আপনি পড়ছেন

শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। এই ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ নিয়ে ছেলেবেলায় যে উত্তেজনা ছিল তা এখন আর অবশ্য তেমন নেই। সব খেলা দেখাও হয় না ঠিক মতো। তবে বিশ্বকাপ ফুটবল আসলেই একজন মানুষের অভাব অনুভব করি। আমার আব্বা। যার মুখেই প্রথম শুনেছিলাম পেলে, ম্যারাডোনা, পিটার শিল্টন, বেকেনবাওয়ার, ইউসেবিও- এমন সব গ্রেট ফুটবল তারকার নাম।

world cup football

আব্বা ছিলেন ব্রাজিলের সমর্থক। সেই থেকে উত্তারাধিকার সূত্রে আমাদের পরিবারও ব্রাজিলের সমর্থক। খেলা চলাকালে টিভি পর্দায় দর্শক সারিতে বসা পেলে তথা কালো মানিককে দেখলেই আব্বার পেলে পেলে বলে খুশিতে সে কী চিৎকার। ১৯৯০ সালে ইতালি বিশ্বকাপ থেকে আব্বার সাথে খেলা দেখা শুরু। সেবার প্রথম দেখলাম ম্যারাডোনা, রবার্তো ব্যাজিও, ভালদারামা, মালদিনি আর লুথার ম্যাতিউসের মতো তারাকাদের খেলা। আর প্রথমবার উপভোগ করলাম ব্রাজিলের শৈল্পিক ফুটবল।

বিশ্বকাপ ফুটবল ছাড়াও দেশের আবাহনী আর মোহামেডানের দ্বৈরথও আব্বার সাথে উপভোগ করতাম। তখন আবাহনী ও মোহামেডান নিয়ে পুরো দেশ দুভাগ হয়ে যেত। বিজয়ী দলের পক্ষে মিছিল হত।

১৯৯৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালিকে পরাজিত করে চতুর্থবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় রোমারিও, বেবেতোর ব্রাজিল। আমরা ভাই বোন সবার সাথে বাবার খুশি মুখ এখনো চোখে ভাসে। খুশি বেশি ছিল এ জন্য যে আমাদের পাড়ার সবাই ছিল এন্টি ব্রাজিল তথা আর্জেন্টিনা। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ ফাইনালে রোনালদোর ব্রাজিল হেরে যায় ফ্রান্সের কাছে। কোনো এক রহস্যময় কারণে ফাইনাল খেলতে পারেননি দি ফেনোমেনন। সেবার খুব কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব ফুটবল পেল এক মহা তারকা। জিনেদিন জিদান। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ আব্বার সাথে গ্রামের বাড়িতে দেখেছি।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শহরে চলে আসায় পর বিশ্বকাপগুলোর কিছু খেলা শহরে আর কিছু বাড়িতে আব্বার সাথে দেখছি। ২০০২ বিশ্বকাপ ফাইনালে আবার ব্রাজিল। সেবার রোনালদো, রিভালদো, রোনালদিনিহো মিলে এক শৈল্পিক ত্রয়ী তৈরি করেছিল। ইংল্যান্ডের গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে রোনালদিনিহোর সেই চোখ ধাঁধানো ফ্রি কিক এখনো চোখে ভাসে। জার্মানিকে হারিয়ে পঞ্চম শিরোপা ঘরে তুলে ব্রাজিল। রোনালদো জোড়া গোল করেন ফাইনালে। ২০০৬ সালে ফ্রান্সকে ট্রাইব্রেকারে হারিয়ে ইতালি চ্যাম্পিয়ন হয়। কুল ম্যান জিদানের মাতারাজ্জিকে মারা সেই বিখ্যাত ডুস ফুটবলের বড় আলোচনার বিষয় হয়েই থাকবে।

২০১০ বিশ্বকাপ আব্বার সাথেই দেখার কথা ছিল। বাসায় বড় রঙিন টিভি কিনেছি। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর মাস কয়েক আগে তিনি হঠাৎ করেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। রঙিন টিভিতে আর একসাথে খেলা দেখা হলো না।

বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালীন পুরো মাস জুড়েই খেলা নিয়ে আব্বার সাথে অলোচনা চলত। কোন দল কেমন খেলছে, রোমারিও, রোনালদো, জিদানকে কেমন খেলছে, প্রিয় দল ব্রাজিলের সম্ভাবনা কতটুক- এসব নিয়ে সারাক্ষণ আলোচনা চলত। তখন গভীর রাতে খেলা হত। গ্রামে এত রাত কেউ জেগে থাকত না। আমরাও প্রায়ই পড়া শেষ করে ঘুমিয়ে যেতাম। কিন্তু শুধু আব্বা সাদাকালো নিপ্পন টিভির সামনে বসে থাকতেন, কিছুক্ষণ পর পর চা বানিয়ে খেতেন। আর খেলা শুরু হলে আমাদের ভাই বোনদের ডেকে দিতেন। সেই দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। আর অনুভব করি খেলার প্রতি ভালবাসা।

লেখক: এসএম রাশেদুল হাসান, ইউএনবি।

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর