আপনি পড়ছেন

‘জাকাত’ আরবি শব্দ। ইসলামি বিশ্বকোষে জাকাতের অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী (সা.) আপনি তাদের মালামাল থেকে জাকাত গ্রহণ করুন যাতে আপনি এর মাধ্যমে সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং পরিশুদ্ধ করতে পারেন। সূরা তাওবাহ, আয়াত ১০৩।

zakat header 6001 1

ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায়, জীবন যাত্রার অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছরকাল অতিক্রম করলে ঐ সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ আল্লাহর নির্ধারিত খাতে ব্যয় করাকে জাকাত বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, নিজের অর্থ সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ অভাবী মিসকিনদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়াকে জাকাত বলে।

যাদের উপর জাকাত ফরয

‘সাহেবে নিসাব’ অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা তার মূল্যের মালিক সকল মুসলিম (প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন) নর-নারীর উপর জাকাত প্রদান করা ফরয। কোন ব্যক্তি মৌলিক প্রয়োজনীয় উপকরণাদি ব্যতীত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর চাঁদের হিসেবে পূর্ণ এক বৎসর অতিবাহিত হলে তার উপর পূর্ববর্তী বৎসরের জাকাত প্রদান করা ফরয।

অবশ্য যদি কোন ব্যক্তি জাকাতের নিসাবের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ঋণগ্রস্থ হয় সেক্ষেত্রে ঋণ বাদ দিয়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের উপর জাকাত ফরয হবে। জাকাত ফরয হওয়ার পর যদি কোন ব্যক্তি জাকাত প্রদান না করে টাকা খরচ করে ফেলে, তাহলেও তাকে তার পূর্বের জাকাত দিতে হবে।

নাবালেগ ও পাগলের উপর জাকাত ফরয হবে না। কারণ, তাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়না। তবে যদি কোন মস্তিষ্ক বিকৃত ব্যক্তি নিসাবের মালিক হওয়ার সময় এবং বৎসর পরিপূর্ণ হওয়ার সময় সুস্থ থাকে, কিন্তু মধ্যবর্তী সময় মস্তিষ্ক বিকৃতির শিকার হয় তাহলেও তাকে জাকাত প্রদান করতে হবে।

জাকাত যাদের দিতে হবে

জাকাত বণ্টনের ব্যাপারে আল-কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছে- ‘নিশ্চয়ই সাদাকাহ তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্থ ও জাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য।’ এটাই আল্লাহর বিধান। সূরা তাওবাহ, আয়াত ৬০।

মহা গ্রন্থ আল-কুরআনের আলোকে জাকাত ব্যয়ের খাত ৮টি। যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল।

১. নিঃস্ব ফকির: ফকির সেই ব্যক্তি যার কোন সম্পদ নেই, হালাল উপার্জনের ব্যবস্থা নেই, খাওয়া-পরা ও থাকার স্থান নেই, অন্যান্য নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই; যার ধরুন তার প্রয়োজন পূরণ হতে পারে। আবার কেউ বলেছেন, ফকির সেই ব্যাক্তি যার সামান্য সম্পদ আছে কিন্তু জীবন ধারণের জন্য অপরের ওপর নির্ভর করতে হয়।

২. অভাবগ্রস্থ মিসকিন: মিসকিন সেইসব ব্যাক্তি যাদের এমন পরিমাণ সম্পদ রয়েছে যা তার ওপর নির্ভরশীল লোকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট নয়। আবার কারো মতে, মিসকিন সে ব্যক্তি যার কিছু সম্পদ আছে কিন্তু লজ্জা-সম্মানের ভয়ে কারো কাছে হাত পাতেন না।


৩. জাকাত বিভাগের কর্মচারী: যারা জাকাত আদায়কারী, সংরক্ষণকারী, পাহারাদার, লেখক, হিসাব রক্ষক এবং জাকাতের বণ্টনকারী এদের সবাইকে জাকাতের ফান্ড থেকে বেতন দিতে হবে। তবে এমন যেন না হয়, কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে জাকাতের কোন অর্থ অবশিষ্ট না থাকে, সে ক্ষেত্রে তাদেরকে আদায়কৃত জাকাতের অর্ধেকের বেশি দেয়া যাবে না। এটা আসলে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের আওতায় পড়ে।

৪. যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন: ইসলামের জন্য যাদের মন আকর্ষণ করা প্রয়োজন কিংবা ইসলামের ওপর তাদের সপ্রতিষ্ঠিত রাখার জন্যে এমন লোকদের জাকাতের খাত থেকে জাকাত প্রদান করা। তবে অধিকাংশ হানাফি আলেমের মতে, এ খাতটি রহিত হয়ে গেছে।

৫. দাসমুক্তির জন্য: যে ক্রীতদাস তার মালিককে অর্থ প্রদানের বিনিময়ে মুক্তিলাভের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। কাযী ইবনুল আরাবী বলেন, মুসলিম দাসকে যেমনি মুক্ত করতে জাকাতের খাত থেকে দেয়া যাবে, ঠিক তেমনি মুসলিম বন্দীকে কাফিরদের দাসত্ব শৃঙ্খলা ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত করার কাজে জাকাতের অর্থ ব্যয় করা অধিক উত্তম বলে বিবেচিত হবে।

৬. ঋণগ্রস্তদের জন্য: এমন ব্যক্তি যিনি ঋণভারে জর্জরিত। তাকে জাকাতের ফান্ড থেকে সাহায্য করা। তবে যে কোন অসৎ কাজে বা অপব্যয়ের কারণে ঋণগ্রস্ত হলে তাওবা না করা পর্যন্ত জাকাতের ফান্ড তাকে দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে মৃতব্যক্তিও এর আওতায় পড়বেন, যিনি ঋণ রেখে মারা গিয়েছেন।

৭. আল্লাহর পথে: আকীদা বা বিশ্বাস ও কাজের দিক দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয় যে পথ, ফি সাবিলিল্লাহ। এর অর্থ এমন কার্যক্রমকে বুঝায় যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তা ফরয নফল ও বিভিন্ন ধরনের ইবাদত বন্দেগীকে বুঝায়। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতী (রহ:) বলেন, ফি সাবিলিল্লাহ এর অর্থ যারা ইসলাম প্রচার প্রসারের কাজে নিয়োজিত আছেন।

৮. মুসাফিরদের জন্য: এমন ব্যক্তি যার নিজ আবাসস্থলে সম্পদ আছে, কিন্তু সফরে তিনি বিপদগ্রস্থ ও নিঃস্ব অবস্থায় আছেন, তাকে জাকাতের তহবিল থেকে সাহায্য করা। জাকাতের সম্পদ ধনীর হওয়া স্বত্তেও এ ধরনের নিঃস্ব পথিকের হক রয়েছে। যদি সে তার নিজের ধন-সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর