আপনি পড়ছেন

শিক্ষা ব্যবস্থার গণ্ডগোল নিয়ে তো হারহামেশাই কথা হয়। কিন্তু বদলছে কতোটা? কিংবা আগেই বা কতোটা যথার্থ ছিলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা? সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল গত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-ফাইভ পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে। তাতে দেখা গেছে অনেক সাধারণ বিষয়েই উত্তর দিতে পারছেন না ওই শিক্ষার্থীরা। তো সমস্যা কি জিপিএ- ফাইভ পাওয়ায় নাকি পদ্ধতিতে?

celebration of students after getting gpa5

নতুন করে আরো নানা প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, ‘আমি জিপিএ ফাইভ পেয়েছি’ এর ইংরেজি করা কিংবা ‘জিপিএ ও এসএসসির পূর্ণরূপ কী’; এ ধরনের মৌলিক ব্যাপারগুলো সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই জিপিএ- ফাইভ পাওয়া শিক্ষার্থীদের!

শিক্ষার্থীদের এমন মানহীনতা যেমন কষ্টদায়ক, তেমনই পীড়াদায়ক ওই টিভি চ্যানেলের কাজও। প্রতিবেদনটিতে খুবই বাজেভাবে ওই শিক্ষার্থীদের উপস্থাপন করা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীদের চেহারাও প্রচার করা হয়েছে স্পষ্টভাবে। এতে করে তারা কী ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে, তা ওই চ্যানেলটির গোটা পরিচালনা বিভাগই জানে না। তাহলে তাদের শিক্ষার কী অবস্থা? সাংবাদিকতার মৌলিক শিক্ষা কি তাদের আছে?

টিভি প্রতিবেদনটি খুব খেয়াল করলে দেখা যাবে উপস্থাপিকা প্রতিবেদনটি শুরুই করেছেন অত্যন্ত ভুলভাবে। তিনি বলেছেন, ‘জিপিএ- পাঁচ শিক্ষার্থীরা...’; মানে দাঁড়ালো যারা জিপিএ-ফাইভ পেয়েছে, তারা ‘জিপিএ-পাঁচ শিক্ষার্থী’! এখানে বলা উচিত ছিলো জিপিএ-পাঁচ ‘পাওয়া’ শিক্ষার্থীরা...। বুঝুন ব্যাপার টা!

হঠাৎ টিভি ক্যামেরার সামনে পড়ে অনেক জানা বিষয়ও মানুষ ভুলে যেতে পারে। নার্ভাসনেসের কারণে এমন ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। টিভি প্রতিবেদনটি তো এই রকম স্বাভাবিক কোনো ব্যাপারের আশ্রয় নেয়নি? প্রশ্নটি কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যায় না।

গত এক দশকে সমাজে একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, মেধাবী তারাই, যারা জিপিএ-ফাইভ পায়। এক অর্থে এই প্রতিবেদন কিন্তু এই ধারণটার গালে সপাটে এক চড়ও বসিয়ে দিয়েছে। তাই বলে প্রতিবেদনটি কিন্তু বিতর্কের উর্ধ্বে যেতে পারেনি। কেউ যদি না জানে নেপালের রাজধানী কোথায় কিংবা পিথারোগাস বা নিউটন কে, তাহলেই কি সে মেধাহীন? মেধাবী হওয়ার কি সত্যিই কোনো মানদণ্ড আছে? একাডেমিক পড়ালেখায় আগ্রহী ছিলো না, এমন কেউ কি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়নি? কিংবা প্রতি ক্লাসে প্রথম হওয়া ছেলেটা ৩৫ বছর বয়সেও কোনো চাকরি খুঁজে পায়নি, এমন ঘটনাও কি সমাজে নেই?

সবচেয়ে বড় কথা হলো নম্বরমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের মেরুদণ্ড দুর্বল করে দিচ্ছে। এই ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। টিভি প্রতিবেদনটি ঠিক হয়নি, এটা যেমন সত্য। তেমনি এটাও সত্য, জিপিএ-ফাইভ পেয়ে যাওয়া মানেই অনেক কিছু জেনে ফেলা নয়।

জিপিএ- ফাইভ নিয়ে কথা উঠেছে, তাই আমরা কথা বলছি। কিন্তু যা নিয়ে কথা উঠছে না, তা নিয়ে কে বলবে। ইউরোপে এস্তোনিয়া নামে ১৩ লাখ মানুষের একটি দেশ আছে। কিছুদিন আগে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেখলাম, সেই দেশের ক্লাস ফাইভের শিশুরা প্রোগ্রামিং শিখছে। কেউ কেউ নাকি সফটওয়্যারও বানিয়ে ফেলছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রোগ্রামিং ব্যাপারটা সম্পর্কে ধারণা পেতে কতোদিন লাগে? একটু কি চিন্তা করে দেখেছেন আমাদের নীতিনির্ধারকরা?

সব মিলিয়ে আমরা বেশ ঝামেলাপূর্ণ একটা সময়ে পড়ে গেছি। যেখানে আমাদের নীতিনির্ধারকরা শিক্ষাব্যবস্থার একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করতে পারেননি। ফলে আমরা কী শিখলাম, সে ব্যাপারে আমরা নিজেরাই অবগত না। এমন কি আমাদের কী শেখার দরকার ছিলো, আমরা সেটাও বুঝতে পারলাম না! আমাদের এমন অদ্ভুত সংকট কীভাবে দূর হবে?

আপনি আরো পড়তে পারেন

৫ জুন আসছে নতুন পাঁচ টাকার নোট

আজ থেকে নতুন নিয়মে ভারতীয় ভিসা

যে কোনো সময় তোলা যাবে বন্ধ সিম

দেশের বাজারে কমলো স্বর্ণের দাম

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর