আপনি পড়ছেন

মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন: “আল্লাহ মুমিনদের জন্য দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন ফিরআউনের স্ত্রীর, যে প্রার্থনা করেছিল: হে আমার রব; তোমার সান্নিধ্যে জান্নাতে আমার জন্য একটা ঘর নির্মাণ করো এবং আমাকে উদ্ধার কর ফিরআউন ও তার অপকর্ম থেকে এবং আমাকে উদ্ধার কর যালিম সম্প্রদায় হতে।” (তাহরীম ৬৬ : ১১)

ramadan and al quaran 2

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লোক হলো সে, যে তার স্ত্রীর নিকট সবচেয়ে ভাল।’ (তিরমিযী)

সুরা তাহরীমের আয়াতখানিতে মহান আল্লাহ তা’য়ালা ফিরআউনের স্ত্রী- বিবি আসিয়াকে মুমিনদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। লক্ষণীয়, শুধু মুমিন নারীদের জন্য নয়। মুমিন নারী-পুরুষ সবার জন্যই তিনি দৃষ্টান্ত। এ এক অনন্য মর্যাদা।

এই মহিয়সী নারী মুসা (আ.)-এর দাওয়াতে ঈমান এনেছিলেন এবং তার ঈমানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে ফিরআউন তাকে হত্যা করে। তার উপর নির্যাতনের সময় অথবা সেরকম পরিকল্পনা চলাকালীন সময় বিবি আসিয়া এই দোয়া করেন। আল্লাহপাক তার দোয়া কবুল করেন এবং ফিরআউন নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধির আগেই তাকে নিজ সান্নিধ্যে ডেকে নেন। চিন্তা করা যায়! তার যামানার ইসলামের সবচেয়ে বড় দুশমন তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাবানের বেগম ছিলেন এই মহিলা।

তিনি জানতেন তার সাথে কি আচরণ করা হবে। তিনি দেখেছিলেন মুসা (আ.)-এর উপর ঈমান আনার অপরাধে ইতিপূর্বে ফিরআউনের প্রাক্তন দোসর যাদুকরদের উপর অত্যাচারের কি ভয়ংকর খরগ নেমে এসেছিল। তবুও তিনি তার ঈমানকে প্রকাশ করেন। কেন করেছেন- হয়তো আশা করেছিলেন ফিরআউন তার ঘরের মানুষ ঈমান আনায় কিছুটা হলেও সংযত হবে। হয়তো বা চাইছিলেন জানিয়ে দিতে যে, স্বৈরাচার কারো মনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে না; সত্যের প্রতি আত্মসমর্পণের অধিকার সব মানুষের আছে; ফিরআউনের অনুমতির তাতে প্রয়োজন নেই; সে চাইলেই সত্য গ্রহণে কাউকে বাধা দিতে পারে না- এ চরম মহাসত্যকে তৎকালীন সর্বময় প্রভু হিসেবে দাবীদার ফিরআউনের সামনে প্রকাশ করে দিতে। তিনি কি জানতেন না তার সাথে কি রকম আচরণ করা হবে? সম্ভবত: জানতেন, তা সত্ত্বেও ঈমানের দাবীতে পিছিয়ে থাকেননি। নির্যাতনের মুখেও অটল থেকেছেন। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’য়ালা তাঁর মহান কিতাবে এই সম্মানিত মহিলাকে স্থান দিয়ে তার নামকে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। আরেক মহিয়সী নারী ঈসা (আ.)-এর মায়ের সাথে তার নাম উচ্চারণ করেছেন। বিবি মরিয়মের আগে তার নাম উল্লেখ করেছেন। এ এক অভূতপূর্ব মর্যাদা।

আল্লাহতা’য়ালা ঈমানের পথে তার এই অবিচলতা এবং ত্যাগ ও কুরবানীকে কিয়ামত তক সমস্ত মানুষের জন্য অনুসরণীয় করে দিয়েছেন। দুঃখজনকভাবে গল্প-কাহিনীর উপাদানের উর্ধে তাকে আমরা চিনি না। তার মহান আদর্শের কথা জানি না। সেই আদর্শ অনুসরণের যেই তাগিদ নিয়ে কালামে পাকে তার ঘটনা উল্লেখিত হল তার কোনো প্রাসঙ্গিকতা ও বাস্তবতা আজকের মুসলমানদের মধ্যে নেই।

তৎকালীন দুনিয়ায় সর্বোচ্চ সুখ-সম্ভোগ, আরাম-আয়েশ, সম্মান-মর্যাদা আর ক্ষমতাকে পায়ে ঠেলে সম্মানিতা এই নারী ঈমানের দাবী পূরণে চরম ত্যাগ স্বীকারে এগিয়ে এলেন। অন্যদিকে, আজকের মুসলিম নারী-পুরুষ সেই ভোগবাদী জীবনকেই বেছে নিয়েছে। মুসলিম নারীরা আজ রূপচর্চা, শাড়ী-গহনা-অলংকার সংগ্রহ, দামী ফার্নিচারে ঘর সাজানো এবং সেগুলো ফেসবুকে প্রদর্শন করাকে নিজেদের কৃতিত্ব ও সফলতা হিসেবে গ্রহণ করেছে।

উম্মতে মুহাম্মাদীর আদর্শ স্থানীয়া নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম অবস্থানে আছেন উম্মুল মুমেনীনগণ অর্থাৎ নবী (সা.)-এর সম্মানিতা স্ত্রীগণ। কেমন ছিলেন উম্মতের আম্মাজানেরা?

আল্লাহতা’য়ালা বলেন,

“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের অর্থাৎ মুমিনদের মা।” (আহযাব ৩৩: ৬)

নবী (সা.)-এর সম্মানিতা স্ত্রীগণ কেমন ছিলেন? তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন অপরূপা সুন্দরী কুমারী, কেউবা সুন্দরী বিধবা, কেউবা বয়স্কা, কেউবা ফর্সা কেউবা কালো। তারা ছিলেন বিদুষী, সংগ্রামী, সন্তানশীলা ও সন্তানহীনা। ছিলেন আরব কুরাইশদের মধ্য হতে আবার কেউবা ছিলেন আহলে কিতাবীদের মধ্য হতে। কিন্তু তারা সবাই ছিলেন-

>আল্লাহ ও রসুলের অনুগতা

>আল্লাহর পথে নবীর একান্ত সাথী

>দ্বীনের পথে চরম কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারকারিনী

তাদের কোনো আলিশান ঘর, নানা রকম আসবাব এমনকি নিয়মিত ক্ষুধার অন্নটুকুর নিশ্চয়তা ছিল না। বহুদিন এমন গেছে ঘরে এক নাগাড়ে চুলা জ্বলেনি। শুধু খেজুর ও পানি খেয়ে তারা জীবনযাপন করেছেন। তবুও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হাসিমুখে সবর করেছেন। তারাই তো মুসলিম নারী সমাজের আদর্শ, তারাই তো অনুসরণীয়। তাদেরকে বাদ দিয়ে আমাদের মা-বোনেরা আজ কোথায় যাচ্ছেন?

মুমিন নারীদের বৈশিষ্ট্য

আল্লাহ বলেন-

“অবশ্যই আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, সবরকারী পুরুষ ও সবরকারী নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, সাওম পালনকারী পুরুষ ও সাওম পালনকারী নারী, গোপনাঙ্গ হিফাযতকারী পুরুষ ও গোপনাঙ্গ হিফাযতকারী নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী- এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।” (আহযাব ৩৩: ৩৫)

আল্লাহ কি নারী-পুরুষে বৈষম্য করেছেন? এ আয়াত তো তা বলেন না। এ আয়াতে উল্লিখিত প্রতিটি হুকুম যা একজন নারীর প্রতি তা সমানভাবে প্রযোজ্য একজন পুরুষের প্রতি। দুনিয়ার জীবন পরিচালনা আল্লাহ পাক একেক জনকে একেক কর্মক্ষেত্র দিয়েছেন। তার জন্য উপযোগী শারীরিক ও মানসিক গঠন দিয়ে নারী-পুরুষকে তৈরি করেছেন। এর জন্য সামঞ্জস্যশীল অধিকার নির্ধারণ করেছেন।

নারী অধিকারের নাম করে আমাদের বোনেরা আজ যা চাচ্ছেন তা আসলে কি? তারা পুরুষের মতো চলছেন, তাদের মতো পোশাক পরছেন। তো? পুরুষকেই তো Standard বানালেন। তাতে নারীর মার্যাদা বাড়লো কিভাবে? আটোসাটো সংক্ষিপ্ত পোশাক পরলেন। তো? সেই তো বিকৃত পুরুষের লালসার উপযোগী করে উপস্থাপন করলেন নিজেকে। এতে কিভাবে নারীর মর্যাদা বাড়ছে সে প্রশ্ন বুদ্ধিমতী জ্ঞানবতী মা-বোনেরা নিজেদের করুন।

ফেস ক্রিম মেখে নিজের রং উজ্জ্বল করে বা বলিউড হলিউডের নায়িকাদের মতো জিরো ফিগার আপনি করতে চাচ্ছেন কার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য? বিকৃত রুচির পুরুষের। তো এতে নারীর মর্যাদা বাড়লো কিভাবে?

আচ্ছা সৃষ্টিকর্তা একেকজনকে একেক বর্ণের ও গঠনে তৈরি করলেন। সবার মধ্যেই রয়েছে সৌন্দর্য। সবাইকে ফাউন্ডেশন মেখে একই রং একই চেহারার করতে হলে তার মধ্যে বৈশিষ্ট্য কি আছে বোধগম্য নয়। শ্যামলা বর্ণের শ্বাশুড়ীরা ফর্সা বউ খুঁজতে বিয়ের বাজার তোলপাড় করে ফেলেন। এক মার দাবী- আমি আমার ছেলের জন্য আয়িশা (রা.), খাদীজা (রা.)-এর মতো দ্বীনদার মেয়ে চাই। তাকে হতে হবে দ্বীনদার-পর্দানশীল। সেই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, ফর্সা, লম্বা, দীর্ঘ কালো চুলের অধিকারী ও আধুনিকা। শুনে তো আক্কেল গুড়ুম হওয়ার জোগাড়।

বলছি নারী নির্যাতন পুরুষরা যা করে তার থেকে বহুগুন বেশি করে নারীরা। কন্যা সন্তান হলে বউয়ের দুর্নাম শুরু করেন শ্বাশুড়ীরাই। আরেক মুখরা বউ-শ্বাশুড়ীর কথা শুনুন। আবারো মেয়ে হলো বলে শ্বাশুড়ীর খোটা- ‘হয়েছে একটা মেয়েই।’ বউয়ের জবাব- আপনার ছেলে যে বীজ দিয়েছে তাই হয়েছে। শুনতে খারাপ লাগলেও উচিত জবাব। সন্তান হয় না বউয়ের দোষ। দোষ তার ছেলেরও যে হতে পারে তার খবর নেই বেচারীর। যৌতুকের জন্য, কন্যা সন্তান জন্ম দেয়া বা সন্তান না হওয়ার অপরাধে (!?) স্ত্রীর অধিকার দাবী করার অপরাধে শ্বাশুড়ীরা তাদের বউদের ঘরে ঘরে নির্যাতন করছেন আজ। আল্লাহ বানালেন তাকে ঘরের রানী (রব্বুল বাইত)। আর আমরা তাদের ব্যবহার করছি যেন চাকরানী। এভাবে ওই বউকেও শ্বাশুড়ী ভবিষ্যতে আরেকজনকে নারীকে নির্যাতন করার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। অনেক জায়গায় বউরাও শ্বাশুড়ীদের ওপর নির্যাতন করছেন। এ এক vicious circle বা ভয়ংকর চক্র। এটা ইসলামের শিক্ষা নয়। জাহেলিয়াতে ডুবে থাকা সমাজ ব্যবস্থার কুফল। অন্যান্য ধর্মে নারীকে মানুষই বিবেচনা করা হয়নি। কেবল ইসলামই নারীকে ইনসানিয়াতের মর্যাদা দিয়েছে। একজন অপরজনের পরিপূরক, একজন ছাড়া অপরজন অচল। (তাওবা ৯: ৭১) কেউ কারো প্রভু নয়। পরস্পর পরস্পরের সহযোগী-বন্ধু-সাথী। দুনিয়ার এই পরীক্ষায় এটাই ইসলামের শিক্ষা। আর পুরুষের যে বাড়তি অধিকারের কথা বলা হয়েছে, সে তো তার দায়িত্ব। সে নারীর তত্ত্বাবধায়ক। নারীর জীবনের সুষ্ঠুতা, সুস্থতা ও নিরাপত্তার সে ব্যবস্থাপক। আল্লাহ চাইলে সে দায়িত্ব নারীকেও দিতে পারতেন। তিনি যাকে যেভাবে তৈরি করেছেন তাকে সেভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন। তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় পুরুষকে মাতৃত্বের স্বাদ দেয়া বা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর দায়িত্ব অর্পণ করা। জাতিসংঘ বা প্রভাবশালী রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারীরা এখানে অচল। তবে সম্ভব আল্লাহর ব্যবস্থার নিকট আত্মসমর্পণ করে তার ইনসাফ ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা অনুসরণ করে দুনিয়ার জীবনে সুখী হওয়া ও আখিরাতে জান্নাত লাভ করা। এ দুটোই তো সবার চূড়ান্ত কাম্য, তাই না।

তাই নিজে আল্লাহর বান্দী হয়ে যান, পুরুষকেও আল্লাহর বান্দা হওয়ার দাবী জানান। আল্লাহর দেয়া অধিকারগুলোর দাবী করুন-

>নারীত্বের অধিকার

>মোহরানার অধিকার

>স্ত্রীর ন্যায্য অধিকারগুলো

>পুত্র সন্তানের মতোই কন্যান সন্তানের সমানভাবে লালিত-পালিত হওয়ার ও শিক্ষা লাভের অধিকার

>বিবাহে তার অনুমতির অধিকার

>পর্দা মাফিক পবিত্র জীবন যাপনের অধিকার- স্বামীর ভাই-বন্ধুদের খেদমত করা স্ত্রীর দায়িত্ব নয়- এটা স্বামী ও শ্বাশুড়ীদের মানতে হবে। ইসলামী মাইন্ডেড বউ চাই, নেকাবওয়ালী বউ চাই। অথচ নিজের ঘরে পর্দা নেই। তাহলে কিভাবে হবে?

কেউ প্রশ্ন করতে পারেন নারীত্বে অধিকার আবার কি? নারী হিসেবে মর্যাদার অধিকার। পুরুষের মতো চলে, চাকরী করে চাকরীস্থলে বৈষম্য ও লালসার শিকার হয়ে নয়, নারী হিসেবেই আল্লাহ আমাকে যে মর্যাদা দিয়েছেন তা দিতে হবে।

>অধিকার ও দায়িত্ব পাশপাশি চলে। আমার অধিকার তো অন্যের দায়িত্ব। আমার অধিকার আছে তো অপরেরও অধিকার আছে। না জানলে মানার প্রসঙ্গ অবান্তর, তাই মা-বোনদের কাছে আহবান- বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর এবং নারীকে সস্তা পণ্য হিসেবে ব্যবহার করার জন্য বিকৃত-বিভ্রান্ত পুরুষদের বানানো ও নারীবাদীদের অলীক নারী স্বাধীনতার মরিচীকার পিছনে ছুটবেন না। নারী-পুরুষ সবাই আমরা আল্লাহরই বান্দা-বান্দী। আল্লাহর বান্দা-বান্দী হওয়ার মধ্যেই মানব জীবনে শ্রেষ্ঠত্ব ও সার্থকতা। তা অর্জন করতে চাইলে সে বিষয়ে সবাইকে জানতে হবে। নারীকে নিজেকে জানতে হবে। জানাতে হবে তার পরিবারের অন্য নারী সদস্যদের, আর জানাতে হবে পুরুষ সদস্যদের তথা স্বামী-সন্তান, পিতা-ভাইদের।

রমজান আসে এই সওগাত নিয়ে। নারী আপনার মুক্তির মহাসনদ আল-কুরআন নাযিল হয়েছে এ মাসেই। এ মাসেই কুরআন চর্চার শ্রেষ্ঠ সময়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মা-বোনেরা রান্নাঘর ও মার্কেটেই পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

রমজানের আর কটা দিন বাকী। লাইলাতুল কদরের সময়তো চলে যাচ্ছে। আপনার চাওয়া-পাওয়া, দুঃখ-বেদনা, আশা-আকঙ্ক্ষা, দুনিয়ার জন্য, আখিরাতের জন্য আপনার মালিকের কাছে পেশ করার সুবর্ণক্ষণ তো চলে যাচ্ছে। আর আপনি কিনা রান্নার নানা নতুন পদ নিয়ে ব্যস্ত। দোকানীর সঙ্গে তর্কে চলে যাচ্ছে শালীনতার সাথে সাথে মহামূল্যবান সময়। পরিবারের লোকদের সাথে বোঝাপড়া করে নিন। তোমার মতো আমারও আখিরাত আছে, আছে কবরের প্রশ্ন, হাশরের প্রশ্ন। ফুলসিরাত তো আমাকেও পার হতে হবে। নবীর শাফায়াত ও হাউজে কাউসারের পানি তো আমারও দরকার। আমারও তো লাইলাতুল কদর দরকার। আমার নামায আছে, কুরআন বুঝে বুঝে তো আমাকেও পড়তে হবে। মালিক তো তা আমার জন্যও নাযিল করেছেন। আমাকে বিবি আসিয়া, মা খাদিজা, আয়িশার- মতো হতে হবে। আমাকে আমার অধিকার দেয়া হোক।

আমরা পুরুষরাও রমজানের এই শেষ বেলায় ইবাদতে মনোযোগী হই। রান্নাঘরের চাপ কমিয়ে দেই মা-বোনদের জন্য। ঘরগুলো নামায, যিকির, দোয়া ও কুরআনের গুঞ্জরণে মুখরিত হয়ে উঠুক। আলোকিত হয়ে উঠুক আমার পরিবার, আমাদের সমাজ, আমাদের জাতি।

সবাই মনে রাখি, বিবি খাদীজাই রসুলুল্লাহকে তার নবুয়তের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন, আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিজের ফুফাত ভাই ওয়ারাকার কাছে নিয়ে গেছেন। মনে রাখি নবীর বংশ তার কন্যান সন্তান বিবি ফাতিমা থেকেই। আরো মনে রাখি; এই উম্মতের পবিত্র চরিত্র দুঃসাহসী ও বুদ্ধিমতী মহিলাদের জন্যই পুরুষরা বিশ্বজয়ে দুর্দমনীয় হতে পেরেছিলেন। তাদের গর্ভেই দুঃসাহসী ও দিগ্বিজয়ী বীরেরা এবং বিশ্বকে জ্ঞানের আলোতে উদ্ভাসিত করনেওয়ালা মুফাসসির, মুহাদ্দিস, শায়েখ ও বিজ্ঞানীরা জন্মেছিলেন। তাদের দুধ খেয়েই লালিত-পালিত হয়েছেন তারা।

মানব জাতির জন্য আদর্শ স্থানীয়া হয়ে আছেন বিবি আসিয়া, ঈসা (আ.)-এর আম্মা বিবি মরিয়ম, মুসা (আ.)-এর আম্মা, বিবি খাদীজা, বিবি আয়িশা ও উম্মুল মুমিনীনগণ, বিবি ফাতিমা (রা.), মহিলা সাহাবীগণ (রা.), ইমাম শাফেয়ীর (রহ.) আম্মা, ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের আম্মা আরো অসংখ্য মহিয়সী নারী। শায়েখ আকরাম নদভী তার ‘মুহাদ্দিসাত’ গ্রন্থে প্রায় এক হাজার মহিলা মুহাদ্দিস ও ওস্তাযাহর নাম একত্র করেছেন, যারা বিভিন্ন যুগে উম্মতের শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের কেউ কেউ ইসলামের সেই প্রাথমিক যামানায় মদীনা, মিশর, বসরা, কুফার প্রভৃতি ইসলামী জ্ঞান কেন্দ্রগুলিতে Visiting Professor হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের সম্মানিতা নারীগণ ছিলেন-

বিবি আসিয়া – প্রবল প্রতাশালী ফিরআউনের স্ত্রী

বিবি মরিয়ম- সতী-সাধ্বী নারীদের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় নিপতিত single mother.

মুসা (আ.)-এর আম্মা- দাসত্বের মধ্যে নবীর মাতৃত্বের দায়িত্ব পালনকারী।

বিবি আয়িশা- নিঃসন্তান ছিলেন। কিন্তু উম্মতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষক তিনি। তবে ভাই ও বোনের ছেলেদের নিজের তত্ত্ববধানে রেখে শিক্ষা দিয়েছেন। তাই যেসব বোনের সন্তান নেই, তারা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করুন। যাকারিয়া (আ.)-এর মতো আল্লাহর কাছে নেক সন্তানের জন্য দোয়া করুন। নিজে ইসলাম শিখুন, মাহরাম আত্মীয়দেরকে ইসলাম শিক্ষা দিন এবং সাধ্যমতো নিজের সময়কে ইসলামের দাওয়াতের কাজে লাগান। যেসব সম্মানিত বোনদের সন্তানরা বড় হয়ে গেছে এবং তারা অবসর, কাজ পাচ্ছেন না তারাও নিজের জীবনকে এভাবে অর্থবহ করে তুলুন। গল্প করে, আড্ডা মেরে, টিভি সিরিয়াল দেখে নিজের সময় ও জীবন ধ্বংস করবেন না।

ইমাম শাফেয়ীর আম্মা- তিনিও single mother, সন্তানের লেখা-পড়াকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে ফিকাহর এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইমাম তৈরির পথ করেছেন।

ইমাম হাম্বলের আম্মা- তিনিও ছিলেন single mother, প্রচণ্ড অভাব সত্ত্বেও সন্তানের লেখাপড়ার ক্ষতি কথা চিন্তা করে তাকে কাজ করতে দেননি। নিজে প্রত্যেক দিন ফজরের আগে সন্তানকে হাতে ধরে মসজিদে পৌঁছে দিতেন নামায ও দারসের জন্য। সাথে করে তাকে নিয়ে বিভিন্ন শায়খদের দারসে যেতেন।

এই হলো উম্মতের আদর্শ স্থানীয়দের কয়েকজন মহিয়সী নারীর উদাহরণ। অতএব, আমাদের মেয়েদের শুধু সাজতে-গুজতে শিখিয়েন না, তাদের আদর্শ, যোগ্য, শিক্ষিত-জ্ঞানী-সচ্চরিত্রবান ও দ্বীনদার মুসলিম নারী হিসেবে গড়ে তুলি। আদর্শ জাতি গঠনে নিজেদের ভূমিকা পালন করি, জবাবদিহির জন্য তৈরি হই। আল্লাহ বলেন-

ক্বু আন্ ফুসাকুম ওয়া আহলীকুম না-রা।” “তুমি তোমার নিজেকে ও পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।” (তাহরীম ৬৬: ৬)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা আমাদের সবাইকে সেই বুঝ ও তাওফীক দান করুন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর