিলো।
স্কুল বন্ধ
মহামারির সময়ে পৃথিবীর প্রায় সব স্কুলই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। পৃথিবীতে স্কুল বা প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরুর পর হয়তো এমন দিন আর কখনোই আসেনি। করোনাভাইরাস শিশুদের জন্য খুব বেশি বিপজ্জনক নয়। কিন্তু তাদের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারতেন অনেকেই। বিশেষ করে বাড়ির বয়স্ক সদস্যরা শিশুদের থেকে আক্রান্ত হতে পারতেন। কেনো কোনো শিশুর জীবনও ঝুঁকিতে পড়তে পারতো। এসব দিক চিন্তা করেই বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্য দিকে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটি ছিলো এই সিদ্ধান্তের সবচেয়ে নেতিবাচক দিক।
কম বায়ূদুষণ
পরিবেশ দূষণ গত কয়েক দশক ধরে পৃথিবীর অন্যতম বড় দুশ্চিন্তা। কিন্তু মহামারির বছরে এই একটা দিকে পৃথিবী ছিলো শান্ত। প্রতি বছর বায়ূদূষণের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে বেড়ে যায়। কিন্তু ২০২০ সালে ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটে— এই বছর আগের বছরের তুলনায় বেশ কম বায়দূষণ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে মিলকারখানা, গাড়ি বন্ধ না থাকলে এ রকম কখনোই সম্ভব হতো না।
নতুন ভ্যাকসিন
সব কিছুর পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারি পৃথিবীকে দিয়ে যাচ্ছে নতুন একটি ভ্যাকসিন— যা থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে পরিত্রাণ মিলতে পারে। মাত্র ১২ মাসের মধ্যে নতুন একটি ভ্যাকসিন পেয়েছে পৃথিবীতে। এতো দ্রুত আর পৃথিবীর মানুষ কোনো রোগের ভ্যাকসিন আনতে পারেনি। এ দিক চিন্তা করলে মানুষ তার সামর্থ্যকে নতুন বছরে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। মার্চ মাসে ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ গৃহিত হয় এবং ততোদিনে ভ্যাকসিনের কিছু সংস্করণ প্রাথমিক টেস্টের জন্য প্রস্তুত হয়। এই পর্যায়ে সাফল্য পাওয়ার পর আরো বৃহৎ পরিসরে পরীক্ষা করা হয়, এবং ডিসেম্বরে এসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ভ্যাকসিন অনুমোদন পায়। সপ্তাহের ব্যবধানে আরো একটি ভ্যাকসিন অনুমোদন পায় এবং মানবদেহে প্রয়োগ করা শুরু হয়।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.