আমেরিকায় ৮০ শতাংশের বেশি পরিবারেরই ড্রায়ার মেশিন আছে। অন্যদিকে ইউরোপীয়রা কাপড় রোদে শুকাতেই বেশি পছন্দ করে। উম্মুক্ত জায়গায় কাপড় ঝুলানোকে মার্কিনীরা বলছেন ‘অশ্লীল’ ও ‘দরিদ্রতার পরিচায়ক’। ‘এটাই পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী’- পাল্টা জবাব ইউরোপীয়দের। কাপড় শুকানোর কায়দা নিয়ে অনলাইনে বিরাট বাহাসে জড়িয়েছেন ইউরোপীয় ও আমেরিকানরা।

laundry room ১৯০৯ সালের এপ্রিলে হোয়াইট হাউসের লন্ড্রি রুমের ছবি

শুরুটা হয়েছিল গড় আয়ু নিয়ে। ইউরোপের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে গড় আয়ু কমছে- এ বিষয়ে একটি গ্রাফিকস টুইটারে শেয়ার করে মার্কিন পডকাস্টার জশ ব্যারো লেখেন- ‘ইউরোপ মজার জায়গা। ছোট ছোট দেশগুলো বুক চিতিয়ে বলছে, আমার মাথাপিছু জিডিপি এত বেশি। কিন্তু সেখানে আদতে কারো ঘরে এমন যন্ত্র নাই যেটা দিয়ে কাপড় শুকানো যায়। কিউট না?’

কিছুক্ষণের মধ্যে ইউরোপীয়দের জবাব আসতে থাকে। তারা ব্যারোকে স্মরণ করিয়ে দেন- ‘কাপড় শুকানোর যন্ত্রের চেয়ে বেশি জরুরি হলো সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়া এবং যখন তখন শপিং মলে-স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিবর্ষণ রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন।’

কাপড় শুকানো নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা বিতর্ক নতুন নয়। পাঁচ বছর আগে এক রেডিট ইউজার নন-আমেরিকানদের প্রশ্ন করেন, আমেরিকানদের কোন তথ্যটি জানা উচিত? একজনের জবাব ছিলো- ‘আমেরিকার মতো এত বেশি ইলেকট্রিক ড্রায়ার কোথাও ব্যবহার হয় না।’ ব্যস, ওই জবাবে মন্তব্য পড়েছে সাত হাজারের বেশি।

রেডিটের ওই থ্রেড এখনো অ্যাক্টিভ। একজন আমেরিকানের মন্তব্য- ‘বুঝতে পারি না ড্রায়ার ছাড়া জীবন কীভাবে চলে। বৃষ্টি হলে কীভাবে কাপড় শুকাবো? ইউরোপে জীবন নিশ্চয়ই নরকের মতো।’

ইউরোপিয়ান এক ইউজারের জবাব- ‘আমেরিকানরা এত ভোগবাদী ও আরামপ্রিয় হওয়ায় জ্বালানির মূল্য বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ও তাদের।’ ব্রিটিশ এক নাগরিকের খোঁচা- ‘আমাদের দেশে ড্রায়ারের ব্যবহার বেড়েছিল ষাটের দশকে, যখন বর্ণবাদ বাড়ছিল।’

ড্রায়ার মেশিনে মার্কিনীদের আসক্তি বহুদিনের। দীর্ঘদিন বার্সেলোনায় থাকা মার্কিন নাগরিক লরেন হপকিন্স লেখেছেন- ‘শিকাগোতে আমার দাদী জানিয়েছেন, শীতের দিনে তারা বেসমেন্টে কাপড় শুকাতেন। পরে ক্রেডিট কার্ড হাতে পেয়ে সবার আগে যে জিনিসটি কিনেন সেটা হলো ড্রায়ার।’

অ্যারিজোনায় বড় হয়েছেন টেড স্ট্রেসেন-রয়টার। বর্তমানে স্পেনের ক্যানারি আইল্যান্ডে বসবাসকারী টেড বলেন- ‘খোলা জায়গায় কাপড় শুকানোর কথা ওখানে কেউ চিন্তাও করতে পারে না। ড্রায়ার না থাকলে বেসমেন্টে বা বয়লার রুমে কাপড় শুকাবে। আমার এখন রোদে শুকাতেই বেশি লাগে। কাপড়গুলো মচমচে মনে হয়।’

ড্রায়ার নিয়ে বিতর্কে বেরিয়ে এসেছে বড় বাড়ি, বড় গাড়ি, চড়া মাইনে আর বিশালকায় শহর ও আত্মকেন্দ্রিক মার্কিনীদের ঝোঁক। অন্যদিকে ইউরোপীয়রা বেতনের বড় অংশ কর হিসেবে সরকারের হাতে তুলে দিয়ে চিকিৎসা, বেকার ভাতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বেশি পক্ষপাতি।

যুক্তরাষ্ট্রে কোনো কোনো জায়গায় বাইরে কাপড় শুকানো নিষিদ্ধ। এর বিরুদ্ধে ‘রাইট-টু-ড্রাই মুভমেন্ট’ নাম দিয়ে আন্দোলনও করছেন অনেকে। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের সাংবাদিক মেগান ডম লিখেছেন- ‘তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে তাতে ড্রায়ারের চেয়ে উঠোনেই কাপড় দ্রুত শুকানো যাবে। আমেরিকায় ড্রায়ারের ব্যবহার বেড়েছে ষাটের দশকে মধ্যবিত্ত এলাকাগুলোয়। বাড়ির বাইরে কাপড় শুকাতে দিলে গরিবানা হাল প্রকাশ হয়ে পড়বে এমন চিন্তা থেকে মানুষ ঘরের ভেতরে কাপড় শুকানোর দিকে ঝুঁকেন।’

মেগান জানান- ‘আশির দশকেও আমেরিকায় অর্ধেকের বেশি পরিবারে ড্রায়ার ছিল না। কিন্তু ২০০৯ সাল নাগাদ ৮০ শতাংশ পরিবারে যন্ত্রটি উপস্থিত হয়ে পড়ে। এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে বাইরে কাপড় শুকাতে দিলে লোকে ভাববে আপনি গরিব অথবা গেঁয়ো।’

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.