আপনি পড়ছেন

আজ মাহে রমজানের দ্বিতীয় দশকের শেষ দিন। মাগফিরাতের বিশেষ বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাবে আজ। রহমতের বৃষ্টি শেষ। আজ মাগফিরাতের বৃষ্টিও শেষ হয়ে গেলো। এখন শুধু বাকি আছে নাজাতের দশক।

free arabian nights vector illustration

হজরত ওমর (রা.) প্রায়ই একটি কথা বলতেন আর কাঁদতেন। তিনি বলতেন, আল্লাহ যদি আমাকে মানুষ না বানিয়ে ভেড়া-বকরি বানাতেন, তাহলে কতই না ভালো হত। আল্লাহর বান্দারা আমার গোশত খেয়ে আল্লাহর ইবাদত করত। হায়! মানুষ হওয়ার কারণে কত দায়িত্ব আমার কাঁধে চেপেছে। সব দায়িত্ব তো ঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। কেয়ামতের দিন কী জবাব দেবো আল্লাহর কাছে।

আল্লাহ যদি আমাকে বলতেন, হে ওমর! তোমাকে আমি মাফ করে দিয়েছি, দুনিয়ার মানুষ বিশ্বাস করো! এর চেয়ে বড় পাওয়া এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কিছু আমার জন্য হতে পারে না।

এক মস্ত বড় আল্লাহর অলি ভক্ত মুরিদদের নিয়ে বসে আছেন। এমন সময় একজন ভক্ত জিজ্ঞেস করল, হুজুর! আপনি তো কামেল মানুষ। আপনি অবশ্যই জান্নাতে যাবেন। ভক্তের এমন কথা শুনে ডুকরে কেঁদে ওঠলেন আল্লাহর অলি। তিনি বললেন, জান্নাত তো দূরের কথা, আল্লাহ যদি দয়া করে রহম করে জান্নাতিদের পায়ের পাপোশও আমাকে বানিয়ে দেন, এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কী হতে পারে? জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে তো বাঁচা যাবে।

ইমাম গাজালি (রহ.) লেখেন, একদিন আল্লাহর নবী (সা.) জিবরাইল ফেরেশতাকে বলেন, হে জিবরাইল! তোমার সঙ্গে মাঝে মাঝে মিকাইল ফেরেশতাকেও দেখি। যতবার তাকে দেখেছি, ততবারই গম্ভীর মুখে ছিলো সে। কখনো হাসতে দেখিনি তাকে। এর কারণ কী?

জিবরাইল ফেরেশতা বলেন, আল্লাহর নবী! ফেরেশতাদের মধ্যে মিকাইল ছিলো সবচেয়ে হাশিখুশি ফেরেশতা। মুখে হাসি লেগেই থাকত তার। কিন্তু যেদিন জাহান্নাম বানানো শেষ হলো, আর আমরা সবাই জাহান্নাম ঘুরে দেখলাম, সেদিন থেকে মিকাইলকে আর হাসতে দেখা যায়নি। সে বলে, না জানি এ জাহান্নামে আমাকেই ফেলা হয়। এত আজাব সহ্য করার ক্ষমতা মিকাইলের নেই। এ কথা বলেই জিবরাইল খুব গম্ভীর হয়ে বললেন, শুধু মিকাইল কেনো ফেরেশতাদের সর্দার জিবরাইলেরও এক মুহূর্ত জাহান্নামের আজাব সহ্য করার শক্তি নেই। আপনি অবশ্যই আপনার উম্মতকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি নিশ্চিত করে কবরে যেতে বলবেন। দাকায়েকুল আখবার।

আরেকদিনের ঘটনা। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকাকে নবীজি (সা.) বলেন, হে আয়শা! আল্লাহর দয়া না হলে কেউই জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচতে পারবে না। আয়শা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী! আপনিও না। নবীজি (সা.) বললেন, হ্যাঁ আয়শা! আল্লাহর দয়া না হলে আমিও জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারব না। তবে আমার প্রভু আমাকে ওয়াদা করেছেন, তিনি আমাকে দয়া করবেন।

আমরা যেনো খুব সহজেই নাজাত পেতে পারি, তাই আল্লাহ তায়ালা রমজানের শেষ দশটি দিন হাত খুলে বসে আছেন। যে চাইবে তাকেই নাজাত দেয়া হবে। যে কাঁদবে তাকেই ক্ষমা করে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় নাম টুকে নেয়া হবে। তাই আসুন! জাহান্নাম থেকে মুক্তির আগামী দশটি দিন আল্লাহর কাছে কেঁদেকেটে মুক্তি নিশ্চিত করি।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর