সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে থ্রিলারধর্মী অ্যাকশন ছবি এক্সট্র্যাকশন। নেটফ্লিক্সের এই ছবিটি ঘিরে বাংলাদেশের নেটিজেনদের মধ্যে বয়ে যাচ্ছে সমালোচনার ঝড়। কেউ কেউ এই ছবির গল্প, সিনেমাটোগ্রাফি বেশ পছন্দ করেছেন বটে, কিন্তু বেশির ভাগই করছেন নেতিবাচক সমালোচনা। সম্প্রতি আর কোনো চলচ্চিত্র নিয়ে বাংলাদেশি দর্শকদের এতো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

extraction poster

ভারতের বাজারে নেটফ্লিক্সের অবস্থান ক্রমেই দৃঢ় হচ্ছে। আর ভারতের বাজারের সাথে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বাজারকেও বড় করে দেখছে। ধারণা করা হচ্ছে, ৬৫ মিলিয়ন ডলার বাজেটের এই চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে এই দুই বাজারে বড়সড় এক ধাক্কাই দিলো নেটফ্লিক্স।

ছবিটি পরিচালনা করেছেন স্যাম হারগ্রেভ, যিনি মূলত বিখ্যাত ছিলেন স্টানম্যান হিসেবে। এক্সট্র্যাকশনের মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালনায় অভিষেক হলো হারগ্রেভের। ছবির গল্প লিখেছেন আমেরিকান চলচ্চিত্রকার জো রুশো।

গল্পে দেখা যায় বাংলাদেশি একজন মাদকব্যবসায়ী ডন ভারতের এক ডনের সন্তানকে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। বাংলাদেশি ডনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভারতীয় অভিনেতা পিয়ানসু পেইনিউলি। আর ভারতীয় ডনের ভূমিকা নিয়েছেন পঙ্কজ ত্রিপাথি।

নিজের সহযোগীর মাধ্যমে ভারতীয় ডন তার সন্তানকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেন। ওই সহযোগী হলেন রনদিপ হুদা, যার চরিত্রের নাম সাজু। তিনি আবার ক্রিস হেমসওয়ার্থকে ভাড়া করে আনেন এই উদ্যোগ সফল করার জন্য। পুরো কাজটি করতে ভারতীয় ডন প্রচুর টাকা খরচ করার ঘোষণা দেন। কিন্তু জেলে বন্দি বলে সব দায়িত্ব পড়ে তার সহযোগীর উপর।

ক্রিস হেমসওয়ার্থের চরিত্রটির নাম থাকে টেইলার। যে নিজেকে একজন স্বেচ্ছাসেবী বলে পরিচয় দেন, যিনি আগে ছিলেন স্পেশাল এয়ার সার্ভিস রেজিমেন্টের সদস্য। তার একটি ছয় বছর বয়সী সন্তান ছিলো যে লিমফোমায় মারা গেছে। ফলে পুরো চলচ্চিত্রে অপহরণের শিকার হওয়া ভারতীয় ডনের সন্তানের প্রতি টেইলারের এক ধরনের মায়া দেখা যায়।

অভিযান পরিচালনা করতে বাংলাদেশে আসেন টেইলার। আলাদাভাবে আসেন সাজুও, যিনি সাবেক একজন প্যারা কমান্ডো। বাংলাদেশের দৃশ্যসমূহের মধ্যে সদরঘাটের দৃশ্য দেখানো হয়। ঢাকার ব্যস্ত সড় দেখানো হয়। এ ছাড়া ঢাকার ডনদের সাথে টেইলারের মারামারির সময় রাস্তাঘাট, প্রচুর লোকজনকে দেখানো হয়। সিএনজি, ঢাকার বাসও দেখানো হয়।

কিন্তু মূল সমালোচনা তৈরি হয়েছে ঢাকার ডনের সাথে বাংলাদেশের পুলিশের সংযোগের বিষয়টি নিয়ে। বাংলাদেশি দর্শকরা দাবি করছেন, এই চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের একজন কর্নেলকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা খুবই নেতিবাচক। এ ছাড়া দৃশ্যত পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীকে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে কাজ করতে দেখা গেছে। গল্পে মনে হয়েছে, বাংলাদেশ মাদক ব্যবসার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক একটা জায়গা। এ ছাড়া শিশুদের গোলাগুলি, অশ্রাব্য কথাবার্তাও এই ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে।

অবশ্য ঝানু দর্শকরা এ বিষয়টিকে পাত্তা দিচ্ছেন না। চলচ্চিত্রের গল্পে যে কোনো কিছু হতে পারে। চলচ্চিত্রের নেতিবাচক চরিত্র নিয়ে তাই তাদের মাথাব্যথা কম। মোটের উপর অনেক দর্শক এই চলচ্চিত্রটি স্বল্পবাজেটের অত্যন্ত ভালো চলচ্চিত্র বলে আখ্যা দিয়েছেন।

পটভূমিতে বাংলাদেশ ও ঢাকার নাম বারবার আসলেও ছবিটির বেশির দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে ভারত ও থাইল্যান্ডে। বাংলাদেশ থেকে থেকে নেওয়া হয়েছে কিছু প্লেটশট। প্লেটশট মানে হলো শুধু দৃশ্য বা স্থিরছবি। যা এডিট করে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন দৃশ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে বলতে গেলে তেমন কোনো শ্যুটিংই হয়নি।

চলচ্চিত্রটিতে বাংলাদেশের যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো নিয়ে গবেষণা ছিলো অপ্রতুল। এ ছাড়া জো রুশো মূল গল্পটি লিখেছিলেন দশ বছর আগে। তার গল্পের মূল প্রেক্ষাপট ছিলে প্যারাগুয়ে। ফলে অনেক চলচ্চিত্রটির মূল বক্তব্যের সাথে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট মেলানোকে অনেকে বালখিল্যতা বলছেন।