আপনি পড়ছেন

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য এই মাসের ফজিলতগুলি অন্বেষন করা ঈমানের দাবি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বহু মানুষের জন্য এ মাস কেবল বৈচিত্র্যময় ও মজাদার ইফতার ও সেহরি খাওয়ার উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। এ সবের এন্তেজামে অর্থের সাথে সাথে ব্যয় হয় অমূল্য সময়। সময় অবিরাম বয়ে চলে। চলে যাওয়া সময় পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ ব্যয় করেও আমরা কেউ ফেরত পাব না। আজ রমজানের চতুর্থ দিন। যে তিনটি দিন চলে গেল তার একটা মুহূর্তও ফিরিয়ে আনা যাবে না। আমাদের অক্ষমতা ও অসহায়ত্বের গভীরতা বুঝতেও আমরা অক্ষম।

ramadan 2021 startedপ্রতীকী ছবি

তার চেয়েও বেশি দুর্ভাগ্যজনক আমাদের অজ্ঞতা। এই যে সময় চলে যাচ্ছে সেহরি-ইফতার সামগ্রী ক্রয়ে, ইফতার ও সেহেরির প্রস্তুতির জন্য রান্নাঘরে, তা কি আর ফিরে পাওয়া সম্ভব? আমাদের মা-বোনদের কি রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের প্রয়োজন নেই? নাকি আমাদের জন্য রান্না-বান্না করলেই তা তাদের হাসিল হয়ে যাবে? মা-বোনেরা চলমান সময়ের মূল্য উপলব্ধি করুন। বাড়ির সবার সাথে বসে একটা গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিন। একান্ত যতটুকু প্রয়োজন তার থেকে বেশি সময় রান্নার কাজে ব্যয় করবেন না।

মনে রাখবেন কবরে বা হাশরে ইফতারীর নতুনত্ব বা পরিমাণ সম্পর্কে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। রান্না ও ঘরের কাজের সময় নিজের অন্তর ও জবানকে সাধ্যমতো জিকিরে ব্যস্ত রাখতে সচেষ্ট থাকুন। অত্যধিক খাদ্য গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ইবাদত-বন্দেগীর জন্যও ক্ষতিকর। অতি ভোজন সৃষ্টি করে আলস্য, যা সব ধরনের ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। সব কাজের জন্য ফিটনেস জরুরি, ইবাদত-বন্দেগীর জন্যও আরো বেশি। ভরাপেটে ইবাদত হয়ে পড়ে অস্বস্তিকর। আল্লাহর ভয়, গুনাহর চেতনা, ক্ষমা চাওয়ার আন্তরিকতা ও জাহান্নামের ভয়ে চোখের পানি ফেলা হয়ে উঠে দুষ্কর। অতএব মূল বিষয়ে সবাই মনোযোগী হই, রমজানে আমাদের আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত হাসিল করতে হবে। গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে হবে। সেই কাজেই সর্বাত্মক নিয়োজিত হতে সচেষ্ট হই।

৭. সাদাকায়ে ফিতর রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতির কাফফারা। যথাসময়ে সাদাকায়ে ফিতর (ফিতরা) আদায় করতে হবে। সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব। রসুল সা. সাদাকায়ে ফিতর এক সা’ নির্ধারণ করেছেন। তিনি (ঈদের) নামাজে যাওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন (বুখারী: ১৪০৬ এবং মুসলিম: ২১৪৬-৪৭)।

আমাদের দেশের প্রচলিত হিসাব অনুযায়ী এক সা’ ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের সমপরিমাণ। সাদাকায়ে ফিতর আদায়ের মাধ্যমে ঈদের দিন গরীবদের ধনী করে দাও- এটিই নবী সা.-এর নির্দেশ। যাতে গরীব-মিসকিনরা ঈদের দিনের আনন্দে শরীক হতে পারে। তাই ২/৫ টাকা করে অনেককে না দিয়ে নিজ নিজ নিকস্থ গরীবদের হক আদায় করে ফিতরা দেয়া উচিত।

৮. রমজান মাসে প্রতিটি নফলের সওয়াব অন্য মাসের ফরজের সমান। তাই এ মাসে ফরজের সঙ্গে সঙ্গে সুন্নত ও নফলসমূহ বেশি বেশি করে আদায়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে কিয়ামুল লাইল তথা তারাবী আদায়, শবে কদর তালাশ এবং বেশি বেশি দান-সদকা করা জরুরি। তারাবীর রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিতর্কে না জড়িয়ে প্রত্যেকে যথাযথভাবে তা আদায়ে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। সুন্নাত বা নফল নিয়ে বিতর্ক করে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা শরীয়তে নিষিদ্ধ। তারাবীতে অস্বাভাবিক দ্রুত কুরআন খতম না করে নবী সা.-এর অনুকরণে ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে কুরআন তেলাওয়াত করা প্রয়োজন। রসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাতে দীর্ঘ সময় ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাতেন। সলাতে দীর্ঘ সময় কুরআন পাঠ করতেন। কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতেন। আমরাও সাধ্যমতো সচেষ্ট হই। রমজানের শেষ ১০ দিন বেশি বেশি করে নিচের দোয়াটি পড়ি।

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করতে আপনি ভালোবাসেন। আমাকে ক্ষমা করে দিন)।

দোয়া মুমিনের হাতিয়ার: রোজাদারের দোয়া আল্লাহ পাক ফিরিয়ে দেন না। তাই গোটা রমজানে দিনে রাতে বেশি বেশি দোয়া করতে সচেষ্ট হই। দোয়া করি নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য, সকল মুসলিমের জন্য এবং গোটা বিশ্ব মানবের জন্য। দোয়া করি বিশুদ্ধ ঈমানের জন্য, সহীহ আমলের জন্য, হালাল রিজিকের জন্য, সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য, দ্বীন ইসলামের সার্বিক বাস্তবায়নের জন্য, আল্লাহর বান্দারা যে যেখানে দ্বীনের পথে সহীহভাবে চেষ্টা করছেন, তাদের ঈমান, এলেম, আমল, আখলাকের তরক্কি এবং হিম্মত ও সাহস বাড়িয়ে দেয়ার জন্য এবং তাদের রিজিক, দৌলত ও সন্তান-সন্ততিতে বরকতের জন্য।

বিশেষত: এই মহামারির সময় সকল মানুষের নিরাপত্তা, রোগমুক্তি, হেদায়াত ও হায়াতে তৈয়্যেবার জন্য দোয়া করি। আরো দোয়া করি সুন্দর জীবনের জন্য, সুন্দর মৃত্যুর জন্য, কবরের জীবনকে সুন্দর করে দেয়ার জন্য এবং আখিরাতে নেককার বান্দাদের সাথী হয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য। সেই সাথে গভীর আবেগ নিয়ে দোয়া করি আমাদের মরহুম-মরহুমা আব্বা-আম্মা, মুরব্বিয়ান এবং সকল নেককার বান্দা-বান্দী যারা ঈমান নিয়ে কবরে শুয়ে আছেন, তাদের গুনাহ-খাতা মাফ করে নাজাতের জন্য। সামগ্রিকভাবে ইসলাম ও মুসলমানের কল্যাণের জন্য দোয়া করি। আরেকটা কথা- বুঝে বুঝে দোয়া করি, দোয়া যেন মুখস্থ কিছু কথা না হয়ে যায়

দোয়া বান্দা ও মালিকের মাঝে একান্ত কথোপকথন (মুনাজাত)। হাদিস অনুযায়ী, বান্দা নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর সাথে মুনাজাত তথা একান্ত কথোপকথনে লিপ্ত থাকে (বুখারী)। তাই নামাজের বিষয়গুলো বুঝে বুঝে পড়ি এবং সার্বিক জীবনে আল্লাহর সাথে কথা বলতে অভ্যস্ত হই। আল্লাহকে বলি- আমাদের বেদনার কথা, বঞ্চনার কথা, চাহিদার কথা। দোয়ার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করি, তাঁর সুন্দর সুন্দর নামগুলোর ওসিলা করে দোয়া করি। দোয়ার শুরুতে, শেষে ও মাঝে রসুলের ওপর দরুদ পড়ি।

ব্যাপক অর্থবোধক দোয়াগুলি বেশি বেশি পড়ি। যেমন- ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতও ওয়াক্বিনা আজাবান নার’ (সুরা বাকারা ২: ২০১)। (হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে নাজাত দান করুন।’

আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা, ওয়াত্তুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা’ (মুসলিম)। (হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে হেদায়াত তাকওয়া নিরাপত্তা ও স্বচ্ছলতা কামনা করছি।) ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিইয়াতা ফিদুন্নীয়া ওয়াল আখিরাহ’ (হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও নিরাপত্তা কামনা করছি।)

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর