মাঠে এবং মাঠের বাইরে অনেক নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে বিখ্যাত হয়ে গেছেন লুইস সুয়ারেজ। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে এসব কু-খ্যাতি কিছুটা হলেও আড়াল করেছেন তিনি। কিন্তু চাইলেও কলঙ্কের কালিমাগুলো একেবারে মুছে ফেলতে পারবেন না উরুগুয়েন স্ট্রাইকার। তার উল্লেখযোগ্য কু-কর্মের মধ্যে অন্যতম দংশন করা।

luis suarez bites chiellini 1

কেন সুয়ারেজ মানুষকে কামড়ান? এর উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করেছেন খোদ মনোবিজ্ঞানীরাও। ব্যর্থ হয়েছেন প্রত্যেকেই। অবশেষে সুয়ারেজ নিজেই খোলাসা করেছেন কেন মানুষকে কামড়ান তিনি? সম্প্রতি সুয়ারেজের লেখা নিজের জীবনবৃত্তান্ত প্রকাশ পেয়েছে। এখানেই বার্সেলোনা স্ট্রাইকার তার কামড়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, শুনিয়েছেন বদলে যাওয়ার গল্প।

একবার, ‍দুবার নয়, সুয়ারেজ তিনবার কামড়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের। প্রথমবার ২০১০ সালে। তিন বছর পর একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। ক্লাব পর্যায়ে দুইবার প্রতিপক্ষের গায়ে কামড় বসানো সুয়ারেজ সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের মঞ্চে। এবারের শাস্তি ছাড়িয়ে গেছে তার আগের দুই নিষেধাজ্ঞাকে।

প্রায় ছয় বছর ধরে কামড়ান না সুয়ারেজ। কিন্তু দুঃস্বপ্নগুলো এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে। এসব ঘটনা সুয়ারেজ নিয়ে এসেছেন বায়োগ্রাফিতে। সেখানে তিনি তুলে ধরেছেন প্রতিপক্ষের উসকানি এবং নিজের অসহায়ত্বের কথা। কামড়কাণ্ড এবং বদলে যাওয়া জীবন নিয়ে সুয়ারেজ বইতে যা লিখেছেন তা পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

কিছু কিছু ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময় স্নায়ুচাপ ওঠা-নামা করতে থাকে। মাঝে মাঝে মস্তিষ্ক কাজ করে না। এমনই একটা ম্যাচ ছিল ২০১০ সালে। আমি খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কারণ গুরুত্বপূর্ণ ওই ম্যাচটাতে আমি ড্র মেনে নিতে পারছিলাম না। আমরা খুব বাজেভাবে দৌড়াচ্ছিলাম। আমি সবকিছু ঠিক করতে চেয়েছিলাম। উল্টা-পাল্টা ভাবছিলাম। একটু পর বুঝলাম আমি যা করছি তার সবকিছুই ভুল হচ্ছে। আমার হতাশা বাড়তে থাকে। আমি যে ভুলের চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছে গেছি তা বুঝতে পারিনি। একটা পর্যায়ে আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি।

২০১৩ সাল ইভানোভিচের সাথে যা হয়েছে, আমরা চেলসিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের পরের রাউন্ডে উঠতে চেয়েছিলাম। ম্যাচটা আমার জন্য খুব বাজে একটা অভিজ্ঞতার ছিল। আমি হ্যান্ডবল করে বোকার মতো ওদের একটা পেনাল্টি দিয়ে ফেললাম। তখন নিজের হাত কামড়াতে ইচ্ছে করছিল। এরপরই ইভোনিভোচকে কামড়ে দিয়েছি। কিছুক্ষণ পরই বুঝেছি কাজটা ভুল হয়েছে।

জর্জিও কিয়েলিনিকে কামড়োনোর আগে, আমি গোল করার দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি যদি সুযোগ পেতাম তাহলে বুফন (ইতালির গোলরক্ষক) গোলটা আটকাতে পারত না। কিন্তু আমি কিছু করতে পারিনি। সুযোগটা হাতছাড়া করেছি। তখন আমার মধ্যে পরাজয়ের শঙ্কা কাজ করছিল। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম বিশ হাজার মানুষের চোখ আমার দিকে। মাথায় তখন কোনোকিছুই কাজ করছিল না। কিয়েলিনির কাঁধে কামড় বসিয়ে দেই।

উরুগুয়ের নয়টি ম্যাচে আমাকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আমি বুঝতে পারছিলাম সবকিছু। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে লুইস এনরিকেকে কামড় দিয়েছিলেন মাওরো টাসোত্তি। তাদের দুজনের মধ্যে বড়সড় একটা ঝামেলা হয়েছিল। ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে জিনেদিন জিদান মার্কো মাতেরাজ্জির বুকে ঢুঁস মেরেছিলেন। তখন তাকে মাত্র তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। অথচ আমাকে? খুব সম্ভবত, আমাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো সহজ ছিল। আমি ভুল করেছিলাম। আমার ভুল ছিল। যখন তৃতীয়বার একই ঘটনা ঘটল তখন বুঝলাম আমার সাহায্য দরকার।

২০১৩ সালে ব্রানিস্লাভ ইভানোভিচকে কামড় দেওয়ার পর আমার মনে প্রশ্ন জাগে, শাস্তির বিধানটা কি এক তরফা? আমাকে খুব বাজেভাবে ট্যাকল করা হয়েছিল। কিন্তু যখন আমি একটা দুর্ঘটনা ঘটালাম তখন কেউ নেপথ্য কারণ খুঁজতে যায়নি। যখন মাইক টাইসন এভান্ডার হলিফিল্ডের কানে কামড় দিয়েছিল তখনও কেউ নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করেননি।

ইভনোভিচকে কামড় দেওয়ার পর আমাকে দেখতে একজন ক্রীড়া মনোবিদকে পাঠায় লিভারপুল। আমরা সেখানে দুই ঘণ্টা কথা বলেছিলাম। মনোবিদ আমাকে বলেছিলাম আবার দেখা হবে আমাদের। যদিও আমি আর দেখা করিনি। আমাদের আর দেখা হয়নি। এরপর প্রতিটি ম্যাচের ৯০ মিনিট আমি নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি।

এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার যে স্ট্রাইকারদের বিরক্ত করা হয়। মাঠের দেড় ঘণ্টায় মনে হয়, জীবন খুব বিরক্তিকর। আমি আরো বিরক্ত হয়ে উঠি যখন একজন ডিফেন্ডার আমাকে পেছন থেকে আঘাত করেন। বিরক্ত হই যখন আমি সুযোগ হাতছাড়া করি। যখন আমি কয়েকবার বল নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি বা কাউকে সঠিক পাস দিতে না পারি তখন নিজেকেই প্রশ্ন করি, ‘আজ তোমার সঙ্গে কী ভুল হয়েছে?’ এরপর যখন একজন আমাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আসে তখন ঝুঁকিটা বাড়তে থাকে। আমি বাজে প্রতিক্রিয়া দেখাই। কামড়ে দেই।

কিয়েলিনিকে কামড়ে দেওয়ার পর আমি কারোর সঙ্গে কথা বলিনি। খুব হতাশ হয়ে পড়ি। আমি টেলিভিশনে (অস্কার) তাবারেজের (উরুগুয়ে কোচ) সংবাদ সম্মেলন দেখে নিষেধাজ্ঞার খবরটা জানতে পারি। তিনি আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন। আমার পক্ষে ফিফার শৃঙ্খলা কমিটির সঙ্গে কথা বলেন। আমি তাকে দেখছিলাম এবং লক্ষ্য করলাম আমার মুখমন্ডল বেয়ে চোখের পানি ঝরছে। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না তিনি আমার জন্য কী করছেন। আমি দেখলাম তিনি আমাকে কতটা ভালোবাসেন। তখন আমার আত্মদহন হচ্ছিল।

সোফি (সুয়ারেজের স্ত্রী) এবং আমি দেশের বাইরে চলে যাই। সবকিছু নিয়ে কথা বলি। শেষ পর্যন্ত আমার যা করণীয় তা নিয়ে কাজ শুরু করি। সে-ও বিরক্ত হচ্ছিল যা আগে কখনো দেখিনি। তখন সে আমাকে বলছিল, ‘এখন তুমি কি আমার কথা শুনবে?’ তখন আমি ভাবলাম তার কথা শোনা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই আমার। আমি রাজি হলাম। আমি গবেষণা শুরু করলাম এবং সঠিক মানুষের সন্ধান পেলাম।

লিভারপুল আমাকে বার্সার কাছে বিক্রি করে দেয়। বার্সাতে আসার পর কিছু লোক আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করেন, আমি মাঠে যা করি তা আসলে ঠিক নয়। এর দায়দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে। কিন্তু এসব নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথাই ছিল না। এরপর ধীরে ধীরে আমি বুঝতে শুরু করি। এখনো শিখছি কীভাবে চাপ মোকাবেলা করা যায়। কীভাবে হতাশা কাটিয়ে স্বাভাবিক হওয়া যায়। অন্য কারোর সঙ্গে কিছু শেয়ার করার চেয়ে এখন সবসময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করি।

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.