আপনি পড়ছেন

আজ ঊনিশে রমজান। ইসলামের ইতিহাসের এক কালো দিন আজ। এ দিন ফজরের সময় আমিরুল মোমিনিন খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত আলী (রা.) লেবাসি মুসলমান মুলজিমের ছুরির আঘাতে আহত হন। দুই দিন পর একুশে রমজান আলী (রা.) শাহাদাত বরণ করেন। ইমাম গাজালি (রহ.) এহইয়াউল উলুমুদ্দিনে লিখেন, যেদিন আলী (রা.) পাপীষ্ঠ মুলজিমের ছুরির আঘাতে আহত হন, সেদিন তাকে ফজরের নামাজের জন্য ডাকলে তিনি উঠতে একটু গড়িমিসি করেন। 

fasting came to create enlightened people

তিনবার ডাকার পর তিনি উঠে নামাজের জন্য যখন মসজিদের গেটে আসেন, তখনই মুলজিম তাকে বিষাক্ত ছুড়ি দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করতে থাকে। আলী (রা.) মসজিদের দুয়ারে লুটিয়ে পড়েন।

এ দৃশ্য দেখে আলী (রা.) এর মেয়ে উম্মে কুলছুম চিৎকার করে বলেন, ফজরের নামাজের কী হলো! মুনাফিকরা এ সময়ই আমার স্বামী ওমরকে শহিদ করেছে, আজ আমার বাবাকেও তারা আঘাত করলো। এরপর আলী (রা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন।

হজরত ওমর (রা.)কেও একজন লেবাসধারী মুসলমান ছুরির আঘাতে শহিদ করে। তখন হজরত ওমর ফজরের নামাজের সেজদায় ছিলেন। ইসলামের এ দু’জন মহান খলিফার শাহাদাতের ঘটনা থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক বড় শিক্ষা রয়েছে

যুগে যুগে যারাই ইসলামের সর্বনাশ করেছে, তারা ইসলামের লেবাস পড়ে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করেছে। রাসুল সা.-এর যুগেও পোশাকি মুসলমানরাই ইসলামের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। নবীজিকে বেশি কষ্ট দিয়েছে। নবুয়তের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কুফরি শক্তি যতটা না ইসলামের ক্ষতি করতে পেরেছে, লেবাসি মুসলমানরা এর চেয়ে হাজারগুণ বেশি ক্ষতি করেছে।

এই আলী (রা.) এর পুত্র জান্নাতে যবুকদের নেতা ইমাম হাসান-হোসাইনকে লেবাসী মুসলমানরাই তো শহিদ করেছে। কারবালায় মুহম্মদি ইসলামের সূর্য তো পোশাকি মুসলমানরাই ডুবিয়েছে।

হজরত আলী (রা.) এর কিছু উপদেশ বিশ্বাসীদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। হজরত আলী (রা.) বলেন, বিপদে-মুসিবতে অস্থির হতে নেই। মুমিন সবসময় আল্লাহর ওপর ভরসা করে অটল-অবিচল থাকবে। মনে রেখো, অস্থিরতাই একটি বিপদ। তায়াক্কুল হলো আসান। আজ বিশ্বজুড়ে যে বিপদের আঁধার নেমে এসেছে, এ অবস্থায় অনেককেই হতাশ হয়ে আশা ছেড়ে দিতে দেখেছি।

কী হবে? কেমন করে হবে? কীভাবে বাঁচব? কেমন করে খাবো- এ ধরনের টেনশনে মানুষ দিন যাপন করছে। আলী (রা.) বলেন, টেনশনই একটি বিপদ। তাই তোমরা টেনশন করো না।

পৃথিবীবাসীকে উদ্দেশ্য করে আলী (রা.) বলেন, হে পৃথিবীর মানুষ শোনো! অনুশোচনা গোনাহ মিটিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, গোনাহের কারণে আসা আজাবও হটিয়ে দেয় অনুশোচনা। আজ আমাদের ওপর যে আজাব নেমে এসেছে এর সমাধানের পথ যেন মাওলা আলী বহু আগে আমাদের বলে দিয়েছেন। আমরা যদি অনুতপ্ত হয়ে অনুশোচনার আগুনে পুড়ে খোদার কাছে কান্নাকাটি করতে পারি, তাহলে আশা করি, আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর থেকে এ মহামারি তুলে নেবেন।

শেষ করছি রাসুল (সা.) এর হাদিস দিয়ে। একটি হাদিসের মর্ম এ রকম, নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে আমি নবীকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে হবে। আমাকে ভালোবাসতে হলে আমার আলীকে ভালোবাসতে হবে। যে আলীকে ভালোবাসে আমি নবী তাকে ভালোবাসব। মুনাফেক অর্থাৎ লেবাসি মুসলমান ছাড়া আর কেউই আমার আলীর প্রতি শত্রুতা রাখে না। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মনে আলী (রা.) এর মহব্বত দান করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর