অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজসকে পেছনে ফেলে পৃথিবীর এক নম্বর ধনবান ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন ইলন মাস্ক। স্পেসএক্স, টেসলার মতো প্রতিষ্ঠাতা মাস্কের সম্পদের পরিমাণ বাড়ছে হুহু করে।
তারই প্রতিষ্ঠিত ইলেকট্রিক কার কোম্পানির শেয়ারের মূল বেড়ে যাওয়ায় মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ এখন ১৮৫ বিলিয়ন ডলার।
এই যখন অবস্থা, তখন পৃথিবীজুড়ে অনেক তরুণ উদ্যোক্তার মনে প্রশ্ন— মাস্কের সাফল্যের রহস্য কী? বিষয়টি নিয়ে মাস্কের সঙ্গের সরাসরি কথা বলেছেন বিবিসির জাস্টিন রলাট। তার সাথে আলাপে ছয়টি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন মাস্ক।
শুধু টাকার কথা চিন্তা করলে হবে না
এলন মাস্ক বলেছেন, তিনি টাকার পেছনে ছুটে তার ব্যবসায় অর্জন করেননি; বরং ব্যবসাটা মনোযোগ দিতে করতে চেয়েছেন বলেই তার কাছে টাকা এসেছে। তার মানে এটা নয় যে, টাকা-পয়সা কামানোকে তিনি খারাপ চোখে দেখেছেন। মাস্ক বরং বলেছেন যে, টাকা অর্জনের সম্ভাবনাই কেবল তাকে সামনে এগিয়ে নেয় না। মাস্ক আরো বলেছেন, তার সম্পদ হয়তো তিনি মার্সে একটি বেইজ তৈরি করার পেছনেই খরচ করে ফেলবেন। প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে মারা যাওয়ার কোনো ইচ্ছাই তার নেই।
ছুটতে হবে শখের পেছনে
মাস্ক মনে করেন মার্সে মানুষ বসবাসের জন্য কিছু একটা করবেন— এই স্বপ্নটাই তার সাফল্যের মূল সূত্র। তিনি বলেন, “আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যত আরো ভালো হোক। সেটার জন্য আমাদের এমন কিছু চাইতে হবে যা আমাদের আরো রোমাঞ্চিত করতে পারে।” মাস্ক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ নিয়ে যা ভাবে ও করে, তা যথেষ্ট উচ্চাশাপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, “আমি সব সময় পৃথিবীর বাইরে চিন্তা করতে চাই। যেমন মার্সে কাউকে পাঠানো, চাঁদে একটি ভীত গড়া এবং পৃথিবীর সাথে আরো বেশি ফ্লাইট চালু করা। বিবিসির সাংবাদিককে মাস্ক বলেছেন, প্রতিদিন সকালে মাস্ক ঘুম থেকে ওঠেন এই চিন্তা করে যে, তিনি আজকে আরো একটি নতুন প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধান করবেন। অর্থাৎ সব সময় নিজের স্বপ্ন ও শখের পেছনেই ছোটেন মাস্ক।
বড় কিছু ভাবার সময় ভয় পাওয়া যাবে না
ইলন মাস্কের ব্যবসার মূল বিষয় হলো দারুণ সাহসী সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ। বিশ্বাস না হলে তার ব্যবসার ধরন চিন্তা করুন— তিনি চেয়েছেন গাড়ির জগতটা বদলে দিতে, চেয়েছেন মার্সে মানুষের ঘর করতে, চেয়েছেন বায়ূশূন্য টানেলে সুপার-ফাস্ট গতির ট্রেইন তৈরি করতে, চেয়েছেন মানুষের ব্রেনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যোগ করতে, চেয়েছেন সৌর-বিদ্যুৎ ও ব্যাটারি শিল্প বদলে ফেলতে! ১৯৮০-এর দশকের সাইন্সফিকশনেই কেবল এই ধরনের চিন্তার কথা বলা হতো। কিন্তু কেউ কোনোদিন এসব বাস্তবে রূপ দেওয়ার কথা চিন্তা করেনি। মাস্ক তাই মনে করেন, সাফল্যের জন্য সাহসী সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প নেই।
ঝুঁকির জন্য থাকতে হবে প্রস্তুত
ঝুঁকির কোনো বিকল্প নেই। ২০০২ সালে মাস্ক তার দুটি প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেন। এর একটি ছিলো পেপাল, যা পরবর্তীতে তুমুল জনপ্রিয় ডিজিটিল ওয়ালেটে পরিণত হয়। মাস্ক চেয়েছিলেন তিনি অন্য কিছু করবেন, আরো বড় কিছু করবেন। এই চিন্তার তাড়নাতেই তিনি ৩০ বছর বয়সে গিয়ে নিজের সবচেয়ে বড় সম্পদ বিক্রি করে দেন। ততোদিনে অবশ্য তার ব্যাংকে জমে গিয়েছিলো ২০০ মিলিয়ন ডলার। তার পরিকল্পনা ছিলো নিজের সম্পদের অর্ধেক রেখে দেওয়া এবং অর্ধেক ব্যবসায় খাটানো। কিন্তু বাস্তবতা এতোটা সহজ ছিলো না। স্পেসএক্সের প্রথম তিনটি রকেট উৎক্ষেপণ পরিকল্পনাই ব্যর্থ হয়। টেসলার উৎপাদন সক্ষমতায় নানা সমস্যা ছিলো, ডিজাইন ত্রুটি ছিলো। যা কাটিয়ে ওঠা মাস্কের জন্য সহজ ছিলো না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতাই সফল হয়েছে।
সমালোচকদের উপেক্ষা করুন
মাস্ক মনে করেন নিজের শখের কাজ করতে গিয়ে বহু লোকের অবিশ্বাসী দৃষ্টিতে পড়তে হতে পারে, বাড়তে পারে তীর্যক কথার আঘাত। কিন্তু তাতে দমে গেলে সব শেষ! মাস্ক তাই সমালোচনা উপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, টেসলার প্রাথমিক ব্যর্থতার পর এমন কিছু ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিলো যেগুলোর উদ্দেশ্য ছিলো টেসলা ঠিক কতোদিনে ধ্বংস হবে তার ক্ষণগণনা করা। কিন্তু টেসলা শেষ পর্যন্ত সফল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মাস্ক যদি সমালোচকদের কথার আঘাতে নিজেকে দমিয়ে নিতেন, তাহলে কাজের কাজ কিছুই হতো না।
সাফল্য উপভোগ করুন
মাস্ক এক সময় দিনে ১৭ ঘণ্টা কাজ করতেন! তিনি মনে করেন, সফল হতে চাইলে, নিজের শখ পূরণ করতে চাইলে এভাবেই একজন মানুষের কাজ করে যাওয়া উচিত। কিন্তু এই রকমভাবে কাজ করা সারা জীবন সম্ভব নয়। একটা সময়ে গিয়ে নিজের কাজের বিনিময়ে আসা সাফল্য উপভোগ করাও জরুরি। তবে তার আগে জরুরি হলো এই সূত্রগুলো মেনে চলা।