ইউরো ২০২০: রাজত্ব উদ্ধারের স্বপ্ন স্পেনের

বিশ্ব ফুটবলে বেশ কয়েক বছর টানা রাজত্ব করেছে স্পেন। ইতিহাসের একমাত্র দল হিসে ব্যাক টু ব্যাক ‘ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো’ জিতেছে লা রোজারা। সেই দলটা হঠাৎই পথ হারিয়েছে। গত বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে কোচ নিয়ে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরেছিল স্প্যানিয়ার্ডরা। নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন কোচ। যার প্রভাব পড়েছিল খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে।

বিশ্বকাপ পরবর্তী পুনর্বাসনে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরতে শুরু করে স্পেন। গেল বছরের নভেম্বরে জার্মানিকে বিধ্বস্ত করে ৬-০ গোলে। যদিও এক মাস পরই ইউক্রেনের কাছে হেরে বসে তারা। উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে দলটার মধ্যে স্থিতিশীলতা এনেছেন প্রধান কোচ লুইস এনরিকে। এবারের ইউরোতে হট ফেভারিটদের একটি তার দল স্পেন।

স্পেনের দল ঘোষণা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। যা ইউরোর অন্য কোনো দল নিয়ে হয়নি। দলের নিয়মিত অধিনায়ক ও সেরা ডিফেন্ডার সার্জিও রামোসকে স্বপ্নযাত্রায় রাখেননি এনরিকে। যা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর ছিল। অবশ্য রামোসও চিরচেনা ছন্দে নেই। গত মৌসুমের বেশিরভাগ সময় ইনজুরি আর ফর্মহীনতায় কেটেছে তার।

শেষ পর্যন্ত রামোসকে বাদ দিয়েই দল ঘোষণা করে স্পেন। তার শূন্যস্থানের জন্য আইমেরিক লাপোর্তাকে ডেকেছেন কোচ এনরিকে। ম্যানচেস্টার সিটিতে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ফরাসি বংশোদ্ভূত এই ডিফেন্ডারকে স্পেনের নাগরিকত্বও দেওয়া হয়েছে। লাপোর্তার ফ্রান্স দলে খেলারও কথা উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত ফরাসিদের আশা ছেড়ে স্পেনকে বেছে নেন এই তরুণ।

রামোসের পরিবর্তে নতুন অধিনায়ক হিসেবে সার্জিও বুসকেটসের নামে ঘোষণা করে লা রোজারা। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর কয়েকদিন আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি। বুসকেটস আক্রান্তের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরেক ধাক্কা খায় স্পেন। এবার কোভিড-১৯ পরীক্ষায় পজিটিভ হন ডিফেন্ডার ইয়োরেন্তে। তাতে দিশেহারা স্পেন।

পুরো দলের মধ্যে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। বড় ধরনের বিপর্যয় ঠেকাতে প্রস্তুতি হিসেবে নতুন করে ১৫ জুন ফুটবলারকে অনুশীলনে জন্য ডেকে পাঠান স্পেন কোচ এনরিকে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ইয়োরেন্তে। তার প্রথম পরীক্ষায় ভুল রিপোর্ট আসে। দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার পরীক্ষা নেগেটিভ হন তিনি। তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরে স্পেনে।

দলে করোনার আগ্রাসনে ইউরোর আগে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচটা খেলতে পারেনি স্পেনের মূল দল। প্রস্তুতি ম্যাচটা তারা খেলেছে যুব দল নিয়ে। ওই সময় পুরো দল হোটেলে আইসোলেশনে ছিল। করোনা আতঙ্ক অনেকটাই কেটে গেছে লা রোজাদের কাছ থেকে। আপাতত মাঠের ফুটবলে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেছে স্পেন। লক্ষ্য হারানো শিরোপা উদ্ধার করা।

প্রধান কোচ - লুইস এনরিকে: স্পেনের জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব লুইস এনরিকে। ক্লাব কোচিং ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন তিনি। তার অধীনেই ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রেবল জেতে বার্সেলোনা। পরে ব্যক্তিগত কারণে ফুটবল ছেড়ে যান এনরিকে। স্পেনের দায়িত্ব নেন ৫১ বছর বয়সী এই কোচ। এখানেও কয়েক মাসের বিরতি দিয়েছিলেন তিনি। পরে ফিরেও এসেছেন তিনি।

এনরিকের স্বপ্ন এখন স্পেনকে ইউরো জেতানো। কাজটা কঠিন। খেলোয়াড়ি জীবনে যেটার স্বাদ পাননি তিনি। ১৯৯৬ সালে স্পেনের ইউরো দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন এনরিকে। ওই আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যান তিনি। সেই হতাশা এবার দূর করতে মরিয়া এই স্প্যানিয়ার্ড। দলকে নিয়ে যেতে চান সেই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের ফাইনালে।

প্রধান অস্ত্র - থিয়াগো আলকান্তারা: এই প্রজন্মের প্রতিভাবান মিডফিল্ডারদের একজন থিয়াগো আলকান্তারা। কিন্তু সেই তুলনায় স্পেনের হয়ে বেশি ম্যাচ খেলেননি তিনি। ৩০ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার লা রোজাদের হয়ে ৪২টি ম্যাচ খেলেছেন। ২০১১ ও ২০১৩ সালে স্পেনের যুব ইউরো জয়ে আলকান্তারার অবদান ছিল মূখ্য। এবার মূল দলের হয়ে স্বপ্নপূরণ করতে চান তিনি।

আলকান্তার জন্ম ইতালিতে। কিন্তু তার বাব-মা দুজনই ব্রাজিলিয়ান। তার বাবা মাজিনহো ব্রাজিলের কিংবদন্তি। ১৯৯৪ সালে সেলেকাওদের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। বিশ্বকাপ ছাড়া কোপা আমেরিকা এবং অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতেছেন মাজিনহো। আলকান্তারা কি পারবেন বাবার নাম ধরে রাখতে? উত্তরটা তোলা থাকল ভবিষ্যতের জন্য।

তরুণ তুর্কি - পেদ্রি: তার মধ্যে কিংবদন্তি আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার ছায়া দেখছেন অনেকেই। স্কিলে অনন্য পেদ্রি। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখছেন ফুটবল বিশ্লেষকরা। গেল মৌসুমে বার্সেলোনার জার্সিতে অভিষেক হয়েছে তার। লাস পালমাসের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও সেখানে থাকতে পারেননি তিনি।

কাতালানরা তাকে নিয়ে আসে। কেন পেদ্রিকে বার্সা নিয়ে এসেছে সেটা বোঝা গেছে তার পারফরম্যান্সে। গত মৌসুমে মেসিরা নিজেদের হারিয়ে খুঁজলেও পেদ্রি ছিলেন সবচেয়ে ধারাবাহিক ফুটবলার। ক্লাবের পারফরম্যান্স এবার জাতীয় দলে বয়ে আনাটা ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ তুর্কির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

গ্রুপপর্ব: ইউরোতে জার্মানির সমান তিনটি শিরোপা জিতেছে স্পেন। এবার জার্মানদের ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন জায়ান্ট দলটির। তবে শিরোপা জয় অনেক দূরের পথ। আপাতত গ্রুপপর্ব নিয়ে ভাবতে হচ্ছে তাদের। ডেথগ্রুপ খ্যাত ‘ই’ গ্রুপে পড়েছে এনরিকের দল। যেখানে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে স্প্যানিয়ার্ডরা। সোমবার রাতে স্পেনকে গোলশূন্য ব্যবধানে রুখে দিয়েছে সুইডেন। সুইডিসরা ছাড়াও এই গ্রুপে আছে পোল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দল। স্লোভাকিয়াকেও দুর্বল ভাবলে চলবে না। স্পেনের জন্য অনুপ্রেরণা হচ্ছে, এবারের ইউরোর স্বাগতিক ১১ দেশের একটি তারা।

সম্ভাব্য একাদশ: গোলরক্ষক: সিমন; ডিফেন্ডার: ইয়োরেন্তে, লাপোর্তা, তোরেস, আলবা; মিডফিল্ডার: কোকে, রদ্রি, পেদ্রি; ফরওয়ার্ড: তোরেস, মোরাটা, ওলমো

সেরা সাফল্য: চ্যাম্পিয়ন (১৯৬৪, ২০০৮, ২০১২)

ফিফা র্যাঙ্কিং: ৬

স্পেন ম্যাচসূচি:

১৪ জুন: স্পেন-সুইডেন (সেভিয়া)
১৯ জুন: স্পেন-পোল্যান্ড (সেভিয়া)
২৩ জুন: স্লোভাকিয়া-স্পেন (সেভিয়া)