আপনি পড়ছেন

ইফতার শব্দটি আরবি। যার শাব্দিক অর্থ নাস্তা করা, খাবার খাওয়া, উপবাস ভঙ্গ করা ঈত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ইফতার বলতে রোজাদার সূর্যাস্তের সাথে সাথে রোজা ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে যে হালকা খাবার গ্রহণ করে তাকে বোঝায়। রোজা রাখা যেমন একটি ইবাদত তেমনি ইফতার করা ও অন্য রোজাদারকে ইফতার করানোও ইবাদত। রমজানের রোজা রাখা ফরজ আর ইফতার করা সুন্নাত।

ramadan time

নিজে ইফতার করা এবং অন্য রোজাদারকে ইফতার করানোর মধ্যে সীমাহীন নেকি রয়েছে। তবে সেটা অবশ্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নত অনুযায়ী হতে হবে।

ইফতারের ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নত হলো, সূর্যাস্তের সাথে সাথে অনতিবিলম্বে ইফতার করতে হবে। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষ ততদিন কল্যাণের ওপর থাকবে যতদিন তারা দ্রুত ইফতার করবে। বুখারি, হাদিস: ১৯৫৭, মুসলিম, হাদিস: ১০৯৮।

হজরত আবু আতিয়্যাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার আমি ও মাসরুক হজরত আয়েশা (রা.) এর নিকট গিয়ে বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর সাহাবীদের মধ্যে দুজন এমন আছেন যাদের একজন দ্রুত ইফতার করেন এবং দ্রুত মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। আর অপরজন দেরি করে ইফতার করেন এবং দেরি করে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন।

তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, দুজনের মধ্যে কে দ্রুত ইফতার করেন এবং দ্রুত মাগরিবের নামাজ আদায় করেন? রাবী বলেন আমরা বললাম, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)ও এভাবেই করতেন। মুসলিম, হাদিস: ১০৯৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৩৫৪।

খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত। হজরত সালমান ইবনে আমের (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে, তার উচিত খেজুর দিয়ে ইফতার করা। তবে সে যদি খেজুর না পায়, তাহলে সে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ পানি পাক-পবিত্র। মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৮৪৭।

করোনা তাণ্ডবে কর্মহীন দেশের অসংখ্য মুসলমান। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তাদের অন্তর জুড়ে চেপে বসে অমাবশ্যার ঘনকালো অন্ধকার। কারণ এই রমজান মাসে বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ইফতার করার মতো কোনো কিছুই তাদের ঘরে নেই। তাই ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তাদের চোখ দিয়ে নামে বেদনার বন্যা।

সামর্থ্যবান মুসলমানগণ নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ওই সব সংকটে পড়া মানুষের জন্য ইফতার সামগ্রীর ব্যবস্থা করে তাদের মর্মবেদনা দূর করতে পারেন, বিনিময়ে কিনে নিতে পারেন মহান আল্লাহর জান্নাত।

বিশেষ সংকটের কারণে  দারিদ্র্যের শিকার মানুষগুলো দোয়া কবুলের সময় ইফতারের আগে দুটি হাত তুলে আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করবে, ‘আয় আল্লাহ! আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও, করোনা মহামারি থেকে মুক্তি দাও, ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমরা সকলে আপনার হয়ে উঠতে পারি, তাওফিক দাও।’

এ ছাড়া রোজাদারকে ইফতার করালে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়ার লোভনীয় অফার তো রয়েছেই।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো- ইফতারের সময়, আর অন্যটি হলো- কেয়ামত দিবসে আল্লাহর সাক্ষাৎ। বুখারি ও মুসলিম

তাই আসুন! আমরা দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াই। তাদের ঘরে ইফতার পৌঁছে দিয়ে ওই সময় তাদের আনন্দিত হওয়ার ব্যবস্থা করি। তাহলেই আমাদের আনন্দও সত্যিকারের আনন্দ হবে এবং আল্লাহর সাক্ষাৎ আরো সহজ হবে। আল্লাহ আমাদের সেই বুঝ ও আমল করার তাওফিক দিন।

লেখক : পেশ ইমাম, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর