আপনি পড়ছেন

গৃহকর্মীর মৃত্যুর গুজবে বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানের বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কের অবস্থিত একটি ভবনে তার ফ্ল্যাটে এ হামলা চালায় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থেলে গিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং তাদের লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

pir habib incidentপীর হাবিবের বাসায় ইট-পাটকেল ছুড়ছে উত্তেজিত জনতা, ছবি- সংগৃহীত

জানা যায়, ওই ছয় তলা ভবনের পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন পীর হাবিব। ফ্ল্যাটটি তার নিজের। গতকাল দুপুরের পর তার বাসার গৃহকর্মী জানালা দিয়ে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করে। ২০ বছর বয়সী ওই গৃহকর্মীর চিৎকার শুনে ভবনের সামনে জড়ো হয় স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে সন্ধ্যার দিকে ওই গৃহকর্মীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা ভবনটি ঘিরে ফেলে এবং ভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে।

এক সময় তারা ভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং গ্যারেজে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। ওই সময় সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। পরে আরো পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং হামলাকারীদের লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

pir habibবাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান- ফাইল ছবি

এ বিষয়ে পীর হাবিব জানান, ওই গৃহকর্মী নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত। তাই তাকে বাসার ভেতর আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। আর সুরক্ষার স্বার্থে তার পরিবারের কেউ বাসায় ছিল না। দুপুরের দিকে যখন গৃহকর্মীর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ভবনের সামনে জড়ো হয়, তখন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে পুলিশ তার স্ত্রীকে খবর দিয়ে আনে।

তিনি আরো জানান, ওই গৃহকর্মী বাসা থেকে চলে যাওয়ার জন্য এমন আচরণ করেছে। তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। পুলিশের সামনেও সে একই কথা জানিয়েছে। পরে তাকে যার মাধ্যমে বাসায় কাজে রাখা হয়েছিল পুলিশের সামনেই তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই সময় স্থানীয়রা সেখানে উপস্থিত ছিল না। ফলে বিকেলের দিকে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরো জানান, গুজব ছাড়ানোর পর সন্ধ্যার দিকে উত্তেজিত জনতা ফের ভবনের সামনে জড়ো হয় এবং ভেতর ওই গৃহকর্মীর মৃতদেহ রয়েছে বলে দাবি করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় তাদের ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে ভবনের প্রতিটি ফ্লোরের কাঁচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যার দিকে যখন উত্তেজিত জনতা ভবনটি ঘিরে ফেলে তখন পুলিশ কয়েকজন স্থানীয়দের নিয়ে পীর হাবিবের ফ্ল্যাটে যায়। কিন্তু ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ থাকায় তারা ভবনের নিচে নেমে আসে। এ সময় উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর চালায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হওয়ায় পরে আরো পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে যায় এবং ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিমানবন্দর জোনের সহকারী কমিশনার খন্দকার রেজাউল হাসান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্যদের ফাঁকা গুলি ছুড়তে হয়েছে। এ ছাড়া লোকজনকে বিশ্বাস করাতে ওই গৃহকর্মীকে ফের সেখানে আনা হয়েছিল। পরে তাকে রাতে বনানীতে এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠানো হয়।

তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় কয়েকজন হামলাকারীকেও আটক করা হয়েছে।