আপনি পড়ছেন

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ওহে! তোমরা যারা ইমান এনেছ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। আশা করা যায় তোমরা তাকওয়ার গুণ অর্জন করবে। সূরা বাকারাহ : ১৮৩। এ আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায়, পূর্ববর্তী সকল উম্মতের শরীয়তে রোজা ফরজ ছিল। আর এর উদ্দেশ্য ছিল তাকওয়া অর্জন।

ramadan

বুখারিতে হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। এ আয়াত নাজিল হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়।’

তাবেয়ী হাসান বসরী (রহ) বলেন, ‘রমজানের রোজা পূর্ববর্তীদের ওপরও ফরজ ছিল।’ এ সম্পর্কে একটি হাদিসও রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের আগেও রমজানের রোজা ফরজ ছিল।’ (ইবনে কাসীর)

তাফসিরে মাজহারিতে কাজী সানাউল্লাহ (রহ) লেখেন, ‘খ্রিস্টানদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ ছিল। গ্রীষ্মে পিপাসা আর শীতে ক্ষুধা- এই দুই কারণে রোজা রাখা তাদের কাছে কষ্টকর মনে হল। খ্রিস্টান আলেমরা ঠিক করল, তারা বসন্তকালে রোজা রাখবে আর দশটি রোজা বাড়িয়ে রাখবে। এভাবে রোজার সংখ্যা দাঁড়ালো চল্লিশে।

এরপর একবছর তাদের রাজা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা মানত করল রাজা সুস্থ হলে আরো সাতটি রোজা বাড়িয়ে রাখবে। মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের মানত পুরো করলেন। তারা আরো তিনটি বাড়িয়ে মোট পঞ্চাশটি রোজা রাখতে লাগল।

অন্য বর্ণনায় মুজাহিদ (রহ) বলেন, এক বছর মহামারী দেখো দেয়। তখন তারা এর থেকে পরিত্রাণের জন্য দশটি রোজার মানত করে। এর পর আরো দশটি বাড়িয়ে নেয়। এতে তাদের রোজা সংখ্যা হয়ে গেল ষাট মতান্তরে সত্তর। এতবেশী রোজা রাখা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুতির হয়ে পড়ে।’

হজরত মুসা (আ.) এর অনুসারী ইহুদীদের উপরও রমজানের রোজার পাশাপাশি আশুরার দশটি রোজা ফরজ ছিল। বর্তমানেও ইহুদীদের মধ্যে রোজার প্রচলন রয়েছে। কোনো কোনো ইহুদী বিপদে-আপদে রোজাকেই ধৈর্য ও সান্ত্বনার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে।

পাকিস্তানে বুদ্ধের একটি উপবাসরত মূর্তি পাওয়া যায়। যা থেকে প্রমাণিত হয় বৌদ্ধ ধর্মে রোজা রাখা অন্যতম ইবাদত।

প্রাচীন ধর্ম হিসেবে খ্যাত হিন্দু ধর্মে আত্মশুদ্ধি ও স্রষ্টার কাছাকাছি যাওয়ার মাধ্যম হল রোজা বা উপবাস। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন পূজা পার্বনে উপবাস করেন। পূর্নিমা, একাদশী, প্রতি মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার হিন্দুদের সাপ্তাহিক উপবাসের দিন।

প্রাচীন মিশরীয় এবং পারসিক সভ্যতায় রোজার নিদর্শন পাওয়া গেছে। বাহাই ধর্মে ঠিক মুসলামনাদের মতই রোজার বিধান রয়েছে। অহিংস জীবন লাভের জন্য জৈন ধর্মের অনুসারিরাও সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস পালন করেন।

গবেষকরা দেখেছেন, প্রতিটি সভ্যতা ও ধর্মেই রোজার বিধান রয়েছে। মজার ব্যাপার হল, যুগে যুগে স্রষ্টার নৈকট্য ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে রোজাকেই গ্রহণ করা হয়েছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর