রোনালদোর পর্তুগালের সামনে টালমাটাল স্পেন

লড়াইটা বহু বছরের পুরনো। তখনো ফুটবল বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হয়নি। স্পেন-পর্তুগালের দ্বৈরথ কতটা প্রাচীন এবং ধ্রুপদী সেটা বোঝাতে এই তথ্যটাই যথেষ্ঠ। সময়ের পরিক্রমায় ইউরোপিয়ান দল দুটোর মহারণ পেয়েছে ‘ডার্বি’ মর্যাদা। এই লড়াইয়ের নাম কেতাবি নাম ‘আইবেরিয়ান ডার্বি’।

কাল রাতে পর্দা উঠেছে বহুল প্রতীক্ষিত রাশিয়া বিশ্বকাপের। তবে ফুটবলপ্রেমীদের আসল রোমাঞ্চ শুরু হচ্ছে একদিন পর থেকেই। আজ রাতেই যে হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে পর্তুগাল ও স্পেন! বাংলাদেশ সময় ম্যাচটি শুরু হবে রাত ১২টায়। রোমাঞ্চকর ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে মাছরাঙা ও নাগরিক টিভি।

ইউরোপিয়ান জায়ান্ট দুই দলের লড়াইটার পরিচিত আছে ‘আইবেরিয়ান যুদ্ধ’ নামেও। প্রায় শতবর্ষী পুরনো এই লড়াইয়ে বরাবরই ফেভারিট স্পেন। সর্বমোট ৩৪ বারের দেখায় ১৬টিতেই জিতেছে স্প্যানিশরা। পর্তুগালের জয় সেখানে মাত্র ছয়টি। ২০১২ ইউরো এবং ২০১০ বিশ্বকাপেও পর্তুগিজদের হারিয়েছিল লা রোজারা।

আজকের দ্বৈরথেও ফেভারিট হিসেবে মাঠে নামার কথা ছিল স্পেনের। কিন্তু গৃহযুদ্ধে টালমাটাল হয়ে আছে স্প্যানিশ শিবির। বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহূর্তে ইউরোপ সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের ঘোষণাটাই স্পেনে বাধিয়ে দিয়েছে গৃহযুদ্ধ। নতুন মৌসুমে হুলেন লুপেতেগুইকে ভাবী কোচ হিসেবে ঘোষণা দেয় স্প্যানিশ ক্লাবটি।

তাতে ভীষণ বিব্রত হয়েছেন স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। প্রধান কোচ লুপেতেগুইকে বরখাস্ত করেন তারা। নতুন কোচ হিসেবে ফার্নান্দো হিয়েরোর নাম ঘোষণা করেছেন স্প্যানিশ ফুটবলকর্তারা। যিনি দ্বিতীয় সারির ক্লাবের কোচ ছিলেন। এমন একজনের অধীনে স্পেন বিশ্বকাপে কতটা সফল হবে সংশয়টা জেগেছে তা নিয়েই।

স্পেন দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড় ক্লাব পর্যায়ে একে অন্যের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। রিয়াল মাদ্রিদে খেলা স্পেন দলের কয়েকজন সদস্যই লুপেতেগুইকে রেখে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। বিপক্ষে অবস্থান নেন বার্সেলোনা ফুটবলাররা। এই অবস্থায় অগ্নিগর্ভ স্পেনের ড্রেসিংরুমের অন্দরমহলের আবহ। খবর স্প্যানিশ মিডিয়ার।

এমন টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই স্বপ্নের দ্বিতীয় শিরোপা অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে স্পেন। সোচিতে অনুষ্ঠিতব্য মহারণের আগে গৃহযুদ্ধ, দলটা আবার স্পেন বলেই কিনা ফুটবলপ্রেমীদেরও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে বিষয়টা। ফুটবলপিয়াসুদের ‘বি’ গ্রুপের এ ম্যাচ নিয়ে বেশি আগ্রহের আরেকটা কারণ- এবারের বিশ্বকাপের প্রথম মহারণ এটা।

হাইভোল্টেজ এই ম্যাচের সবচেয়ে বড় তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তার নেতৃত্বেই আজ শুরু হবে পর্তুগালের বিশ্বকাপ মিশন। প্রতিপক্ষের সেরা এবং বিশ্বকাপের প্রধান তারকাদের একজন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রোনালদোর জন্য আলাদা করে ভাবতে হচ্ছে স্পেনকে।

রোনালদো নিজেও রিয়াল মাদ্রিদে খেলছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। ক্লাব ক্যারিয়ারে তার সতীর্থ হিসেবে আছেন সার্জিও রামোস, মার্কো এসেনসিও, ইস্কো, লুকাজ ভাজকুয়েজের মতো তারকা ফুটবলাররা। ক্লাব ঠিকানার বন্ধুদের বিশ্বকাপের শুরুতেই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পেয়ে গেলেন রোনালদো।

কিন্তু রামোসদের সঙ্গে বন্ধুত্ব নামক শব্দটা আপাতত আলমারিতে তুলে রাখবেন রোনালদো। ‘সিআর সেভেন’ স্বপ্ন দেখছেন বিশ্বকাপ জয়ের। এ জন্য জয় দিয়ে আসর শুরু করাটাই উত্তম। পর্তুগিজদের স্বপ্নযাত্রার প্রধান সারথি তিনিই। এই রোনালদোর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ওপর দাঁড়িয়ে দু’ বছর আগে ইউরো বিশ্বকাপ জিতেছিল পর্তুগাল। এবার দেশকে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটাও এনে দিতে চান রোনালদো।

জয় দিয়ে আসরটা জয় দিয়েই শুরু করার কাজটা রোনালদোদের জন্য কঠিন। কারণটা ডার্বি ম্যাচের অতীত ইতিহাস এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে পর্তুগালের তরুণ তুর্কি বার্নার্ডো সিলভা যথার্থই বললেন, ‘কৌশলগতভাবে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা দল। তাদের মধ্যমাঠ অনেক শক্তিশালী। এ ম্যাচে তারাই ফেভারিট। আমাদের দলটাও ভালো। আমরা জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামব।’

পর্তুগাল ভাবছে পুরো স্পেন দল নিয়ে। কিন্তু স্পেনের নতুন কোচ ভাবনায় আছেন শুধুই একজন। তিনি প্রতিপক্ষের প্রধান অস্ত্র রোনালদো। ম্যাচের আগে নতুন কোচ হিয়েরো বলেছেন, ‘আমি চাইব ম্যাচটা যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। সবাই ভালো ফুটবল খেলুক। তবে দারুণ সূচনা করতে হলে রোনালদোর দিকে আমাদের বিশেষ নজর রাখতে হবে। আমরা মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছি।’