আপনি পড়ছেন

আবারও একই ঘটনা ঘটছে। সেটা হলো যুদ্ধে বিশ্বের অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার ব্যাপার। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ব যেন আবারও অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে দুই মাস কেটে গেছে। যুদ্ধের খবর আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের খবর এখন প্রথম পাতার খবর নয়। কেউ আর বেসামরিক মৃত্যুর হিসাব করে না। ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননে তাই ঘটেছে।  দুঃখের বিষয় হল এটি আর হতবাক হবার মতো বিষয় নয়। তাহলে এই যুদ্ধ কিভাবে শেষ হবে? এই ট্র্যাজেডি থেকে উত্তরণের উপায় কী?

zelensky erdogan putinজেলেনস্কি, এরদোয়ান ও পুতিন

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি বলেছেন, তুরস্কে রাশিয়ার সাথে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মনোভাবের ওপর নির্ভর করে। প্রায়শই ইউক্রেনের কর্মকর্তারা রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আরও সক্রিয় না হওয়ার জন্য বিশ্বের সমালোচনা করেন। তারা তুরস্কের মধ্যস্থতাকে বিশ্বাস কররেও পশ্চিমের কাছ থেকে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ চায়।

উদাহরণস্বরূপ, গত ২৩ এপ্রিল রাশিয়া ওডেসা শহরে আটজন বেসামরিক নাগরিকের ওপর হামলা চালায়। এই কাজগুলোর জন্য শুধু নিন্দা করাই উচিত হবে না, রাশিয়াকে এমনভাবে চাপ দেওয়া উচিত, যাতে এই ধরনের বর্বর কাজ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে৷

ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গত ২২ এপ্রিল বলেন, ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনা যুদ্ধ শেষ করার দ্রুততম উপায় প্রস্তাব করে। যুদ্ধের শুরু থেকে এই সহিংসতার অবসান ঘটাতে এর চেয়ে কার্যকর পদ্ধতি আর নেই। তুর্কি মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া একমাত্র চ্যানেল, যেখানে উভয় পক্ষ একে অপরের সাথে আলোচনা করে এবং বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।

তুরস্ক মানবিক করিডোর এবং সংলাপের অস্তিত্বের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়। জেলেনস্কির সাথে সাম্প্রতিক ফোন কলে এরদোয়ান আলোচনার জন্য তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন, তুরস্ক গ্যারান্টর হিসেবে নিজ অবস্থানকে স্বাগত জানাবে। এরদোয়ান মারিওপল শহরের বেসামরিক লোকদের জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ওপরও জোর দিয়েছেন। এ কাজে গতিও পেয়েছে।

তবে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। আলোচনাও চালাতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি তখনই হবে, যখন জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে একটি কার্যকর আলোচনা হবে। তবে পুতিন রাজি হচ্ছেন না। এরদোয়ান সম্প্রতি বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট পর্যায়ে শান্তি আলোচনার জন্য পুতিনকে ডাকার পরিকল্পনা করছেন।

মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে উভয়পক্ষের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখেছে তুরস্ক। আঙ্কারার এমন অবস্থান ওয়াশিংটনের কাছে অনন্য এবং শক্তিশালী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিষয়টিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক উন্নয়নের একটি উপলক্ষ্য হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

তুরস্ক নিজেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ন্যাটো মিত্র হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছে। এ কারণে অন্তত ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তুরস্কের জয়জয়কার পরিস্থিতি। তুরস্কের জনসাধারণের মধ্যেও পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্কের প্রতি সমর্থন বেড়েছে। যুদ্ধের আগ পর্যন্ত ইউরোস্কেপটিক দৃষ্টিভঙ্গি বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, তুরস্কের জাতীয় স্বার্থ ন্যাটোর অংশ হওয়া এবং পশ্চিমের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি রাশিয়ার সাথেও সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রয়েছে।

মনে করা হচ্ছে, এই গতিশীলতা তুর্কি বৈদেশিক নীতিতে অদূর ভবিষ্যতে আরও বৈচিত্র আনবে এবং আঙ্কারাকে এই অঞ্চলে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরিতে সাহায্য করবে।

লেখক: নাগেহান আলচি, ডেইলি সাবাহ

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর