এক বিলিয়ন ডলার বা এরও বেশি মূল্যমানের বেসরকারি স্টার্টআপগুলো ইউনিকর্ন হিসেবে পরিচিত। এশিয়ার মধ্যে চীনে এ ধরনের কোম্পানির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে ভারতেও প্রযুক্তি খাতে ইউনিকর্ন কোম্পানির সংখ্যা দ্রুতহারে বাড়ছে; যা এক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে তাদের ব্যবধান কমিয়ে দিচ্ছে। এ ধরনের স্টার্টআপের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বোঝা যাচ্ছে মহামারিতে ডিজিটাল সেবাগ্রহণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এ খাত নিয়ে ক্রমে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

zomato

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিবি ইনসাইটসের দেয়া তথ্য এবং নিক্কেই এশিয়ায় তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে ভারতের ১৫টি কোম্পানি প্রথমবারের মতো তাদের মূলধন এক বিলিয়ন ডলার বা এরও বেশি পরিমানে বাড়িয়েছে। যার মধ্যে ১০টিই ২০২১ সালের ইউনিকর্ণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এদিক থেকে তুলনা করলে চীনের ১৫টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র দুটি গত বছর ইউনিকর্নের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

ভারতের খাবার ডেলিভারি কোম্পানি জোমাতো এক্ষেত্রে একটি সফল উদাহারণ। একসময়ের লোকসানী কোম্পানিটিই এখন প্রাক-আইপিওর মাধ্যমে ৮২ দশমিক ৫ বিলিয়ন রূপি (এক দশমিক এক বিলিয়ন ডলার) সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে।

ভারতের নতুন ইউনিকর্ন কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগই পুরোপুরি অনলাইন ব্যবসার ওপর পরিচালিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে বিপুল সংখ্যক ভোক্তা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এসব কোম্পানির সেবা গ্রহণ করায় তারা রীতিমতো ফুলেফেঁপে উঠছে। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে যুঝতে থাকা ভারতে ব্যবসার এই ধারা অব্যাহত থাকতে কিনা তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বিনিয়োগকারীরা।

আর্থিকপ্রযুক্তি বিষয়ক স্টার্টআপ রেজরপের কো-ফাউন্ডার হারশিল মাথুর বলেন, ‘প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানই অনলাইনে বিক্রির জন্য একটি ডিজিটাল উপায় বের করতে বাধ্য হয়েছে। এমনটি বিপুল সংখ্যক ছোটখাট রিটেইলারাও যারা আগে অফলাইনে পণ্য বিক্রি করতো তারাও এখন অনলাইন নির্ভর। এছাড়া আমরা আরো দেখতে পাচ্ছি ব্যাক্তিগত পর্যায়ে অনেকে এবং ফ্রিল্যান্সাররাও হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে তাদের পণ্য বিক্রি শুরু করছে।’

রেজরপে ফুড ডেলিভারি অ্যাপের মতো অনলাইন সেবার ক্ষেত্রে মূল্যপরিশোধ প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। এই কোম্পানিটির বার্ষিক লেনদেনের পরিমান একবছর আগে ছিলো ১২ বিলিয়ন ডলার; যা এই সময়ের মধ্যে বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। কোম্পানিটির বর্তমান মূলধন তিন বিলিয়ন ডলার। মাত্র ছয়মাস আগেও গত বছরের অক্টোবরে এই মূলধনের পরিমান ছিলো এক বিলিয়ন ডলার।

ডিজিটাল ইকোনমিকর আকারের দিক থেকে ভারত বরাবরই চীনের পেছনে রয়েছে। কিন্তু দেশটি খুব দ্রুতই চীনের সঙ্গে এ ব্যবধান কমিয়ে নিয়ে আসছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন মোবাইল ফোন ব্যবহারীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতিমালার সুবাদে এখানেও ডিজিটাল ইকোনমি বড় হয়ে উঠছে। ২০১৬ সালে ভারত সরকারের উদ্যেগে উইনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস (ইউপিআই) নামে একটি পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করা হয়; যারমাধ্যমে ব্যাংকগুলোর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ স্থানান্তর করা যায়। ন্যাশনাল পেমেন্ট করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার দেয়া তথ্যানুযায়ি, দেশটির সিংহভাগ অনলাইন পেমেন্ট ইউপিআইয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় এবং মার্চ পর্যন্ত এরমাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের পরিমান ৫ ট্রিলিয়ন রূপি (৬৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার) ছাড়িয়েছে; যা একবছর আগের দ্বিগুন।

সিবিআই ইনসাইটসের তথ্যানুযায়ী, মোট ১৩৮টি ইউনিকর্ন কোম্পানি নিয়ে চীন এখন পর্যন্ত এশিয়ায় এক্ষেত্রে আধিপত্য করে যাচ্ছে। চীনে এ ধরনের কোম্পানির সংখ্যা ভারতের তুলনায় চারগুন বেশি। টিকটকের মূল কোম্পানি রাইটডান্সের মতো চীনের কিছু কিছু ইউনিকর্ন কোম্পানি আকারের দিক থেকে আরো বড়। বাইটড্যান্সের মোট মূল্যমান ১৪০ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে ভারতের সবচেয়ে বড় ইউনিকর্ন কোম্পানি ওয়ান৯৭ কমিউনিকেশনের আর্থিক মূল্যমান ১৬ বিলিয়ন ডলার।

তবে ভারতে দ্রুতহারে ইউকর্ন কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি দেশটির বিনিয়োগকারীদের মনোভাব পরিবর্তনেরই আভাস দিচ্ছে। জিএমও ভেনচারপার্টনারসের প্রতিষ্ঠাতা সহযোগী রিয়ো মোরামাতসু বলেন, ‘ভবিষ্যতে ভারতে আমরা আরো বিনিয়োগের কথা ভাবছি। স্বল্পমেয়াদে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে হয়তো সংশোধন করতে হবে তবে কোম্পানিগুলো অতীতের তুলনায় অনেকটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।’

প্রযুক্তিখাতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর এ উত্থান অব্যাহত থাকলে চীনের বিনিয়োগকারী ও কোম্পানিগুলো অনেকটাই পিছনে পড়ে যাবে। অ্যান্ট গ্রুপের মতো ভারতে সবচেয়ে সক্রিয় বিনিয়োগকারীদের এখন নতুন নীতিমালার দিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী চীনসহ প্রতিবেশী দেশের কোম্পানিগুলোকে ভারতে বিনিয়োগ করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।

সূত্র: নিক্কেই এশিয়া

Stay ahead of the curve with the latest news and insights on technology, mobile computing, laptops, and outer space. Our team of expert writers brings you in-depth analysis of the latest trends and breakthroughs, along with hands-on reviews of the newest gadgets and devices. From the latest smartphones to the mysteries of the cosmos, we've got you covered.