আপনি পড়ছেন

মহান আল্লাহতা’লা বলেন: “সময়ের কসম। নিশ্চয় মানুষ বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, একে অপরকে হক কথা ও সবর করার উপদেশ দিয়েছে।” (সুরা আসর : ১-৩)

ramadan and al quaran

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: দুটি নেয়ামতের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই ধোকার মধ্যে আছে। তা হচ্ছে- সুস্থতা ও অবসর।

আমার পুঁজি যে ফুরিয়ে যাচ্ছে:

ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (রহ.) পূর্বকালের এক ইসলামী চিন্তাবিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তিনি বলেছেন- বাজারে এক বরফ বিক্রেতার কাছ থেকে তিনি সুরা আসরের তাৎপর্য উপলব্ধি করেছেন। ওই বরফ বিক্রেতা বাজারে লোকদের ডেকে ডেকে বলছিল- ‘দয়া করো এমন একজনের প্রতি যার পুঁজি গলে যাচ্ছে।’ বরফ বিক্রেতার পুঁজি বরফ। যতই সময় যাবে বিক্রি না হলে তার পুঁজি গলে নিঃশেষ হয়ে যাবে। দুনিয়ার জীবনে মানুষের আয়ু ওই বরফের মতোই। সদা বহমান, ক্ষয়িষ্ণু। মানুষ যদি দুনিয়ায় সে সময়কে দরকারী কাজে ব্যয় না করতে পারে তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়লো। সেই জরুরী কাজগুলো সুরা আসরে বর্ণিত হয়েছে:

১. ঈমান আনা

২. সৎকাজ করা

৩. পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয়া

৪. পরস্পরকে সবর বা ধৈর্য্যের উপদেশ দেয়া

ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, মানুষ যদি যথাযথভাবে চিন্তা-ভাবনা করে তবে হেদায়াতের জন্য এ সুরাটি যথেষ্ট। দুনিয়ার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি অবিরাম বয়ে চলা সময় সম্পর্কে সচেতনতা। যে এই মহাসত্য উপলব্ধি করে এবং তার সঠিক ব্যবহার করে সে বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও সফল ব্যক্তি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ধোকার মধ্যে পড়ে আছে। যখন সে সুস্থ থাকে হাতে তার অবসর, তখন এমন কাজে সময় ব্যয় করে যা তার দুনিয়া ও আখিরাতে কোনো কাজেই আসবে না। আড্ডা দেয়া, উদ্দেশ্যবিহীন ঘুরে বেড়ানো, নেটে ব্রাউজিং, খেলা দেখা, গান শোনা, নাটক-সিনেমা-সিরিয়াল দেখা ইত্যাদি। তর্কের খাতিরে কেউ বলতে পারেন মানুষের জীবনে তো বিনোদনেরও প্রয়োজন আছে। তাদের বলবো, দৈনন্দিন ৫-৭ ঘণ্টা দিনের কর্মব্যস্ততার সময় যে ক্রিকেট খেলা দেখালো, যে ৪-৫ ঘণ্টা নেটে উদ্দেশ্যবিহীন ব্রাউজিং করলো বা আড্ডা মেরে বা পত্রিকায় রাজনীতি, খেলা কিংবা সিনেমার খবর পড়ে কাটানো সেটা বিনোদন নয়- সময় পার করাতে ব্যস্ত। সময়ই জীবন। Time killing তাই আত্মহত্যারই নামান্তর। বিবেচনা করে দেখি জীবনে কত সময়ই না আমরা অর্থহীন কাজে নষ্ট করেছি। নিজের জীবনের সে সময়গুলো কার্যত হত্যা করেছি।

১. মাঝারি বয়সের একজন মানুষের জীবন কি কি কাজে ব্যয় হয় তার একটা ধারণা নিতে পারি নিচের চার্টটা দেখে-

জুতার ফিতা বেঁধে ৮ দিন
ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ১ মাস
চুল কাটতে ১ মাস
টেলিফোনের ডায়াল ঘুরিয়ে ১ মাস
লিফটে চড়ে ৩ মাস

দাঁত মাজতে ব্যয় ৩ মাস
বাসের জন্য অপেক্ষায় ৫ মাস
গোসল খানায় ৬ মাস
বই পড়ে ২ বছর
খাওয়া দাওয়া করে ৪ বছর

জীবিকা উপার্জনে ৯ বছর
টেলিভিশন দেখে ১০ বছর
ঘুমিয়ে ২০ বছর

এই চার্ট বহুদিন আগের। তখন এনালগের যামানা। এখন মোবাইলের যুগে একজন গড়পরতা আমেরিকান তার মোবাইলে প্রতিদিন কাটায় ৪ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট, বছরে প্রায় ৫০ দিন। আমেরিকায় একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় গড়পরতা ১২ ঘণ্টা ৯ মিনিট কাটায়। বাংলাদেশে ৭০% ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গড়ে দৈনিক ১ ঘণ্টার বেশি সময় সোশ্যাল নেটওয়ার্কে কাটায়। তার মধ্যে ২৩% দৈনিক গড়ে ৫ ঘণ্টা নেটে ঘুরাফিরা করে। আর এই লকডাউনের মধ্যে ঢাকার জ্যাম যারা দেখেছি তারা জানি সাধারণ সময়ে দৈনিক কত সময় ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর Tv দেখে আমাদের দেশে মানুষ দৈনিক গড়ে ৮৫ মিনিট।

জীবন এভাবে অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। জীবিকার প্রয়োজনে, জীবনের প্রয়োজনে রাস্তায় বের হয়ে জ্যামে যে সময় যায় তার উপর আমাদের হাত নেই। কিন্তু Tv নেটওয়ার্কে ঘুরে যে সময় অপচয় হচ্ছে তার কি হবে?

২. প্রতিদিন এক ঘণ্টা সময় যদি আমরা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় কাজগুলি থেকে বাঁচাতে পারি তাহলে বছরে পাওয়া যাবে ৩৬৫ ঘণ্টা। এ সময়ে অনেক জরুরী গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করা সম্ভব। যেমন-

# কুরআন মজীদের অনেক অংশ মুখস্থ করে ফেলতে পারি, চাই কি এভাবে চেষ্টা করলে আস্তে আস্তে গোটা কুরআন হিফজ করে ফেলাও অসম্ভব নয়।

# ইসলাম সমন্ধে সঠিক জ্ঞানের জন্য কয়েকটা দরকারী বই পড়ে ফেলতে পারি। যেমন-

> সীরাতে ইবনে হিশাম ও নবী (সা.)-এর অন্যান্য জীবনী গ্রন্থ

> সাহাবীদের জীবনী গ্রন্থ

> ফেকাহর গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যেগুলো দৈনন্দিন কাজে লাগে

> বুখারী-মুসলিম হতে গুরুত্বপূর্ণ ‘বাব’ বা অধ্যায়গুলি

> আকিদা সম্পর্কে জরুরী বই

> ইসলামে পারস্পারিক অধিকার সম্পর্কে কয়েকটি বই

> আত্মগঠনমূলক বই যেমন- Enjoy Your Life, লা-তাহযান, সুখের সন্ধানে বা Reclaim Your Heart- এর মতো বইগুলো

> Time Management সম্পর্কে ইসমাঈল কামদার বা আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ.)-সহ অন্যদের বইগুলো

> কুরআন-হাদীস সরাসরি পড়ে বুঝার জন্য শিখে ফেলা সম্ভব আরবী ভাষা

> কাজের জন্য লাগে অন্য কোনো ভাষাও শেখা সম্ভব। যারা ইংরেজীতে দুর্বল তারা ইংরেজীটা জোরদার করে নিতে পারেন। অথবা অন্য কোনো ভাষাও। করে ফেলুন IT বা কম্পিউটার সম্পর্কিত কোনো কোর্স। বর্তমান ও ভবিষ্যতে তা খুবই কাজে আসতে পারে।

> কোনো একটা বিষয়ে online Bachalor বা Diploma করে ফেলতে পারি। এজন্য International Online University বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেয়া যায়

> শিখতে পারি দ্রুত বই পড়া, রান্না করা, বাগান করা, হাঁস-মুরগীর ফার্ম করা বা অন্য কিছু করার যোগ্যতা। এই করোনা এবং করোনা উত্তর পৃথিবীতে অনেক কিছু দরকার হবে। চাকরী খুঁজে হতাশদের সামনে মহা সুযোগ। আপনার পছন্দ মতো কিছু শিখে নিজেই কিছু করুন। উদ্যোক্তা হওয়ার Course আছে কতগুলি। Coursera- বেশ নামকরা online প্রোগ্রাম। তাদের বেশ কিছু Free program আছে, সেগুলো দেখতে পারেন।

> সুন্দর একটা বাগান গড়া যায়।

> বাড়তি আয়ের জন্য কিছু করা যায়,

> সন্তানদের Home Education-এর জন্য কিছু করা যায়। বরং তা খুবই দরকার। ইসলামী জিন্দেগী, ইসলামী আদব, জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলি সন্তানদের শিক্ষা দেয়া আমাদের জন্য খুবই দরকার। হট্টগোল না করে বাসায় একটা শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলি। এর জন্য যারা সময় পান না তারা গভীরভাবে চিন্তা করুন।

> প্রতিদিন ১৫-৩০ মিনিটও যদি পরিকল্পিতভাবে বের করতে ও ব্যবহার করতে পারি আমরা, তাহলে বিরাট ফায়দা! বিরাট ফায়দা!

৩. সময় বাঁচানোর কিছু উপায়:

মোটামোটি ৪ ধরনের কাজ থাকে আমাদের-

# গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী (অর্থাৎ এখনই করা দরকার) যেমন- নামাযের সময় হলে নামায আদায় বা আব্বা-আম্মার প্রতি দায়িত্ব এমন কাজগুলি কখনো ফেলে না রাখি।

# গুরুত্বপূর্ণ তবে জরুরী নয় অর্থাৎ এখনই না করে পরেও করা যায়: যেমন- দৈনন্দিন বাজার- তার জন্য সময় ঠিক করি।

# জরুরী কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নয়- যেমন কোনো Tv. Prog. – এখনই চলছে তবে উপকারী না হলে বর্জন করি।

# জরুরীও নয় গুরুত্বপূর্ণও নয়। যেমন- উদ্দেশ্যহীন Net Browsing, আড্ডা দেয়া।

সময় বাঁচানোর জন্য নিচের কাজগুলি করতে পারেন:

৩.১ Plan করে কাজ করা, দৈনন্দিন কাজের একটা রুটিন বা Plan থাকলে হাতের সামনে যা আসে তা করার বিপদ থেকে বাঁচা যায়। সামনে যা আসে তা-ই যারা করে তারা অনেক অর্থহীন, অপ্রয়োজনীয় কাজে জড়িয়ে সময় নষ্ট করে ফেলেন।

৩.২ নামায কেন্দ্রীক দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করুন। ফলে নামাযে তাড়াহুড়া হবে না এবং অনেক অপ্রয়োজনীয় কাজ যেমন- আড্ডা, খবরের কাগজের অপ্রয়োজনীয় অর্থহীন নিউজ পাঠ ইত্যাদি কমে যাবে।

৩.৩ যে কাজ টেলিফোনে করা যায় তার জন্য কোথাও স্বশরীরে যাবেন না। এতে সফরের সময়, খরচ ও এনার্জি বাঁচবে।

৩.৪ অবসর সময়গুলি চিহ্নিত করুন। যেমন- কোনো জায়গায় যাওয়ার সময়। এ সময় কিছু পড়ার বা শোনার মতো পরিকল্পনা রাখুন, লেখাপড়ার অনেক কাজ করা যায় এ সময়।

৩.৫ কোথাও যাওয়ার থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আছেন কিনা বা প্রতিষ্ঠান খোলা আছে কিনা আগেই খোঁজ নিয়ে যান।

৩.৬ শুধু নিজের ও পরিবারের গুণ গায় বা কেবল খাওয়া-দাওয়া, খেলা-ধুলা বা Tv Prog. বা শুধুই রাজনৈতিক প্রলাপ বকে এমন চিন্তাশূন্য ও আন্তকেন্দ্রীক মানুষকে এড়িয়ে চলুন। এদের ফোন কল avoid করুন। না পারলে সংক্ষেপ করুন।

৩.৭ সঙ্গে কাগজ-কলম রাখুন যাতে জরুরী কিছু মনে হলে নোট করে নিতে পারেন।

৩.৮ কোনো কাজ করলে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি হাতের কাছে নিয়ে নিন। এতে সময়ও বাঁচবে। চিন্তাগুলোও এলোমেলো হবে না।

৩.৯ গুছিয়ে জীবন-যাপন করুন। তাতে জরুরী জিনিস খোঁজা-খুঁজিতে বা কাজের সময় যন্ত্রপাতি না পাওয়ার মতো বিরম্বনা হতে বাঁচবেন।

৩.১০ নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য সিদ্ধান্ত নিন-

রসুল (সা.) বলেন-

“যার দুই দিন সমান যায় সে নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত।” (সুনানে দায়লামী)

৩.১১ আল্লাহর কাছে দোয়া করুন তিনি যেন আপনার কাজগুলো সহজ করে দেন-

“হে আল্লাহ! আপনি যা সহজ করেছেন তা ছাড়া কোনো কিছুই সহজ নয়। আর যখন আপনি ইচ্ছা করেন তখন কঠিন কিছুকেও সহজ করে দেন।” (সহীহ ইবনে হিব্বান, হিসনুল মুসলিম- ৪৩ নং দোয়া)

৪. কোন সময়টা উত্তম:

মনে রাখবেন, আপনি আমি যে কথাই বলি তা রেকর্ড হচ্ছে। আল্লাহ বলেন-

“মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী তার নিকটেই আছে।” (সুরা ক্বাফ ৫০: ১৮)

যে কাজই করি তা আমলনামায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে। সে ব্যাপারে সচেতন না থাকলে কিয়ামতের দিন ভয়াবহ ব্যাপার হবে-

“আর উপস্থিত করা হবে আমলনামা এবং তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদের দেখবে আতঙ্কগ্রস্ত এবং তারা বলবে, ‘হায় দুর্ভাগ্য আমাদের! এ কেমন গ্রন্থ! এ তো ছোট বড় কিছুই বাদ দেয় না; বরং তা সমস্ত কিছুর হিসাব রেখেছে।’ তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে; তোমার রব কারো প্রতি যুলুম করেন না।” (কাহাফ ১৮ : ৪৯)

অতএব, উত্তম কথা এবং উত্তম কাজে আমি আপনি যে সময় ব্যবহার করছি তা আগামী সেই দিন, চিরন্তন সেই জীবনে তা-ই আমাদের কাজে আসবে।

মনে রাখি-

> মহৎ মনের অধিকারীরা-উত্তম চিন্তা বা জীবন গঠন ও জীবন বদলে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করে

> সাধারণ মানসিকতার মানুষেরা – ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করে

> নীচু মানসিকতার অধিকারী অন্যকে নিয়ে আলোচনা করে অর্থাৎ পরচর্চা করে

> অতি নীচু মনের অধিকারী কেবল নিজেকে নিয়ে আলোচনা করে।

আপনি কি এই ৪ গ্রুপের কোনোটায় পড়েন? পড়লে কোনটায়? আপনার সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে যারা আছেন তারাই বা কোন গ্রুপের? যারা শুধুই রাজনীতি, খাওয়া-দাওয়া, কাপড়-চোপড়, ঘুরা-ফিরা, Tv. Prog. নিয়ে কথা বলে বা পরচর্চা করে তাদের সাথে থেকে আপনার দুনিয়া ও আখিরাতের কি লাভ হচ্ছে? চিন্তা করুন। সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনারই।

৫. প্রিয় ভাই বা বোন আমার, রসুলের কথা মনে করি আবার। কারণ সেটাই বিশুদ্ধ জ্ঞানের উৎস, তিনিই আমাদের সবচেয়ে কল্যাণ-কামী মানুষ। তিনি বলেছেন-

“যে ব্যক্তি গভীর রাত্রিকে ভয় করে; সে ব্যক্তি যেন সন্ধ্যা রাত্রি থেকেই সফর শুরু করে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যা রাত্রি থেকেই চলতে শুরু করে সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়, সাবধান আল্লাহর পণ্য বড়ই দামী। শোনো আল্লাহর পণ্য হলো জান্নাত।” (তিরমিযী ১৯৯৩ নং হাদীস)

-আপনি যখন এ লেখা পড়ছেন তখন আপনার জীবন থেকে বেশ কিছুটা সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। একটা বয়স আপনি পার হয়ে এসেছেন। ইতোমধ্যেই এ বছরের ২৪টা রোজা অতিক্রান্ত হয়েছে। আমার আপনার জীবন আজ-কাল-পরশু সমাপ্ত হতে পারে। যতই হায়াত পাই এক সময় শেষের সে দিন এসে যাবে। কিভাবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবো চিন্তা করেছি কি? কিছু ভাই-বোন নিজে নিজে ধারণা করেন তারা কোনো অপরাধ করেননি। এ এক আত্মপ্রতারণা। রসুল (সা.) বলেন-

“আদম সন্তান মাত্রই পাপী আর সবচেয়ে উত্তম পাপী সে যে গুনাহ করে তাওবা করে।” (তিরমিযী)

আপনি পাপ করেননি, করেন না এমন ধারণ করলে আপনি মহা ভুলে আছেন। শয়তানের জালে আটকা পড়েছেন। পাপ-পূণ্য আমার-আপনার বা আমাদের সমাজের এমনকি আমাদের তথাকথিত কিছু ধর্মীয় পন্ডিতদের কথায় নির্ধারিত হয় না। তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন আপনার-আমার স্রষ্টা মহান আল্লাহতা’লা। নিজেকে ধ্বংস করবেন না মনগড়া অনুমান নিয়ে। কুরআন-হাদীস পড়ুন জানুন, নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখুন। সুন্দর-পবিত্র জীবনে এগিয়ে আসুন।

- রমজান এলো, চলেও যাচ্ছে। সময় কি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। শেষ বেলার এ সময়গুলো মহামূল্যবান, আত্মসমালোচনার জন্য, তাওবার জন্য, মাগফিরাতের জন্য। বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগী করি। শবে কদরের জন্য রসুলের শেখানো দোয়াটা এবং জানা দোয়াগুলো বারবার পড়ি। গুনাহ খাতার কথা স্মরণ করে চোখের পানি ফেলি। হাদীসে এসেছে, দুটি জিনিস আর জাহান্নাম কখনো একত্র হবে না। সে দুটি জিনিস হলো আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ভয়ে যে চোখ অশ্রুপাত করে এবং যে পা দুটি আল্লাহর রাস্তায় ধুলিমলিন হয়।

সময় চলে যাচ্ছে। রমজান পেয়েও যদি গুনাহ মাফ করাতে না পারি তবে তো মহা আফসোস মহা বিপদের কথা। (বুখারী) এভাবে জীবনের সময় চলে যাচ্ছে নানাভাবে বিভ্রান্ত ও অজ্ঞতা প্রসূত ধারণা, কথা বা কাজে।

এক বর্ণনায় এসেছে-

“দুজন ফিরিস্তার নিম্নরূপ আহবান ছাড়া একটা প্রভাতও আসে না: হে আদম সন্তান! আমি একটি নতুন দিন এবং আমি তোমার কাজের সাক্ষী! সুতরাং আমার সর্বোত্তম ব্যবহার কর। শেষ বিচার দিনের আগে আমি আর কখনো ফিরে আসবো না।”

রসুলল্লাহ (সা.) বলেন-

তোমরা পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসের মূল্যায়ন কর। তা হল-

> যৌবনকে বার্ধক্যের আগে

> সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে

> স্বচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের আগে

> অবসরকে ব্যস্ততার আগে

> জীবনকে মৃত্যুর আগে। (হাকেম ৭৮৪৬, বাইহাকী ১০২৪৮, সহীহুল জামে ১০৭৭)

আসুন, রমজানের এই বরকতময় সময়ে জীবনের হিসাব নেই। বহমান সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করি। যতদিন হায়াত থাকে নেক ও পবিত্র জীবনযাপন করি। আল্লাহর সন্তোষভাজন হওয়ার জন্য চেষ্টা করি। আল্লাহতা’লা আমাদের সকলকে কবুল করে নিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর